জুলাই অভ্যুত্থানের বছর পূর্তির দিনে ঢাকায় যখন অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রে আয়োজন চলছে, তখন অভ্যুত্থানের নেতাদের পাওয়া গেল কক্সবাজারে।
তারা মঙ্গলবার সেখানে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকে গেছেন বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। তবে তা গুজব বলে উড়িয়ে দিয়ে তারা বলছেন, তারা ঘুরতে গেছেন কক্সবাজারে।
পিটার হাস ২০২২ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে ছিলেন। তার নানা কাজে অসন্তুষ্ট ছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমে এমন খবর এসেছিল যে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকার নিয়ে ওয়াশিংটনের যে নীতি, তাতে বিরোধিতা ছিল পিটার হাসের।
ওই জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত অক্টোবরে পিটার হাস বহুজাতিক কোম্পানি অ্যাকসিলারেট এনার্জির উপদেষ্টা হিসেবে ঢাকা ঘুরে গিয়েছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকও করেছিলেন।
সেই অভ্যুত্থানের বছর পূর্তির দিন মঙ্গলবার ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউতে সরকারি আয়োজনে অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করেন ড. ইউনূস।
তার মধ্যেই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কয়েকজন শীর্ষনেতার কক্সবাজারে অবস্থানের খবর পাওয়া যায়। তারা হলেন দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী, দুই মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা ও যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ।
তারা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে সকাল সাড়ে ১১টায় কক্সবাজারে পৌঁছে গাড়িতে করে উখিয়ার সিপার্ল রিসোর্টে যান।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম মানিক মিয়া এভিনিউর কর্মসূচিতে থাকলেও এই নেতারা কক্সবাজারে পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকে গেছেন বলে খবর আসে এখন টিভিতে।
তাদের খবরে বলা হয়, “কক্সবাজারে একটি হোটেলে ঢাকায় নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ নেতারা। এতে অংশ নিয়েছেন দলের নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, নাসিরউদ্দীন পাটোয়ারী, তাসনিম জারা প্রমুখ।”
পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বিবিসি বাংলাকে বলেন, “কারও সঙ্গে দেখা করতে না, হুট করে ঘুরতে আসছিলাম, পদযাত্রাতে টায়ার্ড হয়ে গেছিলাম। জাস্ট এমনে একটু সাগর পাড়ে ঘুরতে আসছিলাম। বাট এখানে আইসা দেখি, হোটেলে চেক ইন করে মাত্র বসছি এর মধ্যেই এই নিউজ দেখতেছি।”
এমন খবরকে ‘পুরোপুরি একটি গুজব’ দাবি করে তিনি বলেন, “এটা টোটালি একটা গুজব, মিস ইনফরমেশন, এ ধরনের কোনো কিছুই না, মিডিয়া প্রোপাগান্ডা।
“এখানে আইসা শুনছি যে পিটার হাসের সাথে নাকি আমরা দেখা করতে আসছি। এরকম হলে তো আমরা ঢাকায়ই দেখা করতে পারতাম। যদি দেখা করার ইচ্ছা থাকত।”

একই কথা বলেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা সম্পূর্ণ ভুয়া খবর। আমরা এখানে পিটার হাস কিংবা অন্য কারও সাথে কোন মিটিং করিনি। এমনকি পিটার হাসের সঙ্গে আমাদের দেখাও হয়নি। আমরা কয়েকজন এখানে ঘুরতে এসেছি।”
সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এ খবরকে ‘প্রোপাগান্ডা’ বলছেন সারজিস আলমও। এখন টিভিকে পাঠানো এক এসএমএসে তিনি বলেন, “কোন সোর্সের ভিত্তিতে পিটার হাসের সঙ্গে মিটিং—এমন প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হলো জানতে চাই। চিলে কান নিয়ে গেলো— এর উপযুক্ত উদাহরণ এটাই।”
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। ওই দিনটিকে স্মরণ করেই এবারের ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসাবে পালিত হচ্ছে।
কোনও ঘোষণাপত্র ছাড়াই অভ্যুত্থান ঘটে যাওয়ার পর তার স্থায়ী স্বীকৃতির জন্য জুলাই সনদ প্রণয়নের দাবি তুলেছিল আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। দাবির মুখে অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করবে বলে জানায়।
জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির এই দিনে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস।
সেই দিনে জুলাইয়ের আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের গড়ে তোলা দল এনসিপির নেতারা কক্সবাজারে থাকায় প্রশ্ন উঠছে, দিনটি ঘিরে থাকা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিতে তাদের দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে।
এ বিষয়ে নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমাদের প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারির দাওয়াত কার্ড এসেছে, অ্যাজ ফার আই নো, দলের পক্ষ থেকে আমাদের একটা প্রতিনিধি দল সেখানে যাবে।”
তিনি বলেন, “প্রত্যেকটি দল থেকে একটা ছোট ছোট প্রতিনিধি দল যাচ্ছে, আমাদেরও তাই।”
যদিও ফেইসবুকে দেওয়া এক পোস্টে জুলাই ঘোষণাপত্রের অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ।
ফেইসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, “আগামীকাল জুলাই ঘোষণাপত্র প্রদান অনুষ্ঠানে দাওয়াতের কার্ড পেলাম। শুনেছি এই সরকার জুলাই অভ্যুত্থানের লেজিটিমেট বডি ১৫৮ জন সমন্বয়ক, সহ-সমন্বয়ককে দাওয়াত দিতে পারেনি, হয়তো কতগুলা আসন বসাবে কিন্তু ১৫৮ জনের জন্যে জায়গা হবে না।
“জানিনা এই চেয়ারগুলোতে শহীদ পরিবারের জায়গা হবে কিনা।! যাদের সাহসীকতায় আর নেতৃত্বে এই অভ্যুত্থান আর এই সরকার, বছর না পেরোতেই তারা মূল্যহীন।”
পোস্টে তিনি আরও লিখেছেন, “আমার সহযোদ্ধা, যারা মৃত্যুকে পরোয়া না করে হাসিনার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে- তারা এবং সকল শহীদ পরিবার তাদের প্রাপ্য সম্মান না পেলে, আমি আব্দুল হান্নান মাসউদ ব্যক্তিগতভাবে আগামীকালকের জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রোগ্রাম বর্জন করার ঘোষণা দিচ্ছি।”



