Beta
মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫
আইসিডিডিআর,বির গবেষণা

ঢাকার ৯৮ শতাংশ শিশুর শরীরে সীসা

icddrb
[publishpress_authors_box]

ঢাকায় বসবাসকারী ৯৮ শতাংশ শিশুর রক্তে উদ্বেগজনক মাত্রায় সীসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) করা এক গবেষণায় এ তথ্য মিলেছে।

বুধবার শিশুদের সীসা দূষণ থেকে বাঁচাতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আইসিডিডিআর,বি  ‘বাংলাদেশে সীসা দূষণ প্রতিরোধ : অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ তথ্য জানায়।

অনুষ্ঠানে আইসিডিডিআর,বির অ্যাসিস্ট্যান্ট সায়েন্টিস্ট জেসমিন সুলতানা ২০২২-২৪ সালের মধ্যে ঢাকায় পরিচালিত একটি সামগ্রিক গবেষণার প্রাথমিক ফলাফল তুলে ধরেন। গবেষণায় ২ থেকে ৪ বছর বয়সী ৫০০ জন শিশুকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকায় প্রতিটি শিশুর রক্তে সীসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে, এর মধ্যে ৯৮ শতাংশ শিশুর রক্তে সীসার উপস্থিতির মাত্রা ৩৫ মাইক্রোগ্রাম/লিটারের থেকে বেশি ছিল। সীসা নির্ভর শিল্প স্থাপনার ১ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী শিশুদের রক্তে সীসার পরিমাণ পাওয়া গেছে ৫ মাইক্রোগ্রাম, যা দূরে বসবাসকারী শিশুদের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি।

এছাড়া সীসা রক্তে প্রবেশের উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে সীসানির্ভর শিল্প, ব্যাটারি পুন:প্রতিস্থাপন কারখানা, ঘরের ধুলা ময়লা, সীসাযুক্ত প্রসাধনী সামগ্রী ও রান্নার কাজে ব্যবহৃত পাত্র।

এমন পরিস্থিতিতে সীসা-নির্ভর শিল্প স্থাপনা, যেমন সীসা-এসিড ব্যাটারি তৈরি বা রিসাইক্লিং কারখানা অথবা যেসব কারখানায় সীসা গলানো বা পোড়ানো হয়, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান এই গবেষক। এসব প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিলে বা দূষণ কমানোর ব্যবস্থা নিলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার শিশুদের সীসা দূষণ থেকে বাঁচানো সম্ভব বলেই মন্তব্য তার।

অনুষ্ঠানের শুরুতে আইসিডিডিআর,বি-র হেলথ সিস্টেমস অ্যান্ড পপুলেশন স্টাডিজ ডিভিশনের সিনিয়র ডিরেক্টর সারাহ স্যালওয়ে বলেন, “সীসা দূষণ বাংলাদেশের একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা, যা প্রায় আমাদের নজর এড়িয়ে যায়। বিশেষ করে দূষণ সৃষ্টিকারী শিল্পের আশপাশের শিশুরা এর সবচেয়ে বড় শিকার।”

সীসা একটি বিষাক্ত ভারী ধাতু, যা নীরবে লাখ লাখ মানুষের, বিশেষ করে শিশু ও গর্ভবতী নারী স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে চলেছে। ক্যান্সারের জন্য দায়ী কয়েকটি ভারী ধাতুর মধ্যে সীসা অন্যতম। রক্তের মধ্যে সীসার কোনো নিরাপদ মাত্রা নেই, তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) শিশুদের রক্তে প্রতি লিটারে ৩৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি সীসার উপস্থিতি উদ্বেগজনক বলে মনে করে।

ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে সীসা দূষণে আক্রান্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে, যেখানে প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ শিশু রক্তে উচ্চ মাত্রার সীসা নিয়ে জীবনধারণ করছে। এই অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, ২০০৯–২০১২ সালের মধ্যে ঢাকার বস্তি এলাকায় ২ বছরের কম বয়সী ৮৭ শতাংশ শিশুর রক্তে প্রতি লিটারে সীসার মাত্রা ৫০ মাইক্রোগ্রামের এর বেশি ছিল, যা তাদের শারীরিক বৃদ্ধির প্রতিবন্ধকতার একটি প্রধান কারণ।

আইসিডিডিআর,বির নির্বাহী পরিচালক ডা. তাহমিদ আহমেদ বলেন, “সীসার বিষক্রিয়া নীরবভাবে আমাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ সংকুচিত করে দিচ্ছে। এটি তাদের মেধা ক্ষমতা ও সৃজনশীল বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে। বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী শিশুদের হার বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাই আমাদের দ্রুত সীসা নিয়ন্ত্রণ নীতি ও উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার, যাতে প্রতিটি শিশু সুস্থ হয়ে দেশ উন্নয়নের কাজে অবদান রাখতে পারে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত