Beta
শুক্রবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৫

টিউলিপের বিচার শুরু, অভিযোগ কী

টিউলিপ সিদ্দিক
টিউলিপ সিদ্দিক
[publishpress_authors_box]

দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় ঢাকার আদালতে শুরু হয়েছে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য টিউলিপ সিদ্দিকের বিচার। এই মামলায় তার বিরুদ্ধে পূর্বাচলে মা, ভাই, বোনকে অনিয়মের মাধ্যমে প্লট পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপের অনুপস্থিতেই এই বিচার শুরু হলো। লন্ডনে থাকা টিউলিপ বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে অবান্তর বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন।

প্লট দুর্নীতির এই মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত হলে টিউলিপের সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দুর্নীতি দমন কমিশন অনুসন্ধান চালিয়ে জানতে পারে, ঢাকার কাছে পূর্বাচলে রাজউকের প্রকল্পে ১০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে।

সেই ঘটনায় ছয়টি মামলা করে দুদক। গত ৩১ আগস্ট অভিযোগ গঠনের মধ্যদিয়ে মামলাগুলো বিচারের জন্য প্রস্তুত হয়।

তিনটি মামলায় মঙ্গলবার বিচার শুরুর পর বুধবার টিউলিপের বিরুদ্ধে করা তিনটি মামলায়ও ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এ সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হলো। প্রথম দিনে মামলা তিনটির বাদী দুদকের তিনজন কর্মকর্তা আদালতে সাক্ষ্য দেন।

এই মামলা তিনটির প্রত্যেকটিতে টিউলিপের সঙ্গে তার খালা শেখ হাসিনাও আসামি। টিউলিপের মা শেখ রেহানা, ভাই রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক এবং বোন আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী একটি করে মামলার আসামি।

৪২ বছর বয়সী টিউলিপ এক দশক ধরে লেবার পার্টির হয়ে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রথম ব্যক্তি হিসাবে গত বছর তিনি মন্ত্রীও হয়েছিলেন।

তবে বাংলাদেশে অভ্যুত্থানের পর খালা শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে বাড়ি সংক্রান্ত সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ উঠলে সমালোচনার মুখে গত জানুয়ারিতে তিনি পদত্যাগ করেন।

কয়টি প্লট-কয়টি মামলা

দুদকের তদন্তে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা এবং তাদের সন্তানদের নামে মোট ছয়টি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার তথ্য পাওয়া যায়।

তার মধ্যে একটি শেখ হাসিনার নিজের নামে, একটি তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে, একটি তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে, একটি শেখ রেহানার নামে, একটি রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির নামে ও একটি রেহানার মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর নামে।

ছয়টি প্লট নিয়ে গত জানুয়ারি মাসে মোট ছয়টি মামলা করেন দুদক। তার মধ্যে প্রতিটি প্লটের মালিকরা একটি করে মামলার আসামি।

প্রধানমন্ত্রী হিসাবে প্রভাব খাটানোর অভিযোগে শেখ হাসিনাকে ছয়টি মামলায়ই আসামি করা হয়। টিউলিপকে আসামি করা হয় তার মা ও ভাই-বোনের প্লটের মামলায়।

অনিয়মের মাধ্যমে প্লট বরাদ্দ দেওয়ার এই মামলাগুলোতে রাজউকের বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকেও আসামি করা হয়।

২০১৩ সালে মস্কোয় শেখ হাসিনা ও ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টিউলিপ সিদ্দিক।
২০১৩ সালে মস্কোয় শেখ হাসিনা ও ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টিউলিপ সিদ্দিক।

২০০৯ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর পূর্বাচলের ২৭ নম্বর সেক্টরে কূটনৈতিক জোনে এই প্লটগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল; অথচ এই প্রকল্পে প্লট পেতে আবেদন করার সময় ২০০৮ সালের ডিসেম্বরেই শেষ হয়ে গিয়েছিল বলে দুদকের দাবি।

এই মামলায় শেখ হাসিনা পরিবারের সদস্যদের সবার বিচারই হচ্ছে তাদের অনুপস্থিতিতে।

শেখ হাসিনা গত বছরের ৫ আগস্ট পালিয়ে ভারতে যাওয়ার পর এখনও সেখানেই রয়েছেন। সেদিন তার সঙ্গে শেখ রেহানাও ভারত গিয়েছিলেন। তবে পরে তিনি যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান।

শেখ হাসিনার ছেলে জয় থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে, মেয়ে পুতুল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হিসাবে ভারতে রয়েছেন।

শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ লন্ডনেই রয়েছেন। ছেলে ববি বিয়ের সূত্রে ইউরোপে থাকেন। ছোট মেয়ে রূপন্তীও থাকেন যুক্তরাজ্যে।

প্লট নেই টিউলিপের, তাহলে অভিযোগ কী

মা, খালা, ভাই, বোনরা পূর্বাচলে প্লট নিলেও টিউলিপের নামে কোনও প্লট নেই; তবে তাকে আসামি করা হয়েছে তিনটি মামলায়।

গত ১৩ জানুয়ারি দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাগুলো দায়েরের পর সংস্থাটির মহাপরিচালক (ডিজি) আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, শেখ রেহানা, ববি ও আজমিনার নামে প্লট বরাদ্দ দিতে প্রভাব খাটিয়েছিলেন টিউলিপ।

“ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রভাবিত করেছেন, এ বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধানে যথেষ্ট প্রমাণাদি মিলেছে।”

প্রভাব খাটানোর বর্ণনা দিয়ে মামলাগুলোর এজাহারে বলা হয়, “টিউলিপ যখন জানতে পারেন যে তার খালা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা ব্যবহার করে নিজের নামে, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদের নামে প্লট বরাদ্দ নিচ্ছিলেন, তখন তিনি (টিউলিপ) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে একই সঙ্গে তার মা শেখ রেহানা, বোন আজমিনা সিদ্দিক ও ভাই রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের নামে একই প্রকল্পে প্লট বরাদ্দের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তার বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে তার খালা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর চাপ প্রয়োগ ও প্রভাব বিস্তার করেন।”

শেখ রেহানার তিন সন্তান রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক।
শেখ রেহানার তিন সন্তান রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক।

এরপর ক্ষমতার অপব্যবহার করে শেখ হাসিনা রাজউকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় রাজনৈতিক বিবেচনায় পূর্বাচলের ২৭ সেক্টরের কূটনৈতিক জোনে ১০ কাঠা করে তিনটি প্লট বোন ও ভাগ্নে-ভাগ্নিদের বরাদ্দ দেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।

তিনটি মামলায় শেখ হাসিনা ও টিউলিপের পাশাপাশি গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের ১৪ কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়।

অন্যান্য আসামিরা হলেন- গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার।

রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য (উন্নয়ন) অবসরপ্রাপ্ত মেজর সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরীকেও আসামি করা হয়েছে।

আসামির তালিকায় আরও রয়েছেন- রাজউকের উপ-পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) মো. হাফিজুর রহমান, উপ-পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি- চ. দা) হাবিবুর রহমান, পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম ও সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মো. নুরুল ইসলাম।

টিউলিপের বিরুদ্ধে এটি ছাড়াও অবৈধ সুবিধা নিয়ে গুলশানে একটি ফ্ল্যাটের মালিক হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের ওই ফ্ল্যাট নিয়ে  গত এপ্রিলে মামলা করে দুদক।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত