সাদিক কায়েমের নেতৃত্বে ডাকসুর বোর্ডে নাম ওঠাল ইসলামী ছাত্রশিবির। এই নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠনটির প্যানেল জিতেছে বিপুল ভোটে।
তার মধ্যে ডাকসুতে শিবিরের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম একাই যত ভোট পেয়েছেন, তার অন্য সব প্রতিদ্বন্দ্বীর ভোট যোগ করলে তার চেয়ে সামান্য কিছু বেশি হয়।
ছয় বছর পর মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু এবং হল ছাত্র সংসদগুলোর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দিনভর ভোটগ্রহণ শেষে রাতভর গণনার পর বুধবার সকালে পূর্ণাঙ্গ ফল প্রকাশিত হয়।
তাতে দেখা যায়, শিবির সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’র ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম ১৪ হাজার ৪২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের ভিপিপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান পেয়েছেন ৫ হাজার ৭০৮ ভোট। তৃতীয় স্থানে থাকা স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের উমামা ফাতেমার ভোট ৩ হাজার ৩৮৯।
ভিপি পদে মোট প্রার্থী ছিলেন ৪৫ জন। বিজয়ী সাদিক কায়েমকে বাদ দিলে তাদের সম্মিলিত ভোটের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫ হাজার ২১৭।
অর্থাৎ ৪৪ ভিপি প্রার্থীর মোট ভোট সাদিক কায়েমের একার ভোটের চেয়ে মাত্র ১ হাজার ১৭৫টি বেশি।
এবারের নির্বাচনে ভোটার ছিল মোট ছিল ৩৯ হাজার ৮৭৪ শিক্ষার্থী (ছাত্র-২০ হাজার ৯১৫, ছাত্রী- ১৮ হাজার ৯৫৯ জন)।
সেই হিসাবে মোট ভোটের এক-তৃতীয়াংশের বেশি পেয়েছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিক কায়েম।
ভিপি পদে ১ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছেন গুটি কয়েকজন। তাদের মধ্যে রয়েছেন – স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম হোসেন (৩৮৮৩ ভোট), বাগছাস প্রার্থী আব্দুল কাদের (১১০৩ ভোট)।
প্রতিরোধ পর্ষদের জিএস প্রার্থী ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের নেতা মেঘমল্লার বসু ৪ হাজার ৯৪৯ ভোট পেলেও তার প্যানেলের ভিপি প্রার্থী, শামসুন্নাহার হলের সাবেক ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি পেয়েছেন মাত্র ৬৮ ভোট।
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার ছেলে সাদিক কায়েমের পড়াশোনা মাদ্রাসায়। বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসা থেকে ২০১৬ সালে আলিম পাসের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ে ভর্তি হন তিনি।
আওয়ামী লীগের সময় গোপনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির করতেন তিনি। তবে জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সক্রিয়তার কারণে তার নাম আলোচনায় আসে।
অভ্যুত্থানের আগে নিষিদ্ধ ছাত্রশিবির আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারানোর পর পুনরুজ্জীবিত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের কমিটি প্রকাশ করলে দেখা যায়, সাদিক কায়েম সেই কমিটির সভাপতি। এটা দেখে তার সতীর্থসহ অনেকেই অবাক হয়েছিলেন।
পরে সাদিক কায়েম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতির পদ ছেড়ে এখন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
এরমধ্যে ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন শুরু হলে সাদিক কায়েমকে ভিপি মনোনীত করে প্যানেল সাজায় ছাত্রশিবির। ডাকসুর ২৮টি পদের মধ্যে ২৩টিতে সেই প্যানেলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।
ভোটের ফল ঘোষণার পর সাদিক কায়েম এক ফেইসবুক পোস্টে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ জানিয়ে লিখেছেন, “আজকে ক্যাম্পাসে কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিজয় হয়নি। এই বিজয় জুলাই বিপ্লবের সকল পক্ষ শক্তির। এ বিজয় স্বাধীন বাংলা বিনির্মাণে নিঃস্বার্থ প্রাণ বিলিয়ে দেয়া সকল শহীদের। এই বিজয় জীবন্ত শহীদ হয়ে বেঁচে থাকা অঙ্গহারা হাজারো গাজী বীরদের। এই বিজয় এক স্বপ্নের ক্যাম্পাস গড়ে তুলার দৃঢ় প্রত্যয়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর।
“এই বিজয় শহীদের রক্তের ঋণ, এই বিজয় আমাদের উপর শিক্ষার্থীদের অর্পিত পবিত্র আমানত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে তাই আমি দৃঢ় অঙ্গীকার করছি- সকল দল, মত, পথ, বিশ্বাস ও পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে ঐক্যবদ্ধ ভাবে স্বপ্নের ক্যাম্পাস গড়ে তোলার এই যাত্রায় আমরা কারো কাছে মাথানত করব না।”