Beta
মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৫

চিকিৎসায় নোবেল কারা পেলেন, কেন পেলেন

nobel
[publishpress_authors_box]

চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন মেরি ই. ব্রানকো, ফ্রেড রামসডেল ও ড. শিমন সাকাগুচি। ‘পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স’ সংক্রান্ত যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্য  সোমবার তাদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়। এই তিন গবেষক ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার, অর্থাৎ প্রায় ১ দশমিক ১৭ মিলিয়ন ডলারের পুরস্কার নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেবেন।

কেন তারা এই পুরস্কার পেলেন

নোবেল কমিটি ফর ফিজিওলজি অর মেডিসিন জানিয়েছে, মানব দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা (ইমিউন সিস্টেম) নিয়ে তাদের গবেষণার জন্যই এই বিজ্ঞানীরা পুরস্কার পেয়েছেন। তাদের গবেষণা দেখিয়েছে কীভাবে মানব দেহ নিজস্ব প্রতিরোধ প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে, এবং কীভাবে এই প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজের শরীরকেই আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকে।

গবেষণার মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল টি-সেল বা টি-কোষ নিয়ে বোঝাপড়া। এটি দেহের সেই প্রতিরোধ কোষ, যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। গবেষকরা “রেগুলেটরি টি-সেল” নামে একধরনের বিশেষ কোষ শনাক্ত করেন, যা নিশ্চিত করে যে শরীরের সাধারণ টি-সেলগুলো যেন ভুলবশত সুস্থ কোষ আক্রমণ না করে।

তাদের এই কাজ ক্যানসার ও অটোইমিউন রোগের চিকিৎসা গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। এটি ভবিষ্যতে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রেও সহায়ক হতে পারে।

নোবেল কমিটি তাদের কাজ সম্পর্কে কী বলেছে

কমিটি তাদের গবেষণাকে মানবদেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থার কার্যকারিতা বোঝার ক্ষেত্রে “মূলগত” বা “ফান্ডামেন্টাল” বলে উল্লেখ করেছে।

তাদের গবেষণা তিন দশক জুড়ে বিস্তৃত। এটি শুরু হয় ১৯৯৫ সালে ড. সাকাগুচির ইঁদুর নিয়ে করা পরীক্ষার মাধ্যমে। সেখানে তিনি এমন এক নতুন ধরনের প্রতিরোধ কোষ আবিষ্কার করেন যা অটোইমিউন রোগ থেকে দেহকে রক্ষা করে।

২০০১ সালে ড. ব্রানকো ও ড. রামসডেল এমন জিনগত মিউটেশন শনাক্ত করেন, যা অটোইমিউন রোগের জন্ম দেয় এবং টি-সেলের প্রতিক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটায়। দুই বছর পর ড. সাকাগুচি তাদের আবিষ্কারের সঙ্গে নিজের গবেষণার সম্পর্ক খুঁজে পান।

নোবেল ঘোষণার পর এক সাক্ষাৎকারে পুরস্কার কমিটির সদস্য রিকার্ড স্যান্ডবার্গ বলেন, এই গবেষণা অটোইমিউন রোগ, চিকিৎসা পদ্ধতি ও অঙ্গ প্রতিস্থাপন সম্পর্কে নতুনভাবে চিন্তা করার “একটি নতুন দৃষ্টিকোণ” দিয়েছে। 

তিনি আরও জানান, বর্তমানে তাদের গবেষণার ওপর ভিত্তি করে ২০০টিরও বেশি ক্লিনিকাল ট্রায়াল চলছে।

পুরস্কারজয়ীরা কারা

ড. শিমন সাকাগুচি ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিউনোলজি বিষয়ের একজন বিশেষজ্ঞ। সেখানে তিনি ডিস্টিংগুইশড অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।

মেরি ব্রানকো যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে ইনস্টিটিউট ফর সিস্টেমস বায়োলজিতে জেনোমিক্স ও অটোইমিউন রোগ নিয়ে গবেষণা করেন। আর ফ্রেড রামসডেল সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক বায়োটেকনোলজি প্রতিষ্ঠান সোনোমা বায়োর বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। তারা দুজনেই নোবেল স্বীকৃত গবেষণার কাজ করেছিলেন ব্রিটিশ মালিকানাধীন বায়োটেক কোম্পানি ‘সেলটেক কাইরোসায়েন্সে’। তখন তারা সিয়াটল এলাকায় কাজ করতেন।

২০২৪ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে কে নোবেল পেয়েছিলেন

ভিক্টর অ্যামব্রস ও গ্যারি রুভকুন ২০২৪ সালে নোবেল পুরস্কার পান। তারা ‘মাইক্রোআরএনএ’ নামের এক ক্ষুদ্র আরএনএ অণুর শ্রেণি আবিষ্কার করেছিলেন, যা জীবের বৃদ্ধি, কার্যপ্রণালী এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে তার ত্রুটির পেছনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

অন্যান্য নোবেল পুরস্কারের ঘোষণা কবে

প্রতি বছরের মতো, এই বছরও চিকিৎসা বিজ্ঞানের পুরস্কার দিয়েই নোবেল পুরস্কার সপ্তাহের সূচনা হয়েছে। মোট ছয়টি নোবেল পুরস্কার দেওয়া হবে, প্রতিটি আলাদা ক্ষেত্রের অসাধারণ অবদানের জন্য।

‘নোবেল পদার্থবিজ্ঞানের পুরস্কার’ মঙ্গলবার স্টকহোমের রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস ঘোষণা করবে। গত বছর জন জে. হপফিল্ড ও জিওফ্রে ই. হিনটন এই পুরস্কার পেয়েছিলেন। তাদের কাজ মানুষের মস্তিষ্কের শেখার প্রক্রিয়া অনুকরণ করে কম্পিউটার লার্নিং উন্নয়নের জন্য, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশে মৌলিক ভূমিকা রেখেছে।

‘নোবেল রসায়নের পুরস্কার’ বুধবার একই একাডেমি ঘোষণা করবে। গত বছর ডেমিস হাসাবিস, জন জাম্পার ও ডেভিড বেকার এই পুরস্কার পান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অন্যান্য প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রোটিনের গঠন পূর্বাভাস এবং নতুন প্রোটিন উদ্ভাবনের পথ দেখানোর জন্য।

‘নোবেল সাহিত্য পুরস্কার’ বৃহস্পতিবার স্টকহোমের সুইডিশ একাডেমি ঘোষণা করবে। গত বছর দক্ষিণ কোরিয়ার লেখিকা হান কাং তার উপন্যাস “দ্য ভেজিটেরিয়ান” এর জন্য প্রথম কোরিয়ান হিসেবে এই পুরস্কার লাভ করেন।

‘নোবেল শান্তি পুরস্কার’ শুক্রবার অসলোতে নরওয়েজিয়ান নোবেল ইনস্টিটিউট ঘোষণা করবে। গত বছর জাপানের তৃণমূল সংগঠন ‘নিহন হিদানকিও’, যারা পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্বের জন্য কাজ করে, শান্তি পুরস্কার পায়।

পরের সপ্তাহে ‘অর্থনীতিতে নোবেল স্মারক পুরস্কার’ সোমবার ঘোষণা করবে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস। গত বছর দারন আসেমোগলু, সাইমন জনসন ও জেমস রবিনসন এই পুরস্কার পেয়েছিলেন, প্রতিষ্ঠান বা ইনস্টিটিউশন কীভাবে একটি দেশের সম্পদ, সমৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক কাঠামো নির্ধারণ করে সেই বিষয়ে গবেষণার জন্য।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত