Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৫

অস্থিরতার মধ্যেও লেনদেন ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত

SS-Export-import-BOP-1-080724
[publishpress_authors_box]

অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার মধ্যেও বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অব পেমেন্ট-বিওপি) উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকে উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের এই দুই মাসে ব্যালান্স অব পেমেন্টে ১৯ কোটি ১০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত ছিল; তবে অর্থ বছর (২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ৩০ জুন) শেষ হয় ১৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত নিয়ে।

গত ১ জুলাই শুরু হওয়া ২০২৫-২৬ আর্থিক বছরের সাড়ে তিন মাস হতে চলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার দুই মাসের (জুলাই-আগস্ট) মাসের ব্যালান্স অব পেমেন্টের তথ্য প্রকাশ করেছে।

তাতে দেখা যায়, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে উল্লম্ফন ও রপ্তানি আয় বাড়ার কারণে চলতি অর্থ বছরের এই দুই মাসে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত রয়েছে বাংলাদেশের।

ব্যালান্স অব পেমেন্টে উদ্বৃত্ত নিয়ে অর্থ বছর শুরু হওয়া দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অর্থনীতির গবেষক বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেছেন, “শুরুটা ভালোই হয়েছে। তবে, এক-দুই মাসের তথ্য দেখে অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি বোঝা যায় না। এখন দেখা যাক, আগামী কয়েক মাস কেমন যায়।”

গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রায় পুরোটা সময় এই সূচকে ঘাটতি ছিল। অর্থ বছরের শেষ মাস জুনের শেষ দিকে বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবিসহ কয়েকটি উন্নয়ন সংস্থার প্রায় ৪ বিলিয়ন (৪০০ কোটি) ডলার বাজেট সহায়তার ঋণ এবং প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের উল্লম্ফন ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধির কারণে ১৪ কোটি ৯০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্তের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছিল ওই আর্থিক বছর।

সেই সঙ্গে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে (ওভারঅল ব্যালান্স) ও আর্থিক হিসাবেও (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) বড় উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছিল বাংলাদেশ।

ডলার সংকটের কারণে আমদানি ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছিল গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সরকার; তার সুফলও মিলেছিল। আমদানি ব্যয় বেশ কমে এসেছিল। তাতে বাণিজ্য ঘাটতি বেশ খানিকটা কমে শেষ হয়েছিল ২০২৩-২৪ অর্থ বছর। তবে ব্যালান্স অব পেমেন্টে বড় ঘাটতি ছিল।

গত এক বছরের বেশি সময় ধরে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারও সেই একই পথ অনুসরণ করে চলেছে। এর মধ্যে রপ্তানি আয়ে বেশ ভালো গতি এসেছে। এতে বাণিজ্য ঘাটতিতে নিম্মমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।

অন্যদিকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয়ে উল্লম্ফন অব্যাহত রয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবিসহ অন্যান্য দাতা সংস্থার মোটা অঙ্কের বাজেট সহায়তার ঋণ এবং ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ডলার কেনার কারণে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভও সন্তোষজনক অবস্থানে এসেছে।

এসবের ফলে বাজারে ডলার সরবরাহ বেড়েছে; বেশ কিছুদিন ডলারের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। এমনকি টাকা-ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরও বাজার স্বাভাবিক রয়েছে।

মাঝে কিছুদিন ডলারের দর কমলেও বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে হস্তক্ষেপ করে নিলামের মাধ্যমে বেশি দরে ডলার কেনায় বাজার আবার স্থিতিশীল হয়েছে।

সব মিলিয়ে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ সূচক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে বড় ঘাটতি থেকে উদ্বৃত্তের মধ্য দিয়ে গত অর্থ বছর শেষ হয়েছিল; নতুন অর্থ বছরও শুরু হয়েছে উদ্বৃত্ত নিয়ে।

৬৫১ কোটি (৬.৫১ বিলিয়ন) ডলারের বড় ঘাটতি নিয়ে শেষ হয়েছিল ২০২৩-২৪ অর্থ বছর। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ঘাটতি ছিল এক হাজার ১৬৩ কোটি (১১.৬৩ বিলিয়ন) ডলার।

আর্থিক হিসাবে ঘাটতি ৫৩ কোটি ডলার

ব্যালান্স অব পেমেন্টে উদ্বৃত্ত নিয়ে নতুন অর্থ বছর শুরু হলেও আর্থিক হিসাবে (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

২০২৩-২৪ অর্থ বছর শেষে আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। তবে ঘাটতি নিয়ে শুরু হয় ২০২৪-২৫ অর্থ বছর; গত অর্থ বছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১১৭ কোটি ১০ লাখ (১.১৭ বিলিয়ন) ডলার।

অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এই সূচকে ৭৩ কোটি ১০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত দেখা দেয়। নয় মাস শেষে (জুলাই-মার্চ) সেই উদ্বৃত্ত বেড়ে ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ১৩০ কোটি ৭০ লাখ (১.৩১ বিলিয়ন) ডলারে দাঁড়ায়।

দশ মাস শেষে (জুলাই-এপ্রিল) তা আরও বেড়ে ১৪৯ কোটি (১.৪৯ বিলিয়ন) ওঠে। তবে ১১ মাস শেষে অর্থাৎ জুলাই-মে সময়ে তা কমে ২৬ কোটি ৬০ লাখ ডলারে নেমে আসে।

বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ ও এডিবির বাজেট সহায়তার ঋণে শেষ পর্যন্ত আর্থিক হিসাবে ৩২০ কোটি (৩.২০ বিলিয়ন) ডলার উদ্বৃত্ত নিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থ বছর শেষ হয়েছে।

তবে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থ বছর ঘাটতি দিয়ে শুরু হয়েছে। প্রথম মাস জুলাইয়ে এই ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯১ কোটি ৬০ লাখ ডলার। গত অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ঘাটতি ছিল ২৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

তবে দুই মাসে অর্থাৎ জুলাই-আগস্ট সময়ে সেই ঘাটতি কমে ৫২ কোটি ৮০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে।

সামগ্রিক লেনদেনেও ঘাটতি

সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে (ওভারঅল ব্যালান্স) ৩২৯ কোটি (৩.২৯ বিলিয়ন) ডলারের বড় উদ্বৃত্ত নিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থ বছর শেষ হয়। তবে ৪৩০ কোটি (৪.৩০ বিলিয়ন) ডলারের বিশাল ঘাটতি নিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থ বছর শেষ হয়েছিল।

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থ বছরও ঘাটতি দিয়ে শুরু হয়েছে। প্রথম মাস জুলাইয়ে এই ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। গত বছরের জুলাইয়ে ঘাটতি ছিল ৬৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

তবে দুই মাস শেষে অর্থাৎ জুলাই-আগস্ট সময়ে সেই ঘাটতি কমে ৫ কোটি ৩০ লাখ ডলারে নেমেছে। গত অর্থ বছরের এই দুই মাসে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৪৩ কোটি (১.৪৩ বিলিয়ন) ডলার।

বাণিজ্য ঘাটতি ৭.৪ শতাংশ বেড়েছে

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি ৯ শতাংশ কমে দুই হাজার ৪৫ কোটি (২০.৪৫ বিলিয়ন) ডলারে নেমেছিল। আগের অর্থ বছরে (২০২৩-২৪) এই ঘাটতি ছিল দুই হাজার ২৪৩ কোটি (২২.৪৩ বিলিয়ন) ডলার।

২০২২-২৩ অর্থ বছরে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৭৩৮ কোটি (২৭.৩৮ বিলিয়ন) ডলার।

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯৫ কোটি ৮০ লাখ (২.৯৬ বিলিয়ন) ডলার। গত অর্থ বছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ২৭৫ কোটি ৪০ লাখ (২.৭৫ বিলিয়ন) ডলার; শতাংশ হিসাবে বেড়েছে ৭ দশমিক ৪০ শতাংশ।

জুলাই-আগস্টে মাসে ১ হাজর ৮৮ কোটি ৫০ লাখ (১০.৮৮ বিলিয়ন) ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত অর্থ বছরে একই সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।

এর বিপরীতে জুলাই-অগস্টে পণ্য রপ্তানি থেকে ৭৯২ কোটি ৭০ লাখ (৭.৯২ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে।

এ হিসাবেই বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার।

রেমিটেন্স বেড়েছে ১৮.৫ শতাংশ

দেশের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে এ মুহূর্তে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয়।

২০২৩-২৪ অর্থ বছরে প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল আগের অর্থ বছরের (২০২২-২৩) চেয়ে ১০ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি।

২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ইতিহাস গড়েছে রেমিটেন্স। এই আর্থিক বছরে ৩ হাজার ৩২ কোটি ৭৫ লাখ (৩০.৩৩ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা আগের অর্থ বছরের (২০২৩-২৪) চেয়ে ২৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেশি।

প্রতি মাসের গড় হিসাবে এসেছে ২৫১ কোটি ৯৮ লাখ (২.৫২ বিলিয়ন) ডলার।

সেই ঊর্ধ্বমুখী ধারা ২০২৫-২৬ অর্থ বছরেও অব্যাহত রয়েছে। এই আর্থিক বছরের প্রথম মাসে (জুলাই-আগস্ট) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা ৪৯০ কোটি (৪.৯ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন।

এই অঙ্ক গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৮ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ৪১৩ কোটি ৮০ লাখ (৪.১৩ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

এ হিসাবেই বেড়েছে ১৮ দশমিক ৫০ শতাংশ।

ইতোমধ্যে সেপ্টেম্বর মাসের রেটেন্সের তথ্যও প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, এই মাসে ২৬৮ কোটি ৫৯ লাখ (২.৬৮ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা চলতি ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের তিন মাসের মধ্যে (জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর) সবচেয়ে বেশি।

অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২৪৭ কোটি ৭৯ লাখ (২.৪৮ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে ২৯ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি।

দ্বিতীয় মাস আগস্টে আসে ২৪২ কোটি ১৯ লাখ (২.৪২ বিলিয়ন) ডলার, যা ২০২৪ সালের আগস্টের চেয়ে ৯ শতাংশ বেশি।

গত বছরের সেপ্টেম্বরের চেয়ে এই সেপ্টেম্বরে ১১ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি রেমিটেন্স দেশে এসেছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে এসেছিল ২৪০ কোটি ৪১ লাখ (২.৪০ বিলিয়ন) ডলার।

সব মিলিয়ে চলতি অর্থ বছরের প্রথম তিন মাসে অর্থাৎ প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৭৫৮ কোটি ৫৬ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ শতাংশ বেশি।

২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকে ৬৫৪ কোটি ২১ লাখ (৬.৫৪ বিলিয়ন) ডলার এসেছিল দেশে।

রিজার্ভ সন্তোষজনক

রেমিটেন্সে ভর করে বেশ কিছুদিন ধরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকা অর্থনীতির আরেক গুরুত্বপূর্ণ সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভও সন্তোষজনক অবস্থায় অবস্থান করছে।

এমনকি এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধের পরও স্বস্তির জায়গায় রয়েছে।

গত ৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে আকুর জুলাই-আগস্ট মেয়াদের ১৫০ কোটি (১.৫০ বিলিয়ন) ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ২৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার, গ্রস বা মোট হিসাবে নামে ৩০ দশমিক শূন্য চার বিলিয়ন ডলার।

গত এক মাসে সেই রিজার্ভ বেশ খানিকটা বেড়েছে। রেমিটেন্সের ওপর ভর করে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ নিয়ে অনেকটা উদ্বেগ কেটে গেছে।

এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ডলার কেনার কারণেও রিজার্ভ বেড়েছে। গত দুই মাসে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার কেনা হয়েছে।

দু্র্গাপূজার ছুটির আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়ে হয় ২৬ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ৩১ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার।

আকুর দেনা শোধের আগে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ৩১ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার।

ব্যাংকগুলো আমদানির খরচ নিয়মিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দেয়, যা রিজার্ভে যোগ হয়। তবে ওই দায় দুই মাস পরপর রিজার্ভ থেকে পরিশোধ করে দেওয়া হয়।

ব্যাংকারা বলছেন, রেমিটেন্স ও রপ্তানির প্রবাহ বাড়ার পাশাপাশি নিলামে ডলার কেনাও রিজার্ভ বাড়াতে ভূমিকা রাখছে।

ডলার কেনার প্রভাব রিজার্ভে পড়ার তথ্য দিয়ে গত ৩১ জুলাই ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছিলেন, আগামীতে প্রয়োজন পড়লে আরও ডলার কেনা হবে।

জুলাইয়ে ডলারের দর হঠাৎ কমতে থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনা শুরু করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ডলারের দর অস্থিতিশীল হতে দেওয়া হবে না।

সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে রিজার্ভের প্রধান দুই উৎস রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়ের ঊর্ধ্বমুখী ধারা ধরে রাখতেই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা উদ্বৃত্ত ডলার কেনা হচ্ছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ খান সকাল সন্ধ্যাকে জানিয়েছেন।

অর্থনীতির সামর্থ্য প্রকাশের গুরুত্বপূর্ণ সূচক রিজার্ভ নিয়ে বাংলাদেশে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা চলছে আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময় থেকেই। অভ্যুত্থানের পর গত বছর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলেও উদ্বেগ কাটছিল না।

অবশ্য রপ্তানি আয় এবং বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবিসহ অন্যান্য দাতা সংস্থার বাজেট সহায়তার ঋণেও রিজার্ভ এখন স্বস্তির জায়গায় এসেছে।

অর্থনীতির এই প্রধান সূচকগুলো বিশ্লেষণ করে বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় আছে রেমিটেন্স। রপ্তানি আয়ে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে, তবে এখনও প্রবৃদ্ধি আছে। আমদানি সহনীয় রাখা গেছে। বেশ কিছু দিন ধরে ডলারের বাজার স্থিতিশীল আছে।

“আশঙ্কা করা হচ্ছিল টাকা-ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হলে ডলারের দাম অনেক বেড়ে যাবে। কিন্তু সেটা হয়নি।”

তিনি বলেন, “ব্যালান্স অব পেমেন্টে (বিওপি) ঘাটতি থেকে উদ্বৃত্ত নিয়ে অর্থ বছর শেষ হয়েছিল। আবার উদ্বৃত্ত নিয়েই নতুন অর্থ বছর শুরু হয়েছে। এটা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক।”

গত অর্থ বছরের শেষ মাস জুনের শেষ দিকে বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ কয়েকটি উন্নয়ন সংস্থার বাজেট সহায়তার প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেয়েছে সরকার।

জাহিদ হোসেন বলেন, “সামগ্রিকভাবে বলা যায়, অর্থনীতিতে স্বস্তি ফেরার একটা আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সরকারকে এখন বিনিয়োগের দিকে নজর দিতে হবে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত