Beta
সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
Beta
সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ডলারের বাজার ঠিক রাখতে কিনেই যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক

ডলার
[publishpress_authors_box]

ডলারের বাজার অস্থির হলে তাতে নাড়া পড়বে দেশের অর্থনীতি, তাই বাজার ঠিক রাখতে নিলামে ডলার কিনেই যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সোমবার একদিনে ৩৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার কেনা হয়েছে। সব মিলিয়ে গত দুই মাসের কয়েক দফায় কেনা হলো পৌনে ২ বিলিয়ন (১.৭৫ বিলিয়ন) ডলার।

তিন বছর আগে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ডলারের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। ডলারের দাম ৮৫ টাকা থেকে বাড়তে বাড়তে ১২২ টাকায় গিয়ে ঠেকে।

ডলারের বাজারের অস্থিরতার আঁচে দেশে মুল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রিও করে দিয়েছিল।

মুদ্রাবাজারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার পর ডলারের দর নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত ১৩ জুলাই থেকে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনা শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় বাড়ায় ডলারের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় বাজার স্থিতিশীল রাখতে অর্থাৎ ডলারের দর যাতে আর কমে না যায়, এখন সেজন্যই ডলার কেনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, বাজার স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামের মাধ্যমে ডলার কিনছে। সোমবার ১২১ টাকা থেকে ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা দরে ২৬ ব্যাংকের কাছ থেকে ৩৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার কেনা হয়।

আগের মতোই বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ (এফএক্স) নিলাম কমিটির মাধ্যমে ‘মাল্টিপল প্রাইস অকশন’ পদ্ধতিতে এই ডলার কেনা হয় বলে জানান তিনি।

টাকার অবমূল্যায়ন ঠেকাতে এবং রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোকে আমদানি বিল পরিশোধে সহায়তা দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগে ডলার বিক্রি করছিল, সেখানে এখন চলছে উল্টো প্রবাহ।

তার কারণ ব্যাখ্যা করে আরিফ খান বলেন, “ডলারের দর বেড়ে যাওয়া অর্থনীতির জন্য ভালো নয়, আবার কমে যাওয়াও ভালো নয়। তাই এ বাজারকে ঠিক রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিলামে ডলার কিনছে। তাতে ব্যাংকগুলোতে তারল্য প্রবাহ বাড়ছে।”

এর আগে গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৩৯ কোটি ৪৫ লাখ (১.৩৯ বিলিয়ন) ডলার কিনেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। সোমবার ৩৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার কেনার পর সব মিলিয়ে ১৭৪ কোটি ৭৫ লাখ (প্রায় ১.৭৫ বিলিয়ন) ডলার কেনা হলো।

গত ১৩ জুলাই প্রথম দফায় ১৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

১৫ জুলাই ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে কেনা হয় ৩১ কোটি ৩০ লাখ ডলার। ২৩ জুলাই ১ কোটি ডলার কেনা হয় ১২১ টাকা ৯৫ পয়সা দরে।

৭ আগস্ট কেনা হয় ৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। প্রতি ডলারের দাম পড়ে ১২১ টাকা ৩৫ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা। ১০ আগস্ট পঞ্চম দফায় ১২১ টাকা ৪৭ পয়সা দরে কেনা হয় ৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার। ১৫ আগস্ট কেনা হয় ১৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার। ২৯ আগস্ট কেনা হয় ১৫ কোটি ডলার।

চলতি মাসের ২ সেপ্টেম্বর কেনা হয় ৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। ৪ সেপ্টেম্বর ১৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার কেনা হয়। ৯ সেপ্টেম্বর কেনা হয় ২৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছর পর্যন্ত গত তিন বছরে বাংলাদেশ ব্যাংক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে ২৫ বিলিয়নের বেশি ডলার বিক্রি করে, যা মূলত জ্বালানি, সার ও খাদ্য আমদানি বিল মেটাতে ব্যবহার হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন। ফাইল ছবি

বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার কেনায় রিজার্ভ বা বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন বাড়ছে। এর ফলে অর্থনীতির এই সূচক নিয়ে আর উদ্বেগ নেই।

এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দেড় বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পরও স্বস্তিদায়ক অবস্থায় রয়েছে রিজার্ভ।

গত ৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে আকুর জুলাই-আগস্ট মেয়াদের ১৫০ কোটি (১.৫০ বিলিয়ন) ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ২৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার, গ্রস বা মোট হিসাবে নামে ৩০ দশমিক শূন্য চার বিলিয়ন ডলার।

গত এক সপ্তাহে সেই রিজার্ভ বেশ খানিকটা বেড়েছে। গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ২৫ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে হয়েছে ৩০ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার।

আকুর দেনা শোধের আগে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ৩১ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার।

ব্যাংকগুলো আমদানির খরচ নিয়মিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দেয়, যা রিজার্ভে যোগ হয়। তবে ওই দায় দুই মাস পরপর রিজার্ভ থেকে পরিশোধ করে দেওয়া হয়।

ব্যাংকারা বলছেন, রেমিটেন্স ও রপ্তানির প্রবাহ বাড়ার পাশাপাশি নিলামে ডলার কেনাও রিজার্ভ বাড়াতে ভূমিকা রাখছে।

ডলার কেনার প্রভাব রিজার্ভে পড়ার তথ্য দিয়ে গত ৩১ জুলাই ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছিলেন, আগামীতে প্রয়োজন পড়লে আরও ডলার কেনা হবে।

জুলাইয়ে ডলারের দর হঠাৎ কমতে থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনা শুরু করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ডলারের দর অস্থিতিশীল হতে দেওয়া হবে না।

সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে রিজার্ভের প্রধান দুই উৎস রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়ের ঊর্ধ্বমুখী ধারা ধরে রাখতেই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা উদ্বৃত্ত ডলার কেনা হচ্ছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ খান।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত