Beta
সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
Beta
সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

গড়ে দিনে রেমিটেন্স আসছে হাজার কোটি টাকার বেশি

প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিটেন্স বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি।
প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিটেন্স বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি।
[publishpress_authors_box]

রেমিটেন্সে উর্ধ্বগতির অব্যাহত রয়েছে অর্থ বছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরেও। ফলে আড়াই মাস না যেতেই প্রায় সোয়া ৬ বিলিয়ন (৬০০ কোটি) প্রবাসী আয় এসেছে দেশে। দিনে গড়ে আসছে হাজার কোটি টাকার বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার রেমিটেন্সের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায় যে সেপ্টেম্বরের প্রথম ১৩ দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা ১৩০ কোটি ৫৮ লাখ (১.৩০ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন।

এই অঙ্ক গত বছরের সেপ্টেম্বরের চেয়ে ১৩ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের প্রথম ১৩ দিেন ১১৫ কোটি ডলার রেমিটেন্স এসেছিল।

সব মিলিয়ে চলতি অর্থ বছরের আড়াই মাসে (১ জুলাই থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) প্রবাসীরা ৬২০ কোটি ৫৬ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন, যা গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি।

২০২৪-২৫ অর্থ বছরের এই সময়ে ৫২৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার রেমিটেনস এসেছিল।

রেমিটেন্সে প্রতি ডলারে এখন ১২২ টাকা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। সে হিসাবে টাকার অঙ্কে সেপ্টেম্বরের ১৩ দিনে ১৫ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনে গড়ে এসেছে ১০ কোটি ৪ লাখ ডলার; টাকার অঙ্কে ১ হাজার ২২৫ কোটি টাকা।

মাসের বাকি ১৭ দিনে (১৪ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর) এই হারে এলে মাস শেষে রেমিটেন্সের অঙ্ক ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ৩০১ কোটি ৩৪ লাখ (৩.০১ বিলিয়ন) ডলারে পৌঁছতে পারে। যদি তা হয়, তাহলে সেপ্টেম্বর হবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্সের মাস।

এক মাসে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছিল গত বছরের মার্চে। রোজা ও ঈদ সামনে রেখে ওই মাসে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ৩২৯ কোটি ৫৬ লাখ ডলার রেমিটেন্স আসে।

দেশের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে এখন রেমিটেন্সই সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে, যা সঙ্কটে পড়া অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়ে যাচ্ছে।

২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২৪৭ কোটি ৭৯ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে ২৯ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি।

দ্বিতীয় মাস আগস্টে আসে ২৪২ কোটি ১৯ লাখ (২.৪২ বিলিয়ন) ডলার, যা ছিল ২০২৪ সালের আগস্টের চেয়ে ৯ শতাংশ বেশি।

অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ৩ হাজার ৩২ কোটি ৭৫ লাখ (৩০.৩৩ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠান প্রবাসীরা, যা ছিল আগের অর্থ বছরের (২০২৩-২৪) চেয়ে ২৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেশি।

গত বছর প্রতি মাসের গড়ে এসেছিল ২৫১ কোটি ৯৮ লাখ (২.৫২ বিলিয়ন) ডলার। চলতি অর্থ বছরের আড়াই মাসে গড়ও প্রায় সমান।

২০২৩-২৪ অর্থ বছরে রেমিটেন্স এসেছিল ২ হাজার ৩৯১ কোটি ২২ লাখ ডলার। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ছিল ২ হাজার ২৬১ কোটি ডলার। ২০২১-২২ অর্থ বছরে আসে ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলার। ২০২০-২১ অর্থ বছরে আসে ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে এসেছিল ১ হাজার ৮২০ কোটি ডলার।

রিজার্ভ বাড়ছে

অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ নিয়ে উদ্বেগ অনেকটাই কেটে গেছে।

এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দেড় বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পরও রিজার্ভ রয়েছে স্বস্তিদায়ক অবস্থায়।

গত ৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে আকুর জুলাই-আগস্ট মেয়াদের ১৫০ কোটি (১.৫০ বিলিয়ন) ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ পরিমাণ দাঁড়ায় ২৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার। গ্রস বা মোট হিসাবে তা ছিল ৩০ দশমিক শূন্য চার বিলিয়ন ডলার।

গত এক সপ্তাহে সেই রিজার্ভ বেশ খানিকটা বেড়েছে। গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ২৫ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে হয়েছে ৩০ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার।

আকুর দেনা শোধের আগে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ৩১ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার।

অর্থনীতির সামর্থ্য প্রকাশের গুরুত্বপূর্ণ সূচক রিজার্ভ নিয়ে বাংলাদেশে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা চলছে আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময় থেকেই। অভ্যুত্থানের পর গত বছর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলেও উদ্বেগ কাটছিল না।

তবে বছর পার হওয়ার পর প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স, রপ্তানি আয় এবং বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবিসহ অন্যান্য দাতা সংস্থার বাজেট সহায়তার ঋণে রিজার্ভ স্বস্তির জায়গায় এসেছে।

সবশেষ গত জুলাই মাসের আমদানির যে তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, তাতে দেখা যায় যে ওই মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৬ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে।

সে হিসাবে বর্তমানের ২৫ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ দিয়ে চার মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুদ থাকতে হয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত