Beta
সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫
Beta
সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫

‘গ্লোবাল স্টার’ নয়, সেতুবন্ধ রচনার উদ্যোগ বাফুফের

জাতীয় দলের পাঁচ বিদেশি ফুটবলার। ছবি : বাফুফে
জাতীয় দলের পাঁচ বিদেশি ফুটবলার। ছবি : বাফুফে
[publishpress_authors_box]

৫২ জনের ট্রায়ালের মধ্য দিয়ে তৈরি হবে বাংলাদেশ ফুটবলের ‘নেক্সট গ্লোবাল স্টার’! অথচ এই বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত প্রবাসীদের ঠিকঠাক খোঁজখবরও জানা নেই বাফুফের। বিভিন্ন দেশের শীর্ষ ও চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে খেলা কতজন আসছেন কিংবা আদৌ এরকম কেউ আছে কিনা সেটার কোনও তথ্য নেই ফেডারেশনের কাছে। কিন্তু তাদের মধ্য থেকেই গ্লোবাল ফুটবল স্টারের জন্ম হবে!

বাংলাদেশ ফুটবলে একটা প্রবাসী বিপ্লব শুরু হয়েছে। বাফুফের ধারণা প্রবাসীরাই হতে পারেন আমাদের ফুটবল সাফল্যের কারিগর। বিশেষ করে হামজা চৌধুরীর অন্তর্ভুক্তিতে যেন ফুটবল জাগরনের নতুন দুয়ার খুলেছে বাংলাদেশ। প্রিমিয়ার লিগে খেলা এই ইংলিশ ফুটবলারের সুবাদে আলোড়িত হয়েছে দেশ। ফুটবল নিয়ে জনমনে বিশ্বাস ফিরছে। সর্বশেষ কানাডা শীর্ষ লিগের ফুটবলার শমিত সোম ও ইতালি চতুর্থ স্তরে খেলা ফাহমিদুল ইসলাম এসে সেই বিশ্বাসকে আরো জোরদার করেছেন। যদিও মাঠের খেলায় তার ফল মেলেনি। ১০ জুন ঢাকায় হামজা-শমিত-ফাহমিদুলের বাংলাদেশ ২-১ গোলে হেরেছে সিঙ্গাপুরের কাছে। এশিয়ান কাপ ফুটবল বাছাইয়ের ওই ম্যাচে ৫ প্রবাসী খেলিয়েও বাংলাদেশ হেরেছে নিজেদের মাঠে।

এটাকে ছোট ধাক্কা হিসেবে দেখা যায়। কিংবা প্রবাসী অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারটাকে পূনর্মূল্যায়ন করেও দেখা যায় যে, বাফুফে ঠিক পথে আছে কিনা। এখন পর্যন্ত তারা এটাকেই ফুটবল সাফল্যের নতুন পথ হিসেবে ধরে নিয়েছে। তাই বুধবার সংবাদ সম্মেলনে ঘটা করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তিন দিনের প্রবাসী ট্রায়ালের কথা। ২৮-৩০ জুনের এই আনুষ্ঠানিক ট্রায়ালে ১৪ দেশের ৫২ জন প্রবাসী ফুটবলার অংশ নিচ্ছেন। যারা নিজেদের খরচে আসছেন লাল-সবুজ জার্সি গায়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে।

স্বপ্ন থাকা ভালো। তবে নিজের গাাঁটের পয়সা খরচ করে কেউ যখন এ দেশের মাঠে পরীক্ষায় বসতে আসছেন তাদের মান নিয়েও প্রশ্ন জাগতে পারে। তাছাড়া কাউকে নিয়ে অমন প্রতিবেদনও বিদেশি সংবাদ মাধ্যমে চাখে পড়েনি। বাফুফের ডেভেলমপেন্ট কমিটির প্রধান নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মনে করেন, “বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের দুয়ারটা এখন খোলা। যে বা যারা (বাংলাদেশি) বিদেশে থাকে তাদের আগ্রহ দেখিয়েছে তাদের আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। তারা নিজেদের খরচে আসবে সুতরাং একটা ট্রায়ালে তাদের দেখতেই পারি আমরা। ডেনমার্কে সাকিব মাহমুদ ফুটবল একাডেমি নিয়ে কাজ করেন। তার মাধ্যমেই মূলত আমরা এই প্রবাসী বাংলাদেশি ফুটবলারদের খোঁজ পেয়েছি।”

সংবাদ সম্মেলনে বাফুফে কর্তারা।

২০১৩ সালেও কয়েকজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত প্রবাসী ফুটবলার এসেছিলেন বাংলাদেশে। আনন্দ রহমানসহ কয়েকজন ট্রায়ালে ছিটকে গেছেন, টিকে গেছেন জামাল ভূইঁয়া। সে বছর নেপালে সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে অভিষেক হয়েছিল এই ডেনমার্ক প্রবাসী বাংলাদেশি ফুটবলারের। দীর্ঘ সময় পর যোগ হয়েছেন ফিনল্যান্ড প্রবাসী তারিক কাজীর। তাদের সংযোজনে এই ক’বছরে বাংলাদেশ ফুটবলের কি রং বদল হয়েছে? বুধবার সংবাদ সম্মেলন শেষে এই প্রশ্নের জবাবে সাবেক তারকা ও বাফুফে সদস্য গোলাম গাউস বলেছেন, “জামাল বা তারিকের মানের ফুটবলার আমাদের দেশেই আছে। আমাদের আসলে দরকার হামজা-শমিতের মানের ফুটবলার যারা ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।”

এখন যারা নিজেদের খরচে ট্রায়ালে আসছেন তারা কী হামজা-শমিতের মানের? আরো সহজ করে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নটা উঠেছিল, ৫২ জনের মধ্যে কে-কে কোন দেশের শীর্ষ লিগে খেলেন আর কে একদম নীচের স্তরের লিগে খেলেন? বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর সাইফুল বারীর জবাব, “কারো কারো সিভি আমরা পেয়েছি, আবার অনেকের সিভিও আমাদের কাছে পৌঁছায়নি। তারা আসার পর আমরা বিস্তারিত জানতে পারবো, তাছাড়া মাঠে তিন দিনব্যাপী দেখার পর তাদের টেকনিক ও টেকটিক্যাল মুভমেন্ট নিয়ে আমাদের একটা ধারনা তৈরি হবে।” তার কথায়ও পরিষ্কার যে শোরগোল ফেলে দেওয়ার মতো কেউ নেই এই দলে। এর মধ্যেই দুই প্রবাসী অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলে গেছেন, তবে তাদের পারফরম্যান্স যে খুব দাগ কেটেছে, এমন নয়।

মনে রাখার মতো পারফরমার হলে প্রতিভার স্ফুরণ হবে। বিশ্ব মিডিয়ায় ইতোমধ্যে নাম-ধাম এক-আধটু দেখা যাবে। তাদের আনতে হবে বুঝিয়ে-শুনিয়েই, ট্রায়ালের মাধ্যমে নয়। সুতরাং এই ট্রায়াল মোটেও ‘নেক্সট গ্লোবাল স্টার’ তৈরির মঞ্চ নয়। বলা যেতে পারে, প্রবাসী ফুটবলারদের সঙ্গে বাফুফের সেতুবন্ধন রচনার উদ্যোগ।  

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত