আবু ধাবির গরমে খুব ফিট হয়েও টিকতে পারছিলেন না লিটন দাস। মাঝের ওভারগুলোতে বেশি সিঙ্গেলস ও ডাবলস নেওয়ায় শরীর থেকে পানি ঝরেছিল বেশি। সেই ধাক্কা সামলাতে হয়েছে ইনিংসের শেষদিকে। জয়ের প্রান্তে এসে দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় হাঁপিয়ে উঠতে হয়েছে লিটন ও তাওহিদ হৃদয়কে। তবে যাই হোক, গরম ও হংকং বোলারদের প্রতিরোধ সামলে দারুণ জয়ে এশিয়া কাপ শুরু করল বাংলাদেশ।
স্বস্তির বিষয় লিটনের ধারাবাহিকতা। যে ধারাবাহিকতার অভাবে বাংলাদেশের সুন্দর শট মেকার হয়েও নামের প্রতি সুবিচার করা হয়নি লিটনের। ১০ বছর ধরে দলের অংশ হয়েও অভিজ্ঞতার ভার নেওয়া হয়নি। এখন যেন লিটন অনেক পরিণত হয়ে উঠেছেন। রান করছেন, দলকে জেতাচ্ছেন। আরও একবার দায়িত্ব নিয়ে ব্যাট করে এনে দিলেন এশিয়া কাপে শুভসূচনা।
লিটনের ফিফটিতে হংকংয়ের বিপক্ষে ৭ উইকেটের জয় এসেছে। হংকংয়ের দেওয়া ১৪৪ রানের লক্ষ্য ১৭.৪ ওভারে ছুঁয়েছে বাংলাদেশ। ক্লান্তি ভরা ইনিংসের শেষটা সিঙ্গেল নিয়েই শেষ করতে পারতেন লিটন। কিন্তু দ্রুত ম্যাচ শেষ করার চেষ্টায় ১৮তম ওভারের প্রথম বলে স্লগ খেলতে গিয়ে সরাসরি বোল্ড হন ৫৯ রানে। শ্রীলঙ্কা সিরিজে ১৩ ইনিংসে ফিফটি শূণ্য থাকা লিটন গত চার ইনিংসে পেয়েছেন তিনটি ফিফটি।
লিটন ফিরলেও হৃদয় ৩৫ রানে অপরাজিত থেকে ম্যাচ শেষ করে আসেন। দুজনের ৯৫ রানের জুটিতে জয় সহজ হয়। জয় সহজ হলেও বাংলাদেশের রান রেট খুব বেশি সমৃদ্ধ হয়নি। “বি” গ্রুপের শীর্ষে থাকা আফগানিস্তান হংকংয়ের বিপক্ষে জয় দিয়ে ২ পয়েন্ট ও ৪.৭০ রান রেট বাগিয়ে নিয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ২ পয়েন্ট পেলেও রান রেট ১.০০। এই গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে রান রেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
হংকং : ১৪৩/৭, ২০ ওভার (নিজাকাত ৪২, জিসান ৩০, ইয়াসিম ২৮; তাসকিন ২/৩৮, সাকিব ২/২১, রিশাদ ২/৩১)।
বাংলাদেশ : ১৪৪/৩, ১৭.৪ ওভার (লিটন ৫৯, হৃদয় ৩৫*, ইমন ১৯, তামিম ১৪; আতিক ২/১৪)।
ফল : বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী। ম্যাচ সেরা :
দ্রুত রান তুলতে চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশ
হংকংয়ের বিপক্ষে এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে রান তাড়ায় কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশ। ১১ ওভার শেষে বাংলাদেশ ২ উইকেটে তুলেছে ৮২ রান। পাওয়ার প্লের পর নিয়মিত বাউন্ডারী নেই ইনিংসে।
বাউন্ডারী না থাকলেও স্ট্রাইক রোটেট করে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। লিটন দাস ১৮ বলে ১ চারে ১৮ ও তাওহিদ হৃদয় ১ চারে ১৮ বলে ১৮ রানে অপরাজিত। দুজনে ৩৫ রানের জুটি গড়েছেন ৫.২ ওভারে।
এর আগে পাওয়ার প্লেতেই দুই ওপেনারকে হারায় বাংলাদেশ। পারভেজ হোসেন ইমন ১৪ বলে ১৯ ও তানজিদ তামিম ১৮ বলে ১৪ রান করেন। হংকং বোলারদের শেকল ভেঙে হাত খুলে খেলা কঠিন হয়ে উঠছে বাংলাদেশ ব্যাটারদের জন্য।
জয়ের জন্য সহজ টার্গেট পেল বাংলাদেশ
এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে জয়ের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়তে হয়নি বাংলাদেশকে। টুর্নামেন্টে ভালো শুরু পেতে ১৪৪ রান করতে হবে লিটন দাসদের। হংকংকে আগে ব্যাট করতে পাঠিয়ে ৭ উইকেটে ১৪৩ রানে আটকে দিয়েছেন বাংলাদেশ বোলাররা।
“বি” গ্রুপে তিন দলের সুযোগ আছে টুর্নামেন্টের সুপার ফোরে যাওয়ার। তাই রান রেট খুব গুরুত্বপূর্ণ। হংকংয়ের দেওয়া এই লক্ষ্য তাড়া করে ভালো রান রেটে জিততে হবে বাংলাদেশকে। তাই বেশ কিছু ওভার হাতে রেখে জেতা চাই।
রান তাড়ায় নেমে সেই চেষ্টায় থাকবেন বাংলাদেশ ব্যাটাররা। আবু ধাবির স্পোর্টিং উইকেটে হংকংকে অলআউট করতে পারেনি বাংলাদেশ বোলাররা। নিজাকাত খান ৪০ বলে ৪২, জিসান আলি ৩০ ও ইয়াসিম মুরতাজা ১৯ বলে ২৮ রান করেন। বাংলাদেশের হয়ে ২টি করে উইকেট নেন যথাক্রমে তাসকিন, তানজিম ও রিশাদ।
হংকংয়ের রান খুব বেশি এগোতে দেয়নি বাংলাদেশ। ১৫ ওভার শেষেও ১০০ রানের কোটা ছুঁতে পারেছে তারা। অবশ্য এতে বাংলাদেশের খুশি হওয়ার খুব বেশি সুযোগ নেই। কারণ শেষ ৫ ওভারে ম্যাচ ঘুরে যাওয়ার অনেক নজীর আছে টি-টোয়েন্টিতে। ১৫ ওভার শেষে হংকংয়ের রান উঠেছে ৩ উইকেটে ১০১।
প্রথম পাওয়ার প্লেতে দুই উইকেট হারায় হংকং। পরের ৯ ওভারে মাত্র ১ উইকেট হারালেও মাত্র ৬৭ রান তুলেছে । ১২তম ওভারে ৩৪ বলে ৩০ রান করা জিসান আলিকে ফেরান তানজিম হাসান সাকিব। হংকংয়ের হয়ে উইকেটে অপরাজিত আছেন ২০ রান করা নিজাকাত খান ও ১৪ রান করা মুরতাজা।
পাওয়ার প্লেতে দুই উইকেট বাংলাদেশের
ওভারপ্রতি ৬ এর কাছাকাছি রান তুলেছে হংকং। আফগানিস্তানের বিপক্ষে এই শুরুটা পায়নি তারা। বাংলাদেশের বিপক্ষে মোটামুটি শুরু পেলেও পাওয়ার প্লেতে দুই উইকেট হারাতে হয়েছে হংকং চায়নাকে। ২ উইকেট হারিয়ে ৩৪ রান তুলেছে তারা।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট এনে দেন তাসকিন আহমেদ। আনসি রাথকে মাত্র ৪ রানে ফেরান উেইকেটের পেছনে ক্যাচ বানিয়ে। পঞ্চম ওভারে ১২ বলে ১৪ রান করা বাবর হায়াতকে ফেরান তানজিম সাকিব। আগের বলে ছক্কা হজমের পর সরাসরি বোল্ড করেন তিনি।
এশিয়া কাপেও টস জিতে বোলিংয়ে বাংলাদেশ
টস জিতে আগে বোলিংয়ের অভ্যাস করে নিয়েছে বাংলাদেশ। আগের সিরিজের মতো এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে টস জিতে আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন লিটন দাস। কারণ হিসেবে তুলেছেন আবু ধাবির উইকেটে অনেকদিন পর খেলার বিষয়টি।
২০২১ সালের পর এই প্রথম মাঠটিতে খেলতে নামছে বাংলাদেশ। উইকেট কেমন আচরণ করবে তা বুঝতেই আগে বোলিং নেওয়া। অবশ্য আগে বোলিং নেওয়ায় সুবিধাই হয়েছে বাংলাদেশের। হংকংকে কম রানে আটকে দিয়ে দ্রুত ম্যাচ শেষ করা গেলে রান রেট খুব বেড়ে যাবে লিটনদের। সেই সুবিধা নেওয়ার চিন্তাও মাথায় থাকতে পারে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের।
হংকংয়ের বিপক্ষে তিন পেসার, দুই স্পিনার ও ছয় ব্যাটার নিয়ে একাদশ সাজিয়েছে বাংলাদেশ। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে একাদশে সুযোগ পাওয়া সাইফ হাসান এই ম্যাচে নেই। শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ী একাদশকেই এই ম্যাচে খেলাচ্ছে বাংলাদেশ। এই ম্যাচে টি-টোয়েন্টি ২৫০০ রান থেকে আর একটি হাফসেঞ্চুরি দূরে থেকে নামছেন লিটন।
বাংলাদেশ দল : পারভেজ হোসেন ইমন, তানজিদ হাসান তামিম, লিটন দাস (অধিনায়ক), তাওহিদ হৃদয়, জাকের আলি, শামীম হোসেন, শেখ মেহেদী হাসান, রিশাদ হোসেন, তাসকিন আহমেদ, তানজিম হাসান সাকিব, মোস্তাফিজুর রহমান।
হংকং চায়না : জিসান আলি, আনসি রাথ, বাবর হায়াত, নিজাকাত খান, কালহান চাল্লু, কিঞ্চিত শাহ, ইয়াসিম মুরতাজা (অধিনায়ক), আইজাজ খান, এহসান খান, আয়ুশ শুকলা, আতিক ইকবাল।



