Beta
সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
Beta
সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

দুর্দান্ত জয়ে প্লে অফ শুরু বাংলাদেশের

bangladesh
[publishpress_authors_box]

এখনের সব থ্রিলার সিরিজের মতো শেষে মাথা ঘোরানো টুইস্ট চলে এল। ১ রান নিতে গিয়ে হারাতে হল দুই উইকেট। মনের কোনে উঁকি দিচ্ছিল ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের কাছে হেরে যাওয়া সেই ম্যাচের কথা। তখনও ২ বলে ১ রান চাই বাংলাদেশের। জিততে হলে যথেষ্ঠ, নাসুম আহমেদ এলেন, শামীম হোসেনের কথা শুনলেন। মাথা গরম না করে বল ব্যাটে লাগিয়েই ছুটলেন।

ভাগ্যও সঙ্গে ছিল, নয়তো শামীমের ছুটে পপিং ক্রিজে যাওয়ার আগেই শ্রীলঙ্কান ফিল্ডারের ছোঁড়া বল স্ট্যাম্প নাড়িয়ে দিতে পারতো। কিন্তু তা হয়নি, ভাগ্য বাংলাদেশের সঙ্গেই ছিল। এশিয়া কাপের প্লে অফের প্রথম ম্যাচে ১ বল বাকি থাকতে জয় নিশ্চিত করলেন লিটন দাসরা। শ্রীলঙ্কাকে ৪ উইকেটে হারিয়ে এই পর্বে বাকি তিন দলের চেয়ে এগিয়ে থাকল বাংলাদেশ।

তবে এর আগে ভয় ধরিয়ে গেল শেষ ওভারের নাটক। তাতে ম্যাচ হারার শঙ্কা তৈরি হয়েছিল পুরোদমে। শেষ ওভারে ১৬৯ রান করতে আর ৫ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। প্রথম বলেই চার মেরে সমীকরণ সহজ করে ফেলেন জাকের আলি। পরের বলেই ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হলেন। এক বল ডট দিয়ে পরের বলে ক্রিজ ছেড়ে আবারও বড় শটের লোভে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন শেখ মেহেদী হাসান।

তখনও ২ বলে ১ রান দরকার বাংলাদেশের। নাসুম আর কোন ভুল না করে শামীমের ডাকে সাড়া দেন। ব্যাটে বল লাগিয়েই রান পূর্ণ করেন, ওদিকে শামীমও নিরাপদে পৌঁছে যাওয়ায় দুর্দান্ত রান তাড়া নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের।

সবশেষ ১৪টি টি-টোয়েন্টিতে রান তাড়ায় মাত্র একটিতে সফল হয়েছিল বাংলাদেশ। তাও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই। এবার “বাঘের” শিকার “সিংহ”। এ নিয়ে এশিয়া কাপে ১৯ বারের দেখায় লঙ্কানদের বিপক্ষে চতুর্থ জয় তুলে নিল বাংলাদেশ। এশিয়া কাপ ফাইনালের পথে যা বাংলাদেশের জন্য বিশাল পদক্ষেপ।

এই পথে এগিয়ে দিয়েছেন সাইফ হাসান ও তাওহিদ হৃদয়। দুজনের সাহসী ও ইনফর্ম ব্যাটিংয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ সহজ হয়েছে বাংলাদেশের। কৃতিত্বটা বেশি সাইফ হাসানের। লঙ্কানদের রান তাড়া করতে চাইলে শুরুর পাওয়ার প্লে কাজে লাগাতে হবে। তানজিদ তামিম প্রথম ওভারে ফিরলেও দমে যাননি সাইফ।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলা ইনিংসের চেয়েও সুন্দর ইনিংস খেলেছেন এদিন। পারফেক্ট টি-টোয়েন্টি। শুরু থেকেই আক্রমণ করে খেলে ৪৫ বলে ৪টি ছক্কা ও ২ চারে করেছেন ৬১ রান। দারুণ দুটি জুটি গড়ে দলকে জয়ের পথ দেখিয়েছেন সাইফ। ১৬ বলে ৩ চারে ২৩ রান করা লিটনের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে যোগ করেছেন ৫৯ রান। তৃতীয় উইকেটে হৃদয়ের সঙ্গে যোগ করলেন ৫৪। টি-টোয়েন্টিতে এটি সাইফের দ্বিতীয় ফিফটি। অসাধারণ এই ইনিংস তাকে এনে দেয় ম্যাচ সেরার পুরষ্কার।

দুটি কার্যকর জুটিতে বাংলাদেশের জয় পরিষ্কার হয়ে ওঠে। শেষদিকে তাওহিদ হৃদয় দলকে জয়ের বন্দরের কাছে নিয়ে ব্যর্থ হন পাড়ে তুলতে। ৩৭ বলে ২ ছক্কা ও ৪ চারে তার ৫৮ রানও বেশ কর্যকর ছিল। ২০২৪ এ ভারতের বিপক্ষে করা টি-টোয়েন্টির পর ১৫ ইনিংস বিরতি শেষে হৃদয়ের ব্যাটে ফিফটির দেখা মিলল।

মাত্র ১২ বলে ১৪ রান করা শামীম হোসেনের ইনিংসটি ভুললে চলবে না। ছোট ইনিংস হলেও হৃদয়ের সঙ্গে জয়সূচক ৪৫ রানের জুটিতে দারুণ অবদান রেখেছেন শামীম।

ম্যাচ শেষে ভারতীয় ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মাঞ্জরেকার প্রশংসা করছিলেন বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য রান তাড়ার। একটি বড় জুটি নয়, ছোট ছোট একাধিক জুটি কীভাবে দলকে জয়ের দিকে এগিয়ে নেয় সেই উদাহরণ টানছিলেন বাংলাদেশের ইনিংসটি নিয়ে।

গত কয়েক সিরিজ ধরেই বাংলাদেশের রান তাড়া দেখার অপেক্ষায় ছিল ক্রিকেটপ্রেমীরা। বেশ কয়েক সিরিজে আগে বোলিং নিয়ে বিপক্ষকে কম রানে আটকানোর পরিকল্পনায় জিতে এসেছে বাংলাদেশ। নিজেদের ব্যাটিং সামর্থ্য দেখিয়ে এবার রান তাড়ায় জয় দেখিয়ে দিলেন লিটনরা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

শ্রীলঙ্কা : ১৬৮/৭, ২০ ওভার (শানাকা ৬৪*, মেন্ডিস ৩৪, নিশাঙ্কা ২২, আসালাঙ্কা ২১; মোস্তাফিজ ৩/২০, মেহেদী ২/২৫)। বাংলাদেশ : ১৬৯/৬, ১৯.৫ ওভার (সাইফ ৬১, হৃদয় ৫৮, লিটন ২৩, শামীম ১৪ ; হাসারাঙ্গা ২/২২, শানাকা ২/২১)। ফল : বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী। ম্যাচ সেরা : সাইফ হাসান।  

বাংলাদেশের জন্য ১৬৯ রানে বড় চ্যালেঞ্জ

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচ জিততে হলে বড় চ্যালেঞ্জ জেতা চাই বাংলাদেশের। লিটন দাসদের ১৬৯ রানের লক্ষ্য দিয়েছে লঙ্কানরা। বাংলাদেশ ফিল্ডারদের ক্যাচ মিসের মহড়ায় শেষ ৫ ওভারে প্রায় ৫০ রান নিতে পেরেছে লঙ্কানরা।

দাশুন শানাকা ৬ ছক্কায় ৩৭ বলে করেছেন ৬৪ রান। এই ব্যাটারকেই চল্লিশের ঘরে আউট করার সুযোগ পেয়েছিলেন শামীম হোসেন। কিন্তু ক্যাচ মিসে সেই সুযোগ হাতছাড়া হয়। এদিকে এক ওভার পর আসালাঙ্কার ক্যাচ ফেলে দেন তাওহিদ হৃদয়। দুই ব্যাটারই জীবন পেয়ে দলকে ভালো স্কোর এনে দেন। আসালাঙ্কা করেন ২১ রান। নিশাঙ্কা ২২ ও মেন্ডিস ৩৪ রান করেন। মোস্তাফিজুর ৩ ও মেহেদি ২ উইকেট নেন।

দুই পরিবর্তন নিয়ে বোলিংয়ে বাংলাদেশ

টস জয় অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে লিটন দাসের। প্রায় প্রতি ম্যাচেই ভাগ্য পরীক্ষায় জিতে চলেছেন। তবে ম্যাচে নিয়মিত জয়ের ভাগ্য পাচ্ছেন না। অবশ্য গত চার সিরিজ বা টুর্নামেন্ট ধরে লিটন যে ভাগ্য নিয়ে চলছেন তাতে বাংলাদেশের লাভ-ই হচ্ছে।

ভাগ্যের লড়াই জিতে চলতি এশিয়া কাপের সুপার ফোর নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। এই পর্বের প্রথম ম্যাচে লিটনরা মুখোমুখি হচ্ছেন শ্রীলঙ্কার। গ্রুপের সবশেষ ম্যাচে এই শ্রীলঙ্কার সমর্থন করতে হয়েছিল। এবার তাদের হারানো চাই।

গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে টস জিতে আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন লিটন। দুবাইয়ের উইকেটে পেস ধরে। তাই আবারও তিন পেসারের একাদশ নিয়ে ফিরেছে বাংলাদেশ। তাসকিন ফিরেছেন সোহানের পরিবর্তে আর শরিফুল ফিরেছেন রিশাদ হোসেনের পরিবর্তে।

দুবাইয়ের আজকের পিচে দুই দলের জন্য এক বিশাল সমস্যা হতে চলেছে। এমন পিচ বেছে নেওয়া হয়েছে যে এক পাশের বাউন্ডারী বেশ বড়। দুই দলের জন্যই কঠিন হবে ওই প্রান্ত থেকে ছক্কা-চার বের করে নেওয়া।

বাংলাদেশ : তানজিদ তামিম, সাইফ হাসান, লিটন দাস (অধিনায়ক), তাওহিদ হৃদয়, জাকের আলি, শামীম হোসেন, নাসুম আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, মেহেদি হাসান, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান।

শ্রীলঙ্কা : পাথুম নিশাঙ্কা, কুশল মেন্ডিস, কামিল মিশারা, কুশল পেরেরা, চারিথ আসালাঙ্কা (অধিনায়ক), দাশুন শানাকা, কামিন্দু মেন্ডিস, ভানিন্দু হাসারাঙ্গা, দুনিথ ভেল্লালাগে, দুশমন্ত চামিরা, নুয়ান তুষারা।

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত