Beta
বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫

গুমের ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে মাইকেল চাকমার অভিযোগ

ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমা।
ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমা।
[publishpress_authors_box]

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর মুক্ত মাইকেল চাকমা গুমের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্টাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।

বুধবার ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে এ অভিযোগ করেন পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) এই সংগঠক। শেখ হাসিনাসহ অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে।

চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা মাইকেল চাকমার অভিযোগ আমলে নিয়েছি। এখন থেকেই তার অভিযোগের তদন্ত শুরু করব।”

শেখ হাসিনার শাসনামলে গুমের শিকার মাইকেল চাকমা এদিন সকালে দায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে ট্রাইব্যুনালে আসেন। তার সঙ্গে ছিলেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম ও তার স্ত্রী অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ।

২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকা থেকে সাংগঠনিক কাজ শেষে ঢাকায় ফেরার পথে ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমা গুমের শিকার হন। মাইকেল চাকমাকে উদ্ধারের দাবিতে ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী সংগঠন, প্রগতিশীল ও মানবাধিকার সংগঠন, শিক্ষক-নাগরিক সমাজসহ পরিবারের লোকজন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন।

মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরাও উদ্বেগ প্রকাশ করে মাইকেল চাকমার সন্ধান দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিল। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের ও মাইকেলের সন্ধান চেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে হাই কোর্টে রিট আদেবন করা হলেও তাকে উদ্ধারে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি বিগত সরকার।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৫ বছর ৩ মাস পর অবরুদ্ধ দশা থেকে গত ৭ আগস্ট মুক্তি পান মাইকেল চাকমা। ওইদিন ভোরের দিকে চট্টগ্রামের একটি স্থানে তাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া হয়।

গত ১৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন সদস্যরা একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দিয়েছে; সেখানে আওয়ামী লীগের শাসনামলে যেসব ব্যক্তি গুম হয়েছে বলে অভিযোগ উঠছিল, সেসব ঘটনার নির্দেশদাতা হিসাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ার কথা জানানো হয়েছে।

গত ২৭ আগস্ট হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে এই কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনে অভিযোগ দাখিলের কার্যক্রম।

২০০৯ সাল থেকে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত গুমের ঘটনার জন্য যারা দায়ী, তাদের চিহ্নিত ও জবাবদিহিতার আওতায় আনার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সর্বোচ্চ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ শিরোনামে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে কমিশন সদস্যরা জানিয়েছেন, তারা এ পর্যন্ত প্রাপ্ত ১ হাজার ৬৭৬ অভিযোগের মধ্যে ৭৫৮ জনের অভিযোগ যাচাই-বাছাই করেছেন।   

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারত গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে টানা প্রায় ১৬ বছরের শাসনের অবসান হয়।

গত জুলাই-আগস্টে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ ও তাদের অনুগতদের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে কার্যক্রম চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে।

গুম কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুমের ঘটনায় নির্দেশদাতা হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে কমিশন। এছাড়া হাসিনা প্রশাসনের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান এবং পুলিশ কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম ও মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। এছাড়া কমিশন গুমের ঘটনার বিচার প্রক্রিয়া শুরুসহ র‍্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে।  

গুমের শিকার অনেকে এখনও শঙ্কামুক্ত হতে পারছেন না; তাদের ওপর এতটাই ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয়েছিল যে, তারা এখনও ট্রমায় ভুগছেন বলে উল্লেখ করেন কমিশন প্রধান মইনুল ইসলাম চৌধুরী।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত