গত ২২ এপ্রিল পহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার পর থেকে উৎকণ্ঠিত সময় পার করছিল কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখার দুই পাড়ের কাশ্মীরিরা। ৭ মে ভারত যখন ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু করল, তখন থেকে নিয়ন্ত্রণ রেখায় গোলাগুলিতে তাদের উৎকণ্ঠা ভীতিতে রূপ নিয়েছিল। যুদ্ধবিরতির পর আপাত স্বস্তি ফিরল তাদের মনে।
ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার একদিন পর রবিবার রাতে নিয়ন্ত্রণ রেখায় কোনও গোলাগুলি হয়নি বলে দুই দেশের সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে। সংঘাত দুই দেশের নিত্যকার জীবনে যে ছন্দপতন ঘটিয়েছে, সেখানেও স্বাভাবিকতা ফেরার খবর পাওয়া গেছে।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন অবসানের পর ভারত-পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্র হলে কাশ্মীর থেকে যায় তাদের সংঘাতের বীজ হিসাবে। এক জাতির, এক সংস্কৃতির মানুষ হলেও কাশ্মীরিরা এখন রাজনৈতিক মানচিত্রে দুই দেশের নাগরিক।
১৯৪৯ সালে এক দফা যুদ্ধের পর জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় কাশ্মীরের মাঝে তৈরি হয় একটি নিয়ন্ত্রণ রেখা, যার একপাশে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর, অন্য পাশে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর। সেই নিয়ন্ত্রণ রেখায় সংঘাত তারপর থেকেও চলছে।
গত ২ মে ভারতের সামরিক অভিযান শুরুর পর প্রতি রাতেই সেই সীমান্তে গোলাগুলি চলছিল। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গত শনিবার উভয় দেশ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলেও সেই রাতেও দুই দেশের সীমান্ত রক্ষীদের মধ্যে গোলাগুলির খবর পাওয়া গিয়েছিল।
তবে ররিবার রাতটি অনেকটাই শান্তিপূর্ণ ছিল বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জম্মু ও কাশ্মীরসহ পাকিস্তান সীমান্তের কোথাও নতুন করে সংঘাত ঘটেনি।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি সূত্র রবিবার সকালে এনডিটিভিকে বলেছে, “রাতটি শান্তিপূর্ণই ছিল সীমান্তে। কোনও ধরনের সংঘাতের খবর পাওয়া যায়নি। কয়েক দিন পর এমন রাত পার হলো।”
শনিবার বিকালে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসার পরও সীমান্তের কিছু জায়গায় যখন সংঘর্ষের খবর পাওয়া যাচ্ছিল, তখন নয়া দিল্লি ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগও তুলেছিল। দুই দেশের সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে সে নিয়ে আলোচনাও হয়। তারপরই আসে শান্তিপূর্ণ রাত।
এদিকে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির পর সে দেশের জনজীবনেও স্বাভাবিকতা ফিরতে শুরু করেছে।
যুদ্ধ শুরুর পরপরই আকাশ পথে চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল েবশিরভাগ এয়ারলাইন্স। যুদ্ধবিরতির পর ফ্লাইট চলাচল আবার শুরু হয়। রবিবার সকাল নাগাদ ফ্লাইট স্থগিতের সংখ্যা অনেক কমে এসেছে।
হজ ফ্লাইটগুলো পুনরায় সচল করার উদ্যোগ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জিও নিউজ।
পাকিস্তানের সংবাদপত্র ডন জানিয়েছে, সোমবার পাকিস্তানের পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয়েছে। দিনের শুরুতে শেয়ার সূচকেও উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছিল।
চেস সিকিউরিটিজের গবেষণা পরিচালক ইউসুফ ফারুক ডনকে বলেন, “ভারতের আক্রমণের জবাব যেভাবে পাকিস্তান দিয়েছে, তাতে যুদ্ধবিরতির পর শেয়ারবাজারে চাঙাভাব দেখা যাচ্ছে।”
পাক-কুয়েত ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের প্রধান সামিউল্লাহ তারিক শেয়ারবাজার চাঙা হওয়ার পেছনে তিনটি কারণ চিহ্নিত করেছেন।
তার ভাষ্যে, যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি পাকিস্তানকে আইএমএফের ঋণ অনুমোদন এবং ইসলামাবাদের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণা এক্ষেত্রে প্রভাব রেখেছে।
যুদ্ধবিরতির পর সাপ্তাহিক ছুটি শেষে সোমবার দিনের শুরুতে ভারতের পুঁজিবাজারেও দেখা যাচ্ছে উল্লম্ফন। সংঘাত শুরুর পর এই প্রথম পুঁজিবাজারে চাঙাভাব ফিরল বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।