আন্তর্জাতিক বাজারে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশের বাজারেও সোনার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গড়ছে রেকর্ডের পর রেকর্ড; ভরি দুই লাখ টাকার দিকে ছুটছে।
অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে এক সপ্তাহ আগে ৯ সেপ্টেম্বর দেশের বাজারে সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) সোনার ভরি ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৪৭ টাকায় উঠেছিল।
মঙ্গলবার রাতে সোনার দাম আরেক দফা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে দেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। সবচেয়ে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেট সোনার দাম ভরিতে ৩ হাজার ৬৭৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। আর এতেই নতুন রেকর্ড হয়ে গেল সোনার দামের। ভরি উঠেছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬২২ টাকায়।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনও মূল্যবান এই ধাতুর দাম এত উচ্চতায় ওঠেনি। অন্যান্য মানের সোনার দরও একই হারে বাড়ানো হয়েছে।
বুধবার থেকে নতুন দাম কার্যকর হয়েছে।
গত ২০ আগস্ট থেকে বিশ্ববাজারে সোনার দাম টানা বাড়ছে। সেই দামের সঙ্গে সমন্বয় করে বাজুসও দেশের বাজারে এই ধাতুর দাম বাড়িয়ে চলেছে।
তিন সপ্তাহের ব্যবধানে আট দফায় দেশের বাজারে ২২ ক্যারেট সোনার দাম ভরিতে ১৮ হাজার ২৩ টাকা বেড়েছে।
এর আগে সবশেষ গত ৯ সেপ্টেম্বর এই মানের সোনার দাম ভরিতে ৩ হাজার ১৩৮ টাকা বাড়ানো হয়। ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ওই দর কার্যকর হয়; ভরি ওঠে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৪৭ টাকায়।
একদিন আগে ৮ সেপ্টেম্বর বাড়ানো হয় ১ হাজার ২৬০ টাকা; ভরি ওঠে। ১ লাখ ৮২ হাজার ৮১০ টাকায়। ৯ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছিল ওই দর।
তার একদিন আগে ৭ সেপ্টেম্বর ২ হাজার ৭১৮ টাকা বাড়ানো হয়; ভরি উঠেছিল ১ লাখ ৮১ হাজার ৫৫০ টাকায় বিক্রি হয়।
এর আগে ৩ সেপ্টেম্বর ২২ ক্যারেট মানের সোনার দাম ভরিতে ৩ হাজার ৪৪ টাকা বাড়ানো হয়। ৪ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতিভরি ১ লাখ ৭৮ হাজার ৮৩২ টাকায় বিক্রি হয়।
১ সেপ্টেম্বর ভরিতে ১ হাজার ৪৭০ টাকা বাড়ানো হয়। এর আগে গত ৩০ আগস্ট ১ হাজার ৬৬৮ টাকা বাড়ানো হয়। তার আগে ২৬ আগস্ট ১ হাজার ৫০ টাকা বাড়ানো হয়েছিল।
এর আগে প্রায় এক মাস দেশের বাজারে মূল্যবান এই ধাতুর দাম একই জায়গায় স্থির ছিল।
বাজুস সাধারণত রাত ৯টার দিকে সোনার দাম বাড়ানো-কমানোর ঘোষণা দিয়ে থাকে। পরের দিন থেকে সারা দেশে সেই দরে সোনা বিক্রি হয়।
তবে মাঝে-মধ্যে দিনে দুই বারও সোনার দাম বাড়ানো-কমানোর ঘোষণা দিয়ে থাকে সংগঠনটি।
মঙ্গলবার রাত ঠিক ৯টায় সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। এবারের দাম বাড়ানোর ব্যাখ্যায় সংগঠনটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাজুসের ঘোষণা অনুযায়ী, বুধবার থেকে দেশের বাজারে হলমার্ক করা প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেট মানের সোনা ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬২২ টাকায় বিক্রি হবে। ২১ ক্যারেটের প্রতিভরি সোনা বিক্রি হবে ১ লাখ ৮১ হাজার ১ টাকায়। ১৮ ক্যারেটের ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৩ টাকায় এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি সোনা ১ লাখ ২৮ হাজার ৭০১ টাকায় বিক্রি হবে।
মঙ্গলবার পর্যন্ত ২২ ক্যারেট মানের প্রতিভরি সোনা ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৪৭ টাকায় বিক্রি হয়। ২১ ক্যারেটের বিক্রি হয় ১ লাখ ৭৭ হাজার ৫০৩ টাকায়। আর ১৮ ক্যারেটের ১ লাখ ৫২ হাজার ১৪৫ টাকায় এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি সোনা ১ লাখ ২৬ হাজার ১৪৬ টাকায় বিক্রি হয়।
হিসাব বলছে, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিভরি ২২ ক্যারেটের সোনার দাম বেড়েছে ৩ হাজার ৬৭৫ টাকা। ২১ ক্যারেটের বেড়েছে ৩ হাজার ৪৯৯ টাকা। এছাড়া ১৮ ক্যারেটে ২ হজার ৯৯৮ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি সোনার দাম বেড়েছে ২ হাজার ৫৫৫ টাকা।
বিশ্ববাজারেও নতুন রেকর্ড
বিশ্ববাজারেও সোনার দাম নতুন রেকর্ড হয়েছে। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১২টায় বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) সোনার দাম ৯ ডলার ৯১ সেন্ট বেড়ে ৩ হাজার ৬৮৯ ডলার ৮৩ সেন্টে উঠেছে। শতাংশ হিসাবে বেড়েছে দশমিক ২৭ শতাংশ।
গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে বাজুস যখন দেশের বাজারে সানার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় তখন প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল ৩ হাজার ৬৪৩ ডলার ১ সেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করার পর সোনার দাম হু হু করে বাড়ছিল। ২২ এপ্রিল প্রতি আউন্স সোনার দাম ৩ হাজার ৫০০ ডলার ছাড়ায়।
এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দর ৩ হাজার ৫০০ ডলারের নিচে লেনদেন হচ্ছিল। আগস্টের মাঝামাঝি সময় থেকে টানা বাড়ছে মূল্যবান এই ধাতুর দর।
