ঢাকা স্টেডিয়ামের চার নম্বর গেটের সামনে প্রচন্ড ভীড়। হুড়মুড়িয়ে দৌড়ে স্টেডিয়ামের ভেতরে ঢুকলেন চার যুবক। তাদের এক জনের হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে লেখা ওয়ান টিম ওয়ান ড্রিম- বাংলাদেশ।
আরেকজনের হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে লেখা-লাভ ইউ হামজা চৌধুরী। চার জনের এই দলে আছেন নাদির শাহ অর্ণব, তাহসিন, মেহেদি হাসান তামিম ও সাইদুল ইসলাম। এরা সবাই এসেছেন নরসিংদি থেকে।
এর আগে কখনও ঢাকা স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখেননি এই যুবকেরা। প্রথমবার স্টেডিয়ামে এসে ভীষণ রোমাঞ্চিত সবাই। শুধু হামজার খেলা দেখবেন বলেই সবাই এসেছেন ঢাকায়। ১০ জুন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে হবে এশিয়ান কাপ বাছাই। এর আগে বুধবার ঢাকা স্টেডিয়ামে ভুটানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে মাঠে নামে বাংলাদেশ। যে ম্যাচে সব অলো কেড়ে নিয়েছেন স্বাভাবিকভাবেই হামজা দেওয়ান চৌধুরী।
হামজা যাদুতে মগ্ন পুরো স্টেডিয়াম। নরসিংদির যুবকেরাও এর বাইরে নন। ওই যুবকদের সবার পক্ষ থেকে নাদির বললেন, “হামজার খেলা দেখেছি এর আগে টেলিভিশনে। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে। এবার সরাসরি দেখতে এসেছি। ১০ জুন এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। ওই ম্যাচের টিকিট পাননি বলে আফসোস করলেন তারা।
মিরপুর থেকে খেলা দেখতে এসেছিলেন যমজ বোন ইকরা ও ইলা। নিরাপত্তা বেষ্টনি পেরিয়ে ভেতরে ঢুকে ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তাদেরও প্রথম মাঠে বসে খেলা দেখার অভিজ্ঞতা হলো।
ইকরা রোমাঞ্চিত ভীষণ। তিনি বলছিলেন, “ স্টেডিয়ামে প্রথম এসেছি। তবে টেলিভিশনে অনেক ফুটবল ম্যাচ দেখেছি। প্রথম এসেছি বলে একটা এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে।” ইলা বললেন, “হামজার খেলা আমার ভীষণ ভালো লাগে। তবে তারেক ও তপুর খেলাও ভালো লাগে।”
শফিক আহমেদ কেরানিগঞ্জ থেকে এসেছেন। তার প্রিয় খেলোয়াড় হামজা ও মোরসালিন। তিনি বলেন, “শুধু হামজা ও মোরসালিনে খেলা দেখব বলে এসেছি।”
সকালে কুমিল্লা থেকে রওয়ানা দিয়েছেন বাহাউদ্দিন। প্রথমবার স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখবেন তিনি। বাহাউদ্দিনের কন্ঠে ছিল রোমাঞ্চ, “এবার প্রথম এসেছি। খুব ভালো লাগছে। ফাহমিদুলের খেলা বেশি ভালো লাগে। ওর খেলা সরাসরি দেখিনি। তবে প্রথমবার দেখবো ভেবে ভালো লাগছে।”
মাঠে যখনই হামজার পায়ে বল গড়িয়েছে তখনই গর্জে উঠেছে গ্যালারি। হামজা হামজা বলে চীৎকার করেছে। ফার্মগেট মনিপুরি পাড়ার যুবক রয়েন মার্সেল গোমেজ মাঠে ঢোকার আগে বললেন, “হামজার খেলা দেখব বলে প্রথমবার স্টেডিয়ামে এসেছি। ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশ জিতবে। তবে আমি চাই সিঙ্গাপুরের বিপক্ষেও জিতুক।”
মিরপুর, মালিবাগ ও খিলক্ষেত থেকে আসা ফয়জুল, শাকিল ও রেদওয়ান অপেক্ষায় ছিলেন কখন স্টেডিয়ামে ঢুকবেন।
যাত্রাবাড়ির মালিহা বাবার সঙ্গে এসে উচ্ছ্বসিত, “হামজা সামনা সামনি দেখতে চাই। তাই বাবার সঙ্গে মাঠে এসেছি।”
একজন হামজা চৌধুরী যেন বদলে দিয়েছে বাংলাদেশের ফুটবল। নতুন করে বাংলাদেশের ফুটবলে যে জোয়ার এসেছে সেই জোয়ারের পেছনের কারিগর নিঃসন্দেহে হামজা চৌধুরী।
ভুটানের বিপক্ষে দেশের মাটিতে অভিষেকেই গোল পেয়েছেন হামজা। কে জানে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষেও হামজার গোলে বাংলাদেশ জিতলে, স্টেডিয়ামে শুধু হামজা নামেই প্রতিধ্বনি হবে।