Beta
সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
Beta
সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি : যেভাবে অবস্থান বদলালেন স্টারমার

starmer-10-downing-street-210925
[publishpress_authors_box]

‘সাহসী’ এক পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন কিয়ার স্টারমার; তা হলো রাষ্ট্র হিসাবে ফিলিস্তিনকে যুক্তরাজ্যের স্বীকৃতি দেওয়া।

ইসরায়েলের প্রতি অবিচল সমর্থন ধরে রাখা ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের কয়েকদিন বাদে এই পদক্ষেপে নিলেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী। খবর এসেছে, রবিবারই তিনি এই ঘোষণা দেবেন।

স্টারমার বলেছেন, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া সবসময়ই লেবার পার্টির পরিকল্পনার ছিল।

এটা ঠিক যে তা লেবার পার্টির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে ছিল। কিন্তু গত বছর ক্ষমতায় যাওয়ার পর দলটির অবস্থান বদল যায়। তাহলে কীভাবে লেবার পার্টির অবস্থানে আবার মোড় ্দল ঘটল?

ফিলিস্তিন নিয়ে স্টারমারের অবস্থান বারবার বদলেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে হামাসের হামলার পর তিনি এক সাক্ষাৎকারে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, গাজায় বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ বন্ধ করার অধিকার ইসরায়েলের রয়েছে।

কিন্তু তার সেই সাক্ষাৎকারের কারণেই যে ভোটে লেবার পার্টির প্রতি মুসলমানদের সমর্থন কমেছে, তা বলা যায় না। চার মাস পর দলটি গাজায় যুদ্ধবিরতির পক্ষে অবস্থান নেয়। তখন কেউ কেউ, এমনকি দলের ভেতর থেকেই বলেছিল যে এই অবস্থান নেওয়ার ক্ষেত্রে খানিকটা দেরিই হয়েছে।

লেবার পার্টি আরও বিপাকে পড়েছিল, যখন স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (এসএনপি) যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব নিয়ে আসে। লেবার পার্টি প্রথমে সেই প্রস্তাব সমর্থন না করলেও কয়েক দিন পর অবস্থান বদলাতে হয়।

না বদলে উপায়ও ছিল না: দলের মধ্যেই দেখা দিয়েছিল বিভেদ। ৫৬ জন লেবার এমপি এসএনপির সেই প্রস্তাবের সমর্থনে দাঁড়িয়েছিল।

এরপর গত জুলাই মাসে লেবার পার্টি যখন সরকার গঠন করে, তখন তারা জানত যে তাদের ভিন্নভাবে ভাবতে হবে। তা হয়েছিলও।

স্টারমার সরকার গাজায় মানবিক সহায়তা যাওয়ার বাধা অপসারণে উদ্যোগী হয়। জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থায় যুক্তরাজ্য থেকে তহবিল জোগানো পুনরায় শুরু করে। আন্তর্জাতিক আদালতকে সম্মান জানানোর আহ্বান জানায়। আগের রক্ষণশীল সরকার যেখানে বিপরীত অবস্থানে ছিল।

তবে বিরোধী দলে থাকাকালে ইসরায়েলের গাজা অভিযানের বৈধতা নিয়ে যে প্রশ্ন তুলেছিল লেবার পার্টি, তা থেকে বিরত থাকে।

ক্ষমতায় এক বছর থাকার পর এখন লেবার সরকার ইসরায়েল প্রশ্নে নানা হস্তক্ষেপের পক্ষে বলছে। তারা বলছে যে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তারে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের পরোয়ানাকে তারা সম্মান জানাবে।

লেবার সরকার ইসরায়েলের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা স্থগিত করে। পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার লঙ্ঘনে সমর্থন দিয়ে যাওয়া সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

এছাড়া ইসরায়েলি দুই মন্ত্রী ইতামার বেন-ভির এবং বেজালেল স্মোত্রিচের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাজ্য।

কিন্তু অস্ত্র সরবরাহ এবং আইনি পরামর্শ প্রকাশের বিষয়টি নিয়ে এখনও প্রশ্ন রয়ে গেছে।

সরকারের একজন মুখপাত্র স্কাই নিউজকে বলেন, “গাজায় সামরিক অভিযানে ব্যবহারের জন্য কোনও বোমা বা গোলাবারুদ রপ্তানি আমরা করি না। ইসরায়েলে বেশিরভাগ সামরিক রপ্তানি লাইসেন্স বাণিজ্যিক বা বেসামরিক ব্যবহারের জন্য।”

স্টারমারের অবস্থান বদলের জন্য পার্লামেন্টের পেছন সারির এমপিরাও কিছুটা কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন।

এই গ্রীষ্মে ফ্রান্স যখন ফিলিস্তিনিকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল; তার পরপরই ১০০ জনের বেশি এমপি, যাদের মধ্যে স্টারমারের নিজের দলেরও অনেকে ছিলেন, এক চিঠিতে যুক্তরাজ্যকেও অবস্থান স্পষ্ট করার আহ্বান জানায়।

যার ফলে লেবার সরকার ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

এরপরে কী হবে, তা অনুমান করা কঠিন, তবে সম্ভবত সেই এমপিরা সরকারকে আরও কঠোর অবস্থান নেওয়ার চাপ দেবে।

জাতিসংঘ গঠিত একটি কমিশন এই মাসে জানিয়েছে যে গাজায় গণহত্যা চলছে। লন্ডনের মেয়র সাদিক খানও এখন প্রকাশ্যে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে গণহত্যা বলে আখ্যায়িত করছেন।

যুক্তরাজ্যের এখন সবচেয়ে বড় চাওয়া হলো, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি। আর তার জন্যই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে, কারণ আরব দেশগুলো এই শর্তই দিচ্ছে।

কিন্তু সেই ফলাফল না আসা পর্যন্ত এই স্বীকৃতি যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে নীতির একটি বড় পরিবর্তন। এই যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে লেবার সরকার নীতি পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও সবচেয়ে বড় উদাহরণ।

তথ্যসূত্র : স্কাই নিউজ

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত