সুইডিশ জলবায়ু ও অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ মঙ্গলবার ইসরায়েল থেকে একটি ফ্লাইটে ফ্রান্সে যান। সেখান থেকে তিনি সুইডেনের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছেন।
এর আগে গাজায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার পথে জাহাজে অবস্থান করার সময় ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে তিনি ও অন্যান্য কর্মীরা আটক হন।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোশাল মিডিয়া এক্সে জানায়, গ্রেটা থুনবার্গ ইসরায়েল ছেড়ে সুইডেনের ফ্লাইটে (ফ্রান্স হয়ে) রওনা হয়েছেন।
এই পোস্টের সঙ্গে তার প্লেনে ওঠার দুটি ছবিও যুক্ত করা হয়।
২২ বছর বয়সী থুনবার্গ একজন পরিচিত জলবায়ুকর্মী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিমান ভ্রমণ এড়িয়ে চলেন। ২০১৯ সালে তিনি একটি জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নিতে নিউ ইয়র্কে পালতোলা নৌকায় করে গিয়েছিলেন।
থুনবার্গের সঙ্গে আটক হওয়া মেদলিন জাহাজের অন্তত পাঁচজন কর্মী স্বেচ্ছায় ইসরায়েল ছাড়তে রাজি হননি। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, তাদের বাধ্যতামূলকভাবে দেশত্যাগে বাধ্য করা হবে।
মঙ্গলবার ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-নোয়েল বারো এক্সে লিখেছেন, “গত রাতে আমাদের কনসাল ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের হাতে আটক ছয়জন ফরাসি নাগরিকের সঙ্গে দেখা করতে পেরেছেন। তাদের পরিবারকে ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে। এদের মধ্যে একজন স্বেচ্ছায় ইসরায়েল ত্যাগে রাজি হন এবং আজকের মধ্যেই তিনি ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বাকি পাঁচজনকে নির্বাসনে পাঠানো হবে।”
সোমবার আটক হওয়া ফরাসি নাগরিকদের একজন হলেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য রিমা হাসান।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মুখপাত্র ডেলফিন কোলার্ড সোমবার জানান, গত কয়েক দিন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন। এর উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য রিমা হাসান এবং তার সঙ্গে থাকা অন্যান্য ব্যক্তিদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা, যারা মেদলিন নামক নৌকায় অবস্থান করছিলেন।”
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, যারা নির্বাসন চুক্তিতে সই করতে অস্বীকৃতি জানাবে এবং ইসরায়েল ছাড়বে না, তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
সোমবার সকালে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার উদ্দেশে রওয়ানা করা ত্রাণবাহী জাহাজটি থামায়। পরে সন্ধ্যায় ওই জাহাজটি ইসরায়েলের আশদদ বন্দরে নোঙর করে। এই তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
জাহাজটি ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন’ নামের একটি সংগঠনের অংশ। এই সংগঠনটি গাজায় ইসরায়েলের অবরোধের বিরোধিতা করে এবং নৌপথে অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করে আসছে।
ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) অভিযোগ করেছে যে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জাহাজটিতে “আক্রমণ” চালিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক পানিসীমায় বেআইনিভাবে এটি “অবরোধ করে”।
জাহাজটি গাজায় ত্রাণ পাঠানোর চেষ্টা করছিল। গাজায় ৬০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলছে এবং গত ১১ সপ্তাহ ধরে ইসরায়েল সবধরনের ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ রেখেছে। ফলে ২১ লাখ মানুষের এই উপত্যকায় মারাত্মক খাদ্য সঙ্কট তৈরি হয়েছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই অভিযান এবং কর্মীদের আটক করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
অ্যামনেস্টির মহাসচিব অ্যাগনেস কালামার্ড এক বিবৃতিতে বলেন, “মাঝরাতে আন্তর্জাতিক পানিসীমায় ম্যাডলিন জাহাজে হস্তক্ষেপ ও আটকানোর ঘটনা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে। এতে থাকা লোকদের নিরাপত্তাকেও হুমকির মুখে ফেলেছে।”
সিএনএনে দেওয়া এক বিবৃতিতে ইসরায়েল জানায়, “আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় গাজা উপত্যকায় কোনও জাহাজ প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।”
ইসরায়েল আগেই জানিয়েছিল, তারা যেকোনো মূল্যে এই ত্রাণবাহী জাহাজটিকে গাজায় পৌঁছাতে দেবে না। তারা এই জাহাজকে “সেলফি ইয়ট” বলে উল্লেখ করে, যেখানে বিভিন্ন “সেলিব্রেটি” আছেন বলে দাবি করেছে।
ইসরায়েল গত ২ মার্চ গাজায় একটি সম্পূর্ণ মানবিক অবরোধ আরোপ করে। এতে খাদ্য, চিকিৎসাসামগ্রী এবং অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী প্রবেশ একেবারে বন্ধ করে দেয়। এই অবরোধ চলেছে টানা ১১ সপ্তাহ ধরে। এতে দুই মিলিয়নেরও বেশি ফিলিস্তিনি জনগণ চরম কষ্টে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়ে ইসরায়েল গত মে মাসের শেষ দিকে সামান্য পরিমাণ ত্রাণ প্রবেশ করতে দেয়। তবে মানবিক সহায়তাকারী সংস্থাগুলো বলছে, এটি যুদ্ধ-পূর্ব সময়ে প্রবেশ করা ত্রাণের তুলনায় অনেক কম। তারা সতর্ক করে দিয়েছে যে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে এবং বড় পরিসরে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। এপ্রিলের শেষদিকে একটি জাতিসংঘ-সমর্থিত প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি পাঁচজনের একজন অনাহারের ঝুঁকিতে আছেন।
গত সপ্তাহে ডজনখানেক ফিলিস্তিনি নিহত হন। তারা নতুন একটি ত্রাণ সংস্থা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) থেকে ত্রাণ সংগ্রহের চেষ্টা করছিলেন। এই সংস্থাটি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে গঠিত হয়েছে এবং এটি জাতিসংঘ পরিচালিত পুরাতন ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থার পরিবর্তে চালু করা হয়েছে।
জাতিসংঘ হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, নতুন এই ত্রাণ বিতরণ পদ্ধতি “মৃত্যুর ফাঁদে” পরিণত হয়েছে। কারণ ক্ষুধার্ত মানুষজন এখন জীবন ঝুঁকি নিয়ে খাদ্যের জন্য ছুটছেন।