চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ শিক্ষার্থী অপহরণের ঘটনায় তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যয়নরত ১৮৩ জন পাহাড়ি শিক্ষার্থী।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে তারা অপহৃতদের দ্রুত মুক্তির দাবিও জানায়।
গতকাল ১৬ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৬টার দিকে খাগড়াছড়ি সদরের গিরিফুল জায়গা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন শিক্ষার্থী অপহরণের শিকার হয়।
অপহৃত শিক্ষার্থীরা হলেন- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মৈত্রীময় চাকমা ও অলড্রিন ত্রিপুরা, নাট্যকলা বিভাগের দিব্যি চাকমা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের রিশন চাকমা, প্রাণীবিদ্যা বিভাগের লংঙি ম্রো। তারা সবাই ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
এরমধ্যে রিশন চাকমা পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) চবি শাখার সদস্য বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। এটি সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) ছাত্র সংগঠন।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, “বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় যে, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এ অপহরণের সঙ্গে জড়িত। এ ঘটনায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা তীব্র নিন্দা এবং অপহৃতদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানাচ্ছে।”
ঘটনার দিনের ব্যাখ্যা দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, “অপহৃত শিক্ষার্থীরা বিঝু (চাকমা সম্প্রদায়ের বর্ষবিদায়ের উৎসব) উপলক্ষে বন্ধুদের সঙ্গে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি বেড়াতে যায়। বিঝু শেষে গত ১৫ এপ্রিল তারা চট্টগ্রামে ফেরার উদ্দেশ্যে বাঘাইছড়ি থেকে দিঘীনালা হয়ে খাগড়াছড়ি সদরে চলে আসে। সেখানে বুধবার চট্টগ্রামগামী বাসের টিকিট না পেয়ে তারা পাঁচজন খাগড়াছড়ি শহর থেকে কিছু দূরে কুকিছড়া নামক জায়গায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাত্রিযাপন করে।
পরদিন ১৬ এপ্রিল সকালে কুকিছড়া থেকে টমটম গাড়িতে করে খাগড়াছড়ি সদরে আসার পথে গিরিফুল নামক জায়গায় তাদের গাড়ি আটকানো হয়। সেখান থেকে টমটমের চালকসহ তাদেরকে অজ্ঞাত স্থানে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে ওই চালককে ছেড়ে দিলেও পাঁচ শিক্ষার্থীর খোঁজ পাওয়া যায়নি।”
সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন অপহরণ ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সারা বাংলাদেশে মানবাধিকারবিরোধী ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার পরিপন্থী উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, “বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। তাদের ওপর এমন ঘৃণ্য ঘটনা আমাদের জন্য আত্মবিধ্বংসী কাজ। তাই আমরা অপহৃত ৫ জন শিক্ষার্থীকে অতিদ্রুত নিঃশর্তভাবে সুস্থ শরীরে মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য যথাযথ প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।”
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, চুয়েটসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা।
৫ শিক্ষার্থী অপহরণের ঘটনায় পার্বত্য চট্টগ্রামভিত্তিক আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউপিডিএফকে দায়ী করেছে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) ছাত্র সংগঠন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের (পিসিপি)।
তবে ইউপিডিএফ দাবি করেছে, এ ঘটনার সঙ্গে তারা জড়িত নয়। অপহৃতদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।