Beta
বুধবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৫
Beta
বুধবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৫

ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ এখন কোথায় দাঁড়াল

donald-trump-us-president-maga-1
[publishpress_authors_box]

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পদে ফেরার তিন মাসের মাথায় বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করে দুনিয়াজুড়ে হৈ চৈ ফেলে দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

তার শুরুটা হয়েছিল বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর উচ্চ হারে আমদানি শুল্ক আরোপ। চীন থেকে শুরু করে প্রতিবেশী দেশ কানাডাও বাদ যায়নি ট্রাম্প শুল্কের খাঁড়া থেকে।

ট্রাম্প নিজের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে- তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে চান। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানির সুবিধা যতটুকু যে নেবে, তাকে সেই অনুপাতে আমদানিও করতে হবে।

বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র এতদিন ধরে যে বাণিজ্য নীতি ধরে এগোচ্ছিল, ব্যবসায়ী ট্রাম্প ঠিক উল্টো পথ ধরেন। তার ঘোষিত শুল্কহার বিশ্বায়নের বিপরীত দিকে হাঁটার সঙ্গেও তুলনা করা হচ্ছে।

উচ্চ শুল্ক আরোপের পর তা কমাতে বিভিন্ন দেশকে দর কষাকষির সুযোগ দিয়েছিলেন ট্রাম্প। ৩১ জুলাই সেই সময়সীমা পেরুনোর ঠিক আগ মুহূর্তে বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউস শুল্ক হার পুনর্বিন্যাস করেছে, যাতে ট্রাম্পের নতুন বাণিজ্য নীতির ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে।

নতুন শুল্কহার কেমন

হোয়াইট হাউস ঘোষণা করেছে, যুক্তরাষ্ট্রে আসা যে কোনো দেশের পণ্যের জন্য সর্বজনীন শুল্ক ১০ শতাংশ বহাল থাকবে, যা ২ এপ্রিল থেকে কার্যকর রয়েছে।

কিন্তু শুধু ১০ শতাংশ হার শুধু সেইসব দেশের জন্য প্রযোজ্য হবে, যাদের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে। অর্থাৎ যেসব দেশে যুক্তরাষ্ট্র আমদানির চেয়ে বেশি রপ্তানি করে। ট্রাম্প প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, এটি বেশিরভাগ দেশের জন্যই প্রযোজ্য।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, এমন দেশগুলোর জন্য ১৫ শতাংশ হার নতুন শুল্কের সর্বনিম্ন স্তর ঠিক করা হয়েছে।

প্রায় ৪০টি দেশকে ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক দিতে হবে। এই শুল্ক অনেক দেশের জন্য ২ এপ্রিলের পাল্টা শুল্কের চেয়ে কম হবে, তবে কয়েকটি দেশের জন্য এটি বেশি হবে।

এক ডজনেরও বেশি দেশের শুল্ক হার ১৫ শতাংশের বেশি, কারণ তারা হয় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য কাঠামোতে সম্মত হয়েছে অথবা ট্রাম্প তাদের নেতাদের কাছে একটি উচ্চতর শুল্ক নির্ধারণ করে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। কর্মকর্তারা বলছেন, এই দেশগুলোর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি অনেক বেশি রয়েছে।

কোন কোন দেশের শুল্ক ১৫% এর বেশি

হোয়াইট হাউস ২৬টি দেশকে উচ্চ বাণিজ্য ঘাটতির দেশ হিসাবে চিহ্নিত করেছে, সেগুলোর পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক ১৫ শতাংশের বেশি।

দেশগুলো হলো- সিরিয়া (৪১%), লাওস (৪০%), মিয়ানমার (৪০%), সুইজারল্যান্ড (৩৯%), সার্বিয়া (৩৫%), ইরাক (৩৫%), আলজেরিয়া (৩০%), লিবিয়া (৩০%), বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা (৩০%), দক্ষিণ আফ্রিকা (৩০%), ব্রুনাই (২৫%), ভারত (২৫%),  মলদোভা ( ২৫%), কাজাখস্তান (২৫%), তিউনিসিয়া (২৫%), বাংলাদেশ (২০%), শ্রীলঙ্কা (২০%), ভিয়েতনাম (২০%), তাইওয়ান (২০%), মালয়েশিয়া (১৯%), ইন্দোনেশিয়া (১৯%),  কম্বোডিয়া (১৯%), পাকিস্তান (১৯%), ফিলিপাইন (১৯%), থাইল্যান্ড (১৯%), নিকারাগুয়া (১৮%)।

এছাড়া মেক্সিকো ও কানাডাকে মুক্ত-বাণিজ্য চুক্তির অধীনে অব্যাহতিপ্রাপ্ত নয় এমন পণ্যের জন্য উচ্চ শুল্কের মুখোমুখি হতে হবে।

মেক্সিকো বর্তমান ২৫ শতাংশ শুল্কহার ৯০ দিনের জন্য চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে। অব্যাহতি সুবিধার বাইরে থাকা কানাডিয়ান পণ্যের জন্য শুক্রবার থেকে ৩৫ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য হবে।

নতুন শুল্ক কখন কার্যকর হবে

নতুন শুল্ক হার শুক্রবার থেকে কার্যকর হবে না, যেমনটি প্রত্যাশা করা হয়েছিল।

পরিবর্তে নতুন শুল্ক আদায়ের জন্য কাস্টমস এবং বর্ডার প্রোটেকশনকে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করার জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে নতুন হার ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।

বাণিজ্য চুক্তির কী প্রভাব

যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের শুল্ক হারে কোনও পরিবর্তন হয়নি, সেগুলো হলো যুক্তরাজ্য, চীন ও মেক্সিকো।

ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও চীনের সাথে একটি বাণিজ্য কাঠামোতে স্বাক্ষর করেছেন। তবে, চীনের সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তিটির মেয়াদ দুই সপ্তাহেরও মধ্যে ফুরিয়ে যাবে। ফলে এরপর শুল্ক বাড়তে পারে।

মেক্সিকোর শুল্ক হার ৩০ শতাংশ করার হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু বৃহস্পতিবার মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউমের সঙ্গে আলোচনার পর তিনি আগের শুল্ক হার চলার মেয়াদ আরও ৯০ দিন বাড়িয়েছেন।

গত মাসে ট্রাম্প আরও কয়েকটি বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা দেন। সেগুলো চূড়ান্ত হবে কি না, তা স্পষ্ট না হলেও সেই দেশগুলো উচ্চ শুল্কহার এড়িয়ে যেতে পারে।

যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আসা পণ্যের জন্য ৩০ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য হওয়ার কথা ছিল। তবে চুক্তি কারণে তা ১৫ শতাংশের মধ্যেই রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানি পণ্যের ক্ষেত্রে তাই ঘটেছে।

এই শুল্ক কি বৈধ

এই প্রশ্নটি বারবার উঠছে। ট্রাম্প দেশ নির্দিষ্ট করে শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে ইন্টারন্যাশনাল ইমার্জেন্সি পাওয়ার অ্যাক্টের ক্ষমতা দেখিয়ে আসছেন।

তবে গত মে মাসে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালতের আদেশে বলা হয়, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসাবে তার ক্ষমতা ছাড়িয়ে গেছেন। এই আদালতের আদেশে বেশিরভাগ শুল্ক বাতিল হয়।

ট্রাম্প প্রশাসন আদালতে আপিল করেছে। তবে জরুরি ক্ষমতা ব্যবহার করে শুল্ক আরোপ করতে প্রেসিডেন্ট পারেন কি না, তা নিয়ে বিচারকরা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

কয়েকজন বিচারক ট্রাম্পের অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা ঘোষণার পেছনের যুক্তি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। প্রেসিডেন্ট দাবি করেছিলেন যে যে দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি, তখন তা একটি জাতীয় অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা তৈরি হয়, যার সংশোধনের জন্য শুল্ক হারে পরিবর্তন প্রয়োজন।

আদালতে শুনানিতে এনিয়ে বিচারক রেমন্ড চেন প্রশ্ন করেন, “আমরা যখন কয়েক দশক ধরে বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে আছি, তখন কি বাণিজ্য ঘাটতি একটি অসাধারণ এবং অস্বাভাবিক হুমকি হতে পারে?”

আপিল আদালতের রায় আসতে কয়েক সপ্তাহ, এমনকি মাসও লেগে যেতে পারে। আবার সেই রায়ও চ্যালেঞ্জ করা যায়।

ট্রাম্প কি আর সময় বাড়াবেন

এর আগে দুবার সময় দিয়েছেন ট্রাম্প। এবার নতুন শুল্ক হার শুক্রবার কার্যকর হওয়ার কথা ছিল, তবে তা ৭ আগস্ট কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।

নতুন শুল্কহার কার্যকরের আগে আবার সময় দেওয়া হবে, এমন কোনও ইঙ্গিত ট্রাম্প এখনও দেননি।

তারপরও সন্দেহ থাকে এই কারণে যে তিনি আগেও সময়সীমা হুট করে বাড়িয়েছিলেন।

গত এপ্রিলে শুল্ক বাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘লিবারেশন ডে’ ঘোষণা করেছিলেন ট্রাম্প। তবে কয়েকদিন বাদেই স্থগিত করেছিলেন কার্যকারিতা।

তথ্যসূত্র : সিএনএন

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত