চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের মে মাস পর্যন্ত ১১ মাসে রাজস্ব আহরণ সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে পড়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এনবিআরকে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে চলতি জুন মাসেই সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৩০ শতাংশ বা ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে হবে।
এনবিআরের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থ বছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত ১১ মাসের সাময়িক হিসাবে মোট আদায় হয়েছে ৩ লাখ ২৭ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। এই আদায় এনবিআরের মে মাস পর্যন্ত আহরণের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৯ দশমিক ২৮ শতাংশ বা ৬৬ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা কম।
চলতি অর্থ বছরের জন্য বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার যে বাজেট দিয়েছিল তাতে এনবিআরের মাধ্যমে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। গত আগস্টে পটপরিবর্তনের পর জানুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয় সেই লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা কমিয়ে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করে।
আগামী ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া এই অর্থ বছরে রাজস্ব আহরণে রেকর্ড পরিমাণ ঘাটতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এনবিআরসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক কর্মকর্তা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বিদায়ী অর্থ বছরে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি হতে পারে। অর্থ বছরের ১১ মাসে গড়ে প্রায় ৩০ হাজার টাকা করে রাজস্ব আদায় হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে জুন মাসে আদায় করতে হবে প্রায় ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা, যা একেবারেই অসম্ভব।
তিনি বলেন, অর্থ বছরের শেষ মাসে অন্যান্য মাসের তুলনায় কিছুটা বেশি রাজস্ব আদায় হয়ে থাকে। সে হিসাবে জুন মাসে ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকা আদায় হলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ হাজার কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হবে।
এর আগে কোনও অর্থ বছরেই রাজস্ব আহরণে এতো বেশি ঘাটতি হয়নি জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, “চলতি অর্থ বছরের শুরু থেকেই সরকার পরিবর্তনজনিত রাজনৈতিক অস্থিরতা, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ না হওয়া এবং অনেক শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া এই ঘাটতির কারণ।”
গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয় ৩ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা; ঘাটতি ছিল প্রায় ৪৯ হাজার কোটি টাকা।
এনবিআরের হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদায়ী অর্থ বছরের মে মাস পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের অন্যতম প্রধান খাত আয়কর খাতেই সবচেয়ে বেশি ৩৭ শতাংশ রাজস্ব আহরণ কম হয়েছে। মে পর্যন্ত এই খাতে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৮০৫ কোটি টাকার সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আহরণ হয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৭ শতাংশ কম।
মে মাস পর্যন্ত মূল্য সংযোজন কর (মুসক) খাতের সংশোধিত ১ লাখ ৪৫ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা আহরণের বিপরীতে আদায় হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা বা প্রায় ২৬ শতাংশ কম।
এই ১১ মাসে আমদানি-রপ্তানি বা শুল্ক খাত থেকে ১ লাখ ৯ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯২ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা বা প্রায় ২৩ শতাংশ কম।