নেপালে সদ্য অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সুশীলা কার্কি বলেছেন, ছয় মাসের বেশি এই পদে থাকবেন না তিনি।
দায়িত্ব নেওয়ার পর দেওয়া প্রথম বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘এই কাজের কোনও চাওয়া আমার ছিল না। রাজপথ থেকে আসা কণ্ঠস্বরের পর বাধ্য হয়ে এ দায়িত্ব গ্রহণ করেছি।’
আগামী বছরের ৫ মার্চ নির্বাচন হওয়ার পর নতুন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে দেবেন বলেই নিশ্চিত করেছেন তিনি।
সুশীলা কার্কি বলেন, “জেনজির চিন্তাভাবনা বুঝে আমাদের কাজ করতে হবে। দুর্নীতির অবসান, সুশাসন এবং অর্থনৈতিক সমতাই এই প্রজন্মের চাওয়া।’
সংঘর্ষে এত এত প্রাণহানির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি লজ্জিত বোধ করছি। যদি নেপালি কেউ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস করে তাহলে তাদের কীভাবে নেপালি বলা যায়।’
এখন কার্কির সামনে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ। তার মধ্যে রয়েছে আইনের শাসন ফেরানো, আবার সংসদ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভবন গড়ে তোলা।
গত ৪ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার তার সরকার ফেইসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সোশাল মিডিয়া বন্ধ করে দিলে ক্ষোভে ফেটে পড়ে তরুণ প্রজন্ম। তাদের এই বিক্ষোভ জেন জি বিক্ষোভ নামে পরিচিতি পায়।
বিক্ষোভ দমনে সরকার কঠোর হলে সোমবার কাঠামান্ডুতে ব্যাপক সহিংসতায় ১৯ জন নিহত হয়। সরকার কারফিউ জারি করে সেনা নামালেও বিক্ষোভ চলতে থাকে। এরই মধ্যে এই সহিংসতায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ জনে। তার মধ্যে দুজন পুলিশ কর্মকর্তাও রয়েছে।
মঙ্গলবার বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট ভবন, মন্ত্রী-রাজনীতিকদের বাড়িতে আগুন দেওয়া শুরু করলে ওলি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। জনরোষ থেকে বাঁচাতে হেলিকপ্টারে করে ওলিসহ মন্ত্রীদের রাজধানী থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানে বিক্ষোভকারী তরুণদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাওদেল ও সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগদেল। শুক্রবার আলোচনায় মতৈক্য হওয়ার পর নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সুশীলা কার্কির নাম ঘোষণা করে প্রেসিডেন্টের দপ্তর।
সংসদ পুনর্বহালের দাবি
নেপালে দুর্নীতিবিরোধী ভয়াবহ বিক্ষোভের মুখে সরকার পতনের পর প্রেসিডেন্টের কাছে ভেঙে দেওয়া সংসদ পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে দেশটির প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো।
নেপালি কংগ্রেস, সিপিএন – ইউএমএল এবং মাওবাদী সেন্টারসহ আটটি দল এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পাওদেল অসাংবিধানিক আচরণ করছেন।
গত শুক্রবার রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেন। এখন নতুন করে সেই সংসদ পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। শনিবার দেওয়া বিবৃতিতে আটটি দলের প্রধান হুইপ স্বাক্ষর করেছেন।
তারা যুক্তি দিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তা অসাংবিধানিক এবং নেপালের বিচার বিভাগের প্রতিষ্ঠিত নজিরগুলোর বিরুদ্ধে।