Beta
বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫

সুদ ও বেতনেই যাবে রাজস্ব বাজেটের অর্ধেক

ss-corporate-tax-budget-060624
[publishpress_authors_box]

এবারের রাজস্ব বাজেটের প্রায় ২ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকাই চলে যাবে দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতায়। এই অঙ্ক মোট রাজস্ব বাজেটের প্রায় অর্ধেক।

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গত ৬ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন। এর মধ্যে রাজস্ব বাজেটের (পরিচালন বাজেট) পরিমাণ ৫ লাখ ১৫ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা। আর উন্নয়ন বাজেট ২ লাখ ৮১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা।

নতুন বাজেটের এই ব্যয়ের অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট রাজস্ব বাজেটের ২ লাখ ৩১ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা খরচ হবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, পেনশন এবং সুদ মেটাতে।

রাজস্ব বাজেটের সবচেয়ে বেশি অর্থ ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা চলে যাবে দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে, যা মোট ব্যয়ের ২২ শতাংশ।

এই টাকার মধ্যে ৯৩ হাজার কোটি টাকা চলে যাবে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংক, সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য খাত থেকে নেওয়া ঋণের সুদ পরিশোধে। আর ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা খরচ হবে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ (এডিবি) বিভিন্ন দাতাদেশ ও সংস্থার কাছ থেকে নেওয়া ঋণের সুদ পরিশোধে।

রাজস্ব বাজেটের ৮১ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা খরচ হবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন ভাতায়, যা মোট ব্যয়ের ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

আর অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন বাবদ ব্যয় হবে ৩৬ হাজার ৯০২ কোটি টাকা, যা মোট ব্যয়ের ৭ দশমিক ২ শতাংশ।

আগামী ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মূল বাজেটে দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৯৮ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ১ লাখ ৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা করা হয়।

মূল বাজেটে দেশি ঋণের সুদ পরিশোধে বরাদ্দ ছিল ৮২ হাজার কোটি টাকা। মূল বাজেটে ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৮৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করা হয়েছে।

বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ মূল বাজেটে বরাদ্দ ছিল ১২ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ১৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা করা হয়।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের মূল বাজেটে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতায় বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৮০ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা অবশ্য কিছুটা কমিয়ে ৭৭ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকায় নামিয়ে এনেছেন অর্থমন্ত্রী।

পেনশনে মূল বাজেটের ৩২ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা থেকে কিছুটা কমে ৩২ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা হয়েছে।

সুদ পরিশোধে বরাদ্দ বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হয় অর্থনীতির গবেষক বেসরকারি পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুরের কাছে। সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “গত কয়েক বছর সঞ্চয়পত্র বেশি বিক্রি হওয়ায় অভ্যন্তরীণ ঋণের বোঝা বেড়ে গেছে। সেই ঋণের সুদ পরিশোধের জন্যই অর্থমন্ত্রীকে এ খাতে বেশি বরাদ্দ রাখতে হয়েছে। এছাড়া ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে।”

মাহমুদ আলী তার প্রথম বাজেটে বেতন ও ভাতা বাবদ যে বরাদ্দ রেখেছেন তারমধ্যে ১২ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা কর্মকর্তাদের বেতনে খরচ করবেন। ২৯ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা খরচ করবেন কর্মচারীদের বেতনের জন্য।

আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভাতার জন্য রেখেছেন ৩৯ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা।

অন্যান্য ব্যয়

সরবরাহ ও সেবা খাতের খরচের জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৩ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। মেরামত ও সংরক্ষণ বাবদ নতুন বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১১ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা।

প্রস্তাবিত বাজেটে বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮৮ হাজার ১৫ কোটি টাকা। প্রণোদনায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৫ হাজার ২২৫ কোটি টাকা।

ঋণের চিত্র

নতুন বাজেটে সরকারের ব্যয় নির্বাহের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন, সেখানে সামগ্রিক ঘাটতি দেখানো হয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা।

ঘাটতির এই পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪ দশমিক ৬ শতাংশ।

অবশ্য বাজেটে বৈদেশিক অনুদান ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা পাওয়ার আশা মাহমুদ আলীর। ওই অনুদান পাওয়া গেলে ঘাটতি থাকবে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।

এই বিশাল ঘাটতি মেটাতে সরকার দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেবে।

অর্থমন্ত্রী পরিকল্পনা করেছেন, এবার বৈদেশিক উৎস থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা ঋণ নেবেন। সেখান থেকে ৩৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আগের ঋণের কিস্তি পরিশোধে খরচ করবেন। ফলে সরকারের নিট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ৯০ হাজার ৭০০ কোটি কোটি টাকা।

ঘাটতির বাকি ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা নেওয়া হবে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া হবে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

বিদায় নিতে যাওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মূল বাজেটে নিট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ধরা হয়েছিল এক লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা, সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা নিয়ে ঘাটতি মেটানোর কথা বলা হয়েছিল। সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে এক লাখ ৫৬ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এই অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক থেকে এক লাখ হাজার ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার টাকা নেওয়ার লক্ষ্য ছিল।

ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বাড়ায় এ লক্ষ্য বাড়িয়ে এক লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা নেওয়ার কথা বলা হয় সংশোধিত বাজেটে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত