তৃতীয় টার্মিনাল দিয়ে যাত্রী পরিবহন শুরু হলে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এই অঞ্চলের ‘বিমান যোগাযোগের কেন্দ্র’ হয়ে উঠবে বলে আশা করছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
রবিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আশার কথা জানান।
এর আগে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে একনেক সভায় চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বে টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’সহ ১৬টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।
সরকারি বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) ভিত্তিকে চারটি টার্মিনাল নির্মাণসহ এটি একটি মেগা প্রকল্প হয়ে উঠবে বলে জানান পরিকল্পনা উপদেষ্টা।
এসময় তিনি দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার বেশি প্রকল্প নেওয়া ঠিক না মন্তব্য করে বলেন, “যতদূর প্রয়োজন তার থেকে বেশি হয়ে গেলে কিন্তু এত ব্যয়বহুল মেগা প্রকল্প নেওয়া ঠিক না। আবার যদি শুরু না করা হয় তাহলে দেখা যাবে যখন অর্থনীতি আরও বড় হবে, তখন এটার অভাবেই অর্থনীতি আর সমৃদ্ধি লাভ করতে পারছে না। এটা সবসময় অর্থনীতির একটা বড় সমস্য।”
দেশের প্রধান বিমানবন্দর শাহজালালের দুটি টার্মিনালে এখন প্রতিদিন ৩০-৩৫ হাজার যাত্রী সেবা পাচ্ছে। এ হিসাবে বিমানবন্দরটি বছরে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেয়। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) তথ্য অনুযায়ী, তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে বছরে অতিরিক্ত ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।
২০১৭ সালে শাহজালাল বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। তখন বলা হচ্ছিল, এই তৃতীয় টার্মিনাল চালুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ‘যোগাযোগের নতুন যুগের সূচনা হবে’।
প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর। ব্যয় ধরা হয় প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর তৃতীয় টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় টার্মিনালের প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছিল। বেবিচক তখন জানিয়েছিল, ২০২৪ সালেই পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু হবে থার্ড টার্মিনালের। কিন্তু তা আর হয়নি।
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে, সে অভিযোগের অনুসন্ধানও শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানিয়েছেন, আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই তৃতীয় টার্মিনাল চালু হবে।
তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়নের উপযোগিতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “অনেক আগে যখন বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের প্রস্তাব করা হয়েছিল, তখন মনে করা হয়েছিল যে এতো বড় টার্মিনাল দিয়ে কী হবে।
“অথচ তৃতীয় টার্মিনাল শুরু হওয়ার আগেই অনেকগুলো নতুন এয়ারলাইন্স আমাদের এখানে আসতে চাচ্ছে। এটা একটা হাব হওয়ার প্রচুর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আর দুই তিন মাস পরে এটা চালু হওয়ার সাথে সাথে পুরা ব্যবহার হয়ে যাবে।”
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, “কাজেই তখন আবার প্রশ্ন উঠবে যে আরেকটা বিমানবন্দর লাগবে। অন্তত আরেকটা ল্যান্ডিং স্ট্রিট লাগবে। ঢাকার যে ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম সেখানেও একই ব্যাপার। আমরা যখন একটা মেগা প্রকল্পের কথা বলি তখন সেটা শেষ হতে হতে সেটাও প্রয়োজনের তুলনায় কম হয়ে যাচ্ছে।”
চীনা অর্থায়নে মোংলা বন্দরের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান পরিকল্পনা উপদেষ্টা।