দুর্ঘটনা মোকাবেলায় এবং বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম বিমানটিকে ঘনবসতি এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
সোমবার বিকালে আইএসপিআরের এক বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে, এই আকস্মিক দুর্ঘটনায় পাইলটসহ ১৯ জন নিহত এবং ১৬৪ জন আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনে বিমানবাহিনীর একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বিমানবাহিনীর একটি নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে সোমবার (২১-৭-২০২৫) বেলা ১ টা ৬ মিনিটে ঢাকার কুর্মিটোলাস্থ বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ঘাঁটি এ কে খন্দকার থেকে উড্ডয়নের পর যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হয় (যার বিস্তারিত তদন্ত সাপেক্ষে জানানো হবে)।
“দুর্ঘটনা মোকাবেলায় এবং বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বিমানের বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম বিমানটিকে ঘনবসতি থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিমানটি ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের দোতালা একটি ভবনে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়েছে।”
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এই আকস্মিক দুর্ঘটনায় বৈমানিকসহ ১৯ জন নিহত এবং ১৬৪ জন আহত হয়েছেন। আহত সকলকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারসহ অ্যাম্বুলেন্সের সহায়তায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) ও নিকটস্থ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য দ্রুত স্থানান্তর করা হচ্ছে।
আইএসপিআর জানিয়েছে, উক্ত অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনী গভীরভাবে মর্মাহত এবং হতাহতদের সর্বাত্মক চিকিৎসাসহ সার্বিক সহযোগিতায় তৎপর রয়েছে। বিমানবাহিনী প্রধান সরকারি সফরে দেশের বাইরে থাকায়, সহকারী বিমানবাহিনী প্রধান (প্রশাসন), বিমানবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ ও উদ্ধারকারী দল দুর্ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছেন।
সেনাবাহিনী প্রধান, প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগসহ সামরিক বাহিনীর এবং ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ, র্যাব এবং ফায়ার সার্ভিস দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে এবং পরিস্থিতি উত্তরণের সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। উক্ত দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনের জন্য ইতোমধ্যে বিমান বাহিনীর একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাসের একটি ভবনের ওপর বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পেয়েই ছুটে যায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর আগুন ধরে যাওয়ার ছবি-ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় আসে। তাতে মাইলস্টোন কলেজের একটি ভবন এবং তার সংলগ্ন প্রাঙ্গণে আগুন জ্বলতে দেখা যায়।
মাইলস্টোনের এক শিক্ষক সেখানে সাংবাদিকদের বলেন, স্কুলের দোতলা ভবনের প্রবেশ মুখে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায়। তখন স্কুল ছুটি হয়ে গেলেও অনেক শিক্ষার্থী ভেতরেই ছিল। স্কুল ছুটির পর কোচিং চলছিল বলে জানান অনেক অভিভাবক। তারা উদ্বিগ্ন হয়ে সন্তানের খোঁজ করছিলেন।
নিহতদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। তবে দুর্ঘটনার পরপরই এক শিক্ষার্থীর লাশ আসার খবর সকাল সন্ধ্যাকে জানিয়েছিলেন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও শোক জানিয়েছেন।