Beta
বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫
Beta
বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

সোনার ভরি এক লাফে ৮৯০০ টাকা বাড়ল, ফের ২ লাখ ছাড়াল

alter-gold-market
[publishpress_authors_box]

এবার বাড়ল সোনর দাম। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) সোনার দাম এক লাফে ভরিতে ৮ হাজার ৯০০ টাকা বাড়িয়েছে দেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। আর তাতে ভরি ফের ২ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে।

এর আগে দেশে কখনই একবারে এতটা বাড়েনো হয়নি মূল্যবান এই ধাতুর দর।

রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ২০ অক্টোবর দেশের বাজারে ২২ ক্যারেট মানের সোনার ভরি ২ লাখ ১৭ হাজার ৩৮২ টাকায় উঠেছিল। এর আগে কখনই সোনার দর অত উচ্চতায় ওঠেনি।

এর পর চার দফায় সাড়ে ২৩ হাজার টাকা কমে ভরি ১ লাখ ৯৩ হাজার ৮০৯ টাকায় নেমে এসেছিল।

বুধবার রাতে ফের সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাজুস। আর তাতেই ভরি আবার ২ লাখ টাকা অতিক্রম করেছে।

বিশ্ববাজারে দাম বাড়ায় দেশের বাজারেও সোনার দাম আবার বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। অন্যান্য মনের সোনার দুর প্রায় একই হারে বাড়ানো হয়েছে।

মঙ্গলবার রাতে ২২ ক্যারেট মানের সোনার দাম ভরিতে ১০ হাজার ৪৭৪ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। এর আগে দেশে কখনই একবারে সোনার দাম এতটা কমানো হয়নি। আর তাতেই এক ধাক্কায় ভরি নেমেছিল ১ লাখ ৯৩ হাজার ৮০৯ টাকায়। বুধবার দেশে এই দরে বিক্রি হয় সোনা।

এর আগে পর পর দুই দিন সোম ও মঙ্গলবারও সোনার দাম কমানো হয়। এই তিন দিনে ভরিতে কমে ১৫ হাজার ১৮৬ টাকা। তর আগে ২২ অক্টোবর কমানো হয় ৮ হাজার ৩৮৬ টাকা।

সব মিলিয়ে ছয় দিনের ব্যবধানে চার দফায় কমেছিল ২৩ হাজার ৫৭২ টাকা।

কিছুদিন আগে লাফিয়ে লাফিয়ে যে গতিতে বেড়েছিল, সেই একই গতিতে কমছিল সোনার দর। এখন আবার চড়ছে।

ইতিহাস গড়ে ২০ অক্টোবর দেশের বাজারে ২২ ক্যারেট মানের সোনার ভরি ২ লাখ ১৭ হাজার ৩৮২ টাকায় উঠেছিল।

দুই দিন পর ২২ অক্টোবর এক ধাক্কায় এই মানের সোনার দর ভরিতে ৮ হাজার ৩৮৬ টাকা কমায় বাজুস; ভরি নামে ২ লাখ ৮ হাজার ৯৯৫ টাকায়। ২৩ অক্টোবর থেকে এই দরে বিক্রি হয় সোনা।

তিন দিনের মাথায় চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার (২৬ অক্টোবর) এই সোনার দাম ভরিতে আরও এক হাজার ৩৮ টাকা কমানো হয়; ভরি নামে ২ লাখ ৭ হাজার ৯৫৮ টাকায়। সোমবার (২৭ অক্টোবর) এই দরে বিক্রি হয়। ওইদিন রাতে আরও ৩ হাজার ৬৭৪ টাকা কমানো হয়; ভরি নামে ২ লাখ ৪ হাজার ২৮৩ টাকায়। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সারা দেশে এই দরে বিক্রি হয়। 

২৪ ঘণ্টা না যেতেই আরেক দফা কমানো হয়। এ দফায় কমানো হয় ভরিতে ১০ হাজার ৪৭৪ টাকা। আর এতেই ভরি ২ লাখ টাকার নিচে নেমেছিল।

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ায় দেশের বাজারেও সোনার দাম বাড়িয়েছিল বাজুস। আগস্টের মাঝমাঝি সময় থেকে বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়া শুরু হয়। তার সঙ্গে সমন্বয় করে দেশের বাজারেও দাম বাড়িয়ে চলে বাজুস। এই আড়াই মাসে দু-এক বার ছাড়া প্রতিবারই দাম বাড়ানো হয়।

সবশেষ দাম বাড়ানো হয় ১৯ অক্টোবর। এর পর পাঁচ দফা সমন্বয় করা হয়েছে; এর মধ্যে চার বার কমানো হয়েছে; বাড়ানো হলো একবার।

এর আগে দেশের বাজারে সোনার দাম কমানো হয়েছিল ২৭ সেপ্টেম্বর; সেদিন ২২ ক্যারেট মানের সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ৮৯০ টাকা কমানো হয়।

১৯ অক্টোবরের আগে ১৪ অক্টোবর ২২ ক্যারেট মানের সোনার দর ভরিতে ২ হাজার ৬১৩ টাকা বাড়ায় বাজুস; ভরি ওঠে ২ লাখ ১৬ হাজার ৩৩২ টাকায়। ১৫ অক্টোবর সারা দেশে এই দরে বিক্রি হয় সোনা।

তার একদিন আগে ১৩ অক্টোবর ৪ হাজার ৬১৯ টাকা বাড়ানো হয়; ভরি ওঠেছিল ২ লাখ ১৩ হাজার ৭১৯ টাকায়। ১৪ অক্টোবর ওই দরে বিক্রি হয় সোনার গহনা বা অলঙ্কার।

তার পাঁচ দিন আগে ৮ অক্টোবর ৬ হাজার ৯০৫ টাকা বাড়ানো হয়; ভরি উঠেছিল ২ লাখ ৯ হাজার ১০০ টাকায়। তার একদিন আগে ৭ অক্টোবর ১ হাজার ৪৭০ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। ৮ অক্টোবর ২ লাখ ২ হাজার ১৯৫ টাকা ভরিতে বিক্রি হয়।

৬ অক্টোবর ২২ ক্যারেট সোনার দাম ভরিতে ৩ হাজার ১৪৯ টাকা বাড়ানো হয়। ভরি ২ লাখ টাকার মাইলফলক ছাড়িয়ে ২ লাখ ৭২৬ টাকায় ওঠে।

তার দুই দিন আগে ৪ অক্টোবর বাড়ানো হয় ভরিতে ২ হাজার ১৯৩ টাকা বাড়ানো হয়; ভরি ওঠে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৫৭৬ টাকায়।

২৯ সেপ্টেম্বর বাড়ানো হয় ২ হাজার ৪১৪ টাকা বাড়ানো হয়; ভরি ওঠে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৩৮৪ টাকায়।

তার আগে কয়েক দফা বাড়ানোয় দেশের বাজারে সোনার ভরি রেকর্ড গড়ার পর ২৭ সেপ্টেম্বর ভরিতে ১ হাজার ৮৯০ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। এতে ভরি নামে ১ লাখ ৯২ হাজার ৯৬৯ টাকায়।

২৩ সেপ্টেম্বর এই মানের সোনার দাম ভরিতে ৩ হাজার ৬৬২ টাকা বাড়ানো হয়েছিল।

তার আগে টানা আট দফায় সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) সোনার ভরি ১৮ হাজার টাকার বেশি বাড়ানোর পর ১৭ সেপ্টেম্বর ১ হাজার ৪৭০ টাকা কমিয়েছিল বাজুস।

১৮ সেপ্টেম্বর থেকে এই মানের সোনা ১ লাখ ৮৮ হাজার ১৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। দুই দিন না যেতেই ২০ সেপ্টেম্বর সোনার দাম ফের বাড়ানো হয়; ভরিতে বাড়ে ১ হাজার ১৫০ টাকা।

২১ সেপ্টেম্বর ২২ ক্যারেটের প্রতিভরি সোনা ১ লাখ ৮৯ হাজার ৩০৭ টাকায় বিক্রি হয়। একদিন পর ২২ সেপ্টেম্বর আরও ১ হাজার ৮৯০ টাকা বাড়ানো হয়।

১ সেপ্টেম্বর ২২ ক্যারেট সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ৪৭০ টাকা বাড়ানো হয়। ৩ সেপ্টেম্বর বাড়ানো হয় ৩ হাজার ৪৪ টাকা।

তার আগে গত ৩০ আগস্ট ভরিতে ১ হাজার ৬৬৮ টাকা বাড়ানো হয়। ২৬ আগস্ট বাড়ানো হয়েছিল ১ হাজার ৫০ টাকা।

এর আগে প্রায় এক মাস দেশের বাজারে মূল্যবান এই ধাতুর দাম একই জায়গায় স্থির ছিল।

বাজুসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর মাস জুড়ে অস্থির ছিল দেশের সোনার বাজার। পুরো মাসে মোট ১২ বার দাম সমন্বয় করা হয়। এর মধ্যে ১০ বারই বাড়ানো হয়, কমে মাত্র দুইবার।

সেপ্টেম্বর মাসে ২২ ক্যারেট মানের প্রতিভরি সোনার দাম বাড়ে ২১ হাজার ৬৬ টাকা।

সেই উল্লম্ফন মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত চলে। এই মাসে টানা সাত দফায় ২২ ক্যারেট মানের সোনর দাম ভরিতে ২১ হাজার ৯৯৭ টাকা বেড়েছিল; ছয় দিনের ব্যবধানে চার দফায় কমেছিল সাড়ে ২৩ হাজার টাকা।

চলতি বছর (২০২৫ সাল) এখন পর্যন্ত মোট ৭১ বার সোনার দাম সমন্বয় করেছে বাজুস। এর মধ্যে ৪৯ বার বেড়েছে, আর কমেছে ২২ বার।

গত বছর (২০২৪ সাল) পুরো সময়ে দাম সমন্বয় হয়েছিল ৬২ বার।

গত ২০ আগস্ট থেকে বিশ্ববাজারে সোনার দাম টানা বাড়ছিল। সেই দামের সঙ্গে সমন্বয় করে বাজুসও দেশের বাজারে এই ধাতুর দাম বাড়িয়ে চলেছে। মাঝে দুই দিন নিম্মমুখী হওয়ায় দেশের বাজারেও কিছুটা কমানো হয়।

বাজুস সাধারণত রাত সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার দিকে সোনার দাম বাড়ানো-কমানোর ঘোষণা দিয়ে থাকে। পরের দিন থেকে সারা দেশে সেই দরে সোনা বিক্রি হয়।

তবে মাঝে-মধ্যে দিনে দুই বারও সোনার দাম বাড়ানো-কমানোর ঘোষণা দিয়ে থাকে সংগঠনটি।

মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। দাম বাড়ানোর ব্যাখ্যায় সংগঠনটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাজুসের নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার থেকে দেশের বাজারে হলমার্ক করা এক গ্রাম ২২ ক্যারেট মানের সোনা ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় বিক্রি হবে। ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রামে এক ভরি হিসাবে প্রতিভরি বিক্রি হবে ২ লাখ ২ হাজার ৭০৯ টাকায়। ২১ ক্যারেটের এক ভরি কিনতে লাগবে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৫০৬ টাকা।

১৮ ক্যারেটের ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮৭২ টাকায় এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি সোনা ১ লাখ ৩৭ হাজার ৮৪৫ টাকায় বিক্রি হবে।

বুধবার দেশের বাজারে ২২ ক্যারেট মানের প্রতিভরি সোনা ১ লাখ ৯৩ হাজার ৮০৯ টাকায় বিক্রি হয়। ২১ ক্যারেটের বিক্রি হয় ১ লাখ ৮৫ হাজার ২ টাকায়।

এছাড়া ১৮ ক্যারেটের ১ লাখ ৫৮ হাজার ৫৭২ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি সোনা ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২৮ টাকায় বিক্রি হয়।

হিসাব বলছে, এক দিনের ব্যবধানে প্রতিভরি ২২ ক্যারেটের সোনার দাম বাড়ছে ৮ হাজার ৯০০ টাকা। ২১ ক্যারেটের বাড়ছে ৮ হাজার ৫০৩ টাকা।

এছাড়া ১৮ ক্যারেটে ৭ হাজার ২৯০ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি সোনার দাম বাড়ছে ৬ হাজার ২৭৭ টাকা।

বিশ্ববাজারেও বেড়েছে

বিশ্ববাজারেও সোনার দর বেড়েছে। রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ে গত ২০ অক্টোবর অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে প্রতি আউন্সের (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) দাম ৪ হাজার ৩৫০ ডলারে উঠেছিল।

সপ্তাহ ধরে তা কমতে কমতে ৪ হাজার ডলারের নিচে নেমে এসেছিল। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় বিশ্ববাজারে প্রতি অউন্স সোনার দাম ৪১ ডলার ৪৩ সেন্ট কমে ৩ হাজার ৯৬৩ ডলার ৯৫ সেন্টে নেমেছিল। শতাংশ হিসাবে কমেছিল ১ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ।

বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় বিশ্ববাজারে প্রতি অউন্স সোনার দাম ২৭ ডলার ২ সেন্ট বেড়ে ৩ হাজার ৯৯৪ ডলার ৪৩ সেন্টে উটেছে। শতাংশ হিসাবে বেড়েছে দশমিক ৬৮ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করার পর সোনার দাম হু হু করে বাড়ছিল। ২২ এপ্রিল প্রতি আউন্স সোনার দাম ৩ হাজার ৫০০ ডলার ছাড়ায়।

এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দর ৩ হাজার ৫০০ ডলারের নিচে লেনদেন হচ্ছিল। আগস্টের মাঝামাঝি সময় থেকে বাড়ছিল মূল্যবান এই ধাতুর দর।

এরপর তা নিম্মমুখী হয়েছিল; এখন ফের চড়ছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত