রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানে সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেত্রী শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাসহ পাঁচজন আটক হওয়ার পর এ ঘটনা ঘিরে ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছেন সংগঠনটির সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা।
আটককৃতদের ছবি সংবলিত একটি সংবাদের কার্ড গতকাল শনিবার রাতে শেয়ার করে জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা উমামা ফাতেমা তার পোস্টে বলেছেন, এ ঘটনায় অনেকে আশচর্য হওয়ার অভিনয় করলেও তিনিই সবচেয়ে কম আশ্চর্য হয়েছেন। ঠিকমতো খোঁজ নিলে বোঝা যাবে, তাদের শেকড় অনেক গভীরে।
বাম সংগঠন ছাত্র ফেডারেশনের এক সময়ের নেতা উমামা ফাতেমা গত বছর জুলাইয়ে গণঅভ্যুত্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি প্লাটফর্মটির মুখপাত্র হলেও গত ২৭ জুন সে পদ থেকে সরে দাঁড়ান।
সেদিন ফেইসবুকে এক পোস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কাউন্সিল ও কার্যক্রম নিয়ে নানা অভিযোগ জানিয়ে উমামা ফাতেমা লিখেছিলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর সঙ্গে আমার আনুষ্ঠানিক যাত্রা এখানেই শেষ হলো।”
বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, গতকাল শনিবার রাতে রাজধানীর গুলশানে আওয়ামী লীগ নেত্রী শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। তারা হলেন- ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, মো. সাকাদাউন সিয়াম, সাদাব, আমিনুল ইসলাম ও আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ।
বিডিনিউজ জানিয়েছে, তাদের মধ্যে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিয়াদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম আহ্বায়কদের একজন। এ ঘটনার পর সংগঠনটির ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, সদস্য মো. সাকাদাউন সিয়াম ও সাদাবকে স্থায়ীভাবে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এ ঘটনা নিয়ে শনিবার রাতে দেওয়া ফেইসবুক পোস্টে উমামা ফাতেমা লিখেছেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ৫ জনের চাঁদাবাজির খবর শুনে আমার পরিচিত ব্যক্তিবর্গ এতটাই আশ্বার্যান্বিত হওয়ার অভিনয় করছেন যে আমার মনে হচ্ছে আমিই সবথেকে কম আশ্বর্য হয়েছি। এই ছেলেগুলাকে তো নেতাদের পেছনে প্রটোকল দিতে দেখা গেছে এতদিন যাবৎ।
“সচিবালয় থেকে শুরু করে মিছিল-মিটিং, মারামারি সব জায়গাতেই সমন্বয়কদের ডান হাত, বাম হাত হিসেবে নির্বিঘ্নে প্রটোকল দিয়ে গেছে। গুলশান বনানী গ্যাং কালচারের অজস্র অভিযোগ অভ্যন্তরীনভাবে তাদের বিরুদ্ধে ছিল।”
এই ছবির রিয়াদ নামের ছেলেটা গত ডিসেম্বর মাসে রূপায়ন টাওয়ারে তার সামনে অত্যন্ত উশৃঙ্খল আচরণ করেছিল অভিযোগ করে উমামা ফাতেমা লিখেছেন, “আমরা মেয়েরা তাকে থামানোর চেষ্টা করলে আমাদের উপর পাল্টা চড়াও হয়। ঐ ঘটনার পর ছেলেটার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে হুমকি, মারামারি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে।
“আমি জেনে তখন মোটেও অবাক হইনি, কারণ ততদিনে বৈষম্যবিরোধীতে এই ধরনের মানুষজনের আনাগোনাই সর্বোত্র টের পাওয়া যেত। ঠিকই তারা রূপায়ন টাওয়ারে অবাধে আসা যাওয়া করত। কারো দুর্নীতি বা অসততার ব্যাপারে অভিযোগ জানালে উত্তরে পিনড্রপ সাইলেন্স উপহার পেতে হবে। আর আমি চোখের সামনে দেখতাম এসব লোকজনই কিভাবে দিনেশেষে এক্সেস করে নেয়। আজকে এতমাস পর এই প্ল্যাটফর্মের দিকে তাকালে বলার ভাষা পাইনা কোনো?! যে যেভাবে পারছে এই প্ল্যাটফর্মকে নষ্ট করেছে।”
তিনি লিখেছেন, “আজকের এই চাঁদাবাজির খবর দেখে আশপাশের সবাই এত অবাক হওয়ার ভান করছেন বিষয়টা কিছুটা হাস্যকর বটে :v
“ইশ! মানুষ কত নিঃষ্পাপ! সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর মতো তারা আবিষ্কার করেছেন এই ছেলেগুলো আজ কিভাবে চাঁদাবাজি করল?! অত্যন্ত দুঃখিত বন্ধুরা, বলতে হবে এই প্রথম কোনো চাঁদাবাজি করতে গিয়ে তারা পুলিশের হাতে ধরা খেল। ঠিকমতো খোঁজ নিলে বুঝবেন, এদের শেকড় অনেক গভীরে।”
