গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এবার গুমের দুই মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
প্রথম আলো জানিয়েছে, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার তো চলছেই, এবার গুমের মামলায়ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলো।
আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনকালে গুমের মাধ্যমে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের আলাদা দুটি মামলায় বুধবার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন এই ট্রাইব্যুনালে সদস্য রয়েছেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
উভয় মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২৮ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক রয়েছেন। বাকি আসামিদের অধিকাংশই সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তা।
গতঅভ্যুত্থানে গত বছর শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। তিনি পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন, এখনও সেখানেই রয়েছেন। তার সরকারের মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও রয়েছেন ভারতে। শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার দেবর তারিক সিদ্দিকও বিদেশে রয়েছেন।
অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনার শাসনামলে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে এ আদালত সচল করে।
এরপর জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয় গত আগস্ট মাসে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে পলাতক দেখিয়ে চলছে সেই মামলার বিচার। সেই মামলায় শেখ হাসিনার সঙ্গে আসামি হিসেবে আসাদুজ্জামান খান ছাড়াও রয়েছেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তবে আল-মামুন পরে অ্যাপ্রুভার বা রাজসাক্ষী হয়েছেন।
গুমের পাশাপাশি ২০১৩ সালে ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ ঘিরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেই হবে।
বুধবার ট্রাইব্যুনালে গুমের দুটি মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ)। পরে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম দুটি অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেন এবং তা আমলে নিয়ে পরোয়ানা জারির আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তার আবেদন মঞ্জুর করেন।
এদিন সকালে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম সাংবাদিকদের জানান, গুমের একটি মামলায় শেখ হাসিনা, তার প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। এতে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই মামলায় শেখ হাসিনার সঙ্গে আসাদুজ্জামান খান ও তারিক আহমেদ সিদ্দিক ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক এম খুরশিদ হোসেন, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক মো. হারুন-অর-রশিদ, র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) কর্নেল কে এম আজাদ, র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, র্যাবের সাবেক পরিচালক (ইন্টেলিজেন্স উইং) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম, র্যাবের সাবেক পরিচালক (ইন্টেলিজেন্স উইং) লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মাদ খায়রুল ইসলাম, র্যাবের সাবেক পরিচালক (ইন্টেলিজেন্স উইং) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান জুয়েল এবং র্যাবের সাবেক পরিচালক (ইন্টেলিজেন্স উইং) লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন।
দ্বিতীয় মামলায় শেখ হাসিনা, তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ আসামি ১৩ জন। এই মামলায়ও পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলায় শেখ হাসিনা ও তারিক সিদ্দিকের সঙ্গে অন্য আসামিরা হলেন ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. আকবর হোসেন, ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আবেদিন, ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী, ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক, ডিজিএফআইয়ের সিটিআইবির সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ তৌহিদুল উল ইসলাম, ডিজিএফআইয়ের সিটিআইবির সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ডিজিএফআইয়ের সিটিআইবির সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ, ডিজিএফআইয়ের সিটিআইবির সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ডিজিএফআইয়ের সিটিআইবির সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মখছুরুল হক।