গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
বুধবার দুপুর থেকে কয়েক ঘণ্টার ওই সহিংসতার পর বিকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে একথা জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, “গোপালগঞ্জে আজ যে সহিংসতা করা হয়েছে, তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। গণ অভ্যুত্থান আন্দোলনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে তরুণ নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা দিয়ে মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। এনসিপি, পুলিশ ও গণমাধ্যমের সদস্যদের ওপর নিষ্ঠুর আক্রমণ চালানো হয়েছে, তাদের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।”
বিনা বিচারে দোষীদের ছাড়া হবে না জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের এই জঘন্য কর্মকাণ্ড বিনা বিচারে ছেড়ে দেওয়া হবে না। দায়ীদের দ্রুত চিহ্নিত করে বিচার নিশ্চিত করা হবে। বাংলাদেশে কোনও নাগরিকের ওপর এমন সহিংসতার কোনও স্থান নেই।”
এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ায় সেনাবাহিনী এবং পুলিশের প্রশংসা করা হয়েছে বিবৃতিতে। এছাড়া হুমকির পরও সমাবেশ চালিয়ে যাওয়ায় কর্মসূচির আয়োজকদের প্রশংসা করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, “এই সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। আরও পরিস্কার করে বলতে চাই, আমাদের দেশে সহিংসতার কোনও স্থান নেই। ন্যায়বিচার অবশ্যই নিশ্চিত করা হবে।”

যে অভ্যুত্থানে গত বছর শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে, তাতে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল এনসিপি গত ১ জুলাই উত্তরাঞ্চল থেকে পদযাত্রা শুরু করে। ষোড়শ দিনে গোপালগঞ্জে আসার পর প্রথম হামলার মুখে পড়ে তারা।
এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা পৌঁছার আগে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উলপুর-দুর্গাপুর সড়কের খাটিয়াগড় চরপাড়ায় পুলিশের গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।
এরপর বেলা পৌনে ২টার দিকে ২০০ থেকে ৩০০ লোক ‘জয় বাংলা স্লোগান’ দিয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে পৌর পার্কে এনসিপির সমাবেশস্থলে হামলা চালায়।
পুলিশ ও এনসিপির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের ধাওয়ায় তা পিছু হটার পর পদযাত্রা পৌঁছায় গোপালগঞ্জে। পৌর পার্কে সমাবেশও করেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
সমাবেশ শেষে এনসিপির গাড়িবহর রওনা হওয়া পরপরই আবার পৌর পার্কে হামলা হয়। হামলাকারীরা সমাবেশের মঞ্চ ভাংচুরের পর আগুন ধরিয়ে দেয়।
এনসিপির গাড়িবহর গোপালগঞ্জ ছেড়ে মাদারীপুরে রওনা হওয়ার সময় শহরের লঞ্চ ঘাট এলাকায় গোপালগঞ্জ সরকারি কলেজের সামনে ব্যাপক হামলার মুখে পড়ে। তখন র্যাব-পুলিশের পাহারায় এনসিপি নেতাদের গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
অন্যদিকে পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে হামলাকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষে গোপালগঞ্জ শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হলে ১৪৪ ধারা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন। এরই মাঝে এনসিপি নেতারা গোপালগঞ্জ ছাড়েন।
সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যানে করে এনসিপির নেতাদের উদ্ধারের একটি ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় এসেছে। সেখানে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমসহ অন্যদের উঠতে দেখা গেছে।
দিনভর দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত চারজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনার পর বুধবার রাত ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জ জেলায় কারফিউ জারি করা হয়েছে।



