দুই বন্ধু শেখ সাদী ও তাওসিফ কিশোরগঞ্জ থেকে ভোরের ট্রেনে রওয়ানা দিয়ে ঢাকায় পৌঁছেছেন দুপুরে। কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে সোজা চলে এসেছেন ঢাকা স্টেডিয়ামে।
সাকিব হাসান সৌরভ নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টেডিয়ামে এসেছেন সকাল সাড়ে সাতটায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ৫ জনের দল নিয়ে এসেছেন পরশ হোসেন। ভোর ৫টায় ঢাকায় পৌছেছেন সবাই। সোমবার রাতে চাঁদপুর থেকে ঢাকা এসেছেন সাইদুল ইসলাম রিফাত। এদের মতো হাজার হাজার দর্শকের উত্তাপের আঁচ লেগেছে ঢাকা স্টেডিয়ামে।
এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাই ম্যাচে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় সিঙ্গাপুরের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। যে ম্যাচকে ঘিরেই এত উন্মাদনা দর্শকের।
সত্যি বলতে, ঢাকা স্টেডিয়ামের এমন আবহ কালেভদ্রে দেখা মেলে। ঘরোয়া ফুটবলে কোটি টাকার সুপার কাপের ফাইনালে একবার স্টেডিয়ামের গ্যালারি উপচে পড়েছিল। সেটাও ১৪ বছর আগের কথা। সুপার কাপের ওই ফাইনাল ছিল ২০১১ সালের ৬ আগস্টে। এরপর লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাও ২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বরে নাইজেরিয়ার সঙ্গে খেলেছিল ঢাকা স্টেডিয়ামে। তখনও এমনই ভীড় ছিল স্টেডিয়ামে।
সন্ধ্যা ৭টায় খেলা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও স্টেডিয়ামে দুপুর ১২টা থেকেই দর্শকের চাপ। দৈনিক বাংলা থেকে শুরু করে পল্টন মোড় হয়ে হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামের আশপাশসহ বিভিন্ন জায়গায় হামজা চৌধুরী, জামাল ভূঁইয়া, ফাহমিদুল ইসলামদের কাট আউট। এসব কাট আউটের সামনে দেখা গেল সমানে সেলফি তুলছেন দর্শকেরা।
স্টেডিয়ামে পা রেখে মনে হচ্ছিল যেন বিশ্বকাপের কোনও ম্যাচ শুরু হবে। বেশিরভাগ দর্শকের হাতে বাংলাদেশের পতাকা। গায়ে বাংলাদেশের জার্সি। এক দর্শক তো বলেই দিলেন, মনে হচ্ছে বাংলাদেশ বিশ্বকাপে খেলছে।
২টায় গেট খোলার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত গেট খোলা হয় আড়াইটার পরে। এতেই অধৈর্য্য হয়ে ওঠে দর্শকেরা।
কেরানিগঞ্জ থেকে ফুটবল ম্যাচ দেখতে আসা শাকিলা বললেন, “প্রথমবার ঢাকা স্টেডিয়ামে খেলা দেখব বলে রোমাঞ্চিত।”
কিশোরগঞ্জ থেকে আসা শেখ সাদী ও তাওসিফ বলেন, “এর আগে বসুন্ধরা কিংসে ফুটবল ম্যাচ দেখেছি। কিন্তু এখানে প্রথমবার দেখব। আমার চোখে বাংলাদেশ অবশ্যই ফেবারিট। যেহেতু হামজা, শমিত সোম ও ফাহমিদুল দলে রয়েছে এই দল যথেষ্ট শক্তিশালী। আমরাই জিতব ইনশাল্লাহ। ”
স্টেডিয়ামের পাশের রাস্তায় জার্সির শো রুম দিয়েছে স্পনসর প্রতিষ্ঠান দৌড়। তাদের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা জার্সি বিক্রিতে প্রচুর সাড়া পাচ্ছি। এখানে অরিজিনাল জার্সি ৭০০ ও ১৪০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। সাইজ অ্যাভেলেবেল। সত্যি বলতে আমাদের নিজের দেশের জার্সি বিক্রি করতে খুব প্রাউড ফিল করছি। অনলাইনে আমরা হামজার জার্সি বেশি বিক্রি করছি।”
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ৫ জনের দল নিয়ে আসা পরশ হোসেন বলেন, “ জীবনে প্রথম ঢাকা স্টেডিয়ামে খেলা দেখব। আমি শুধু হামজা চৌধুরীরর জন্যই এসেছি।” গোলের সময় স্মোক ফ্লেয়ার ওড়াতে চান তিনি। এজন্য সঙ্গে এনেছেন স্মোক ফ্লেয়ারের বান্ডিল।
আবদুল হান্নান নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছেন ৯ জনের দল নিয়ে। সঙ্গে বন্ধু ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রী এসেছেন। হান্নান হামজার কাছ থেকে গোল চান, “গত ম্যাচে ভুটানের সঙ্গে হেডে গোল করেছেন হামজা। এবারও হামজা গোল পাবেন।”
মাথায় হামজার মতো নকল চুল পরে হাটছিলেন যশোরের ইমরান। তিনিও হামজার পায়ে গোল দেখতে চান।
গাজীপুরের সুমনের হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে লেখা, “কোটি মানুষের প্রাণের সুর। বাংলার ফুটবল ফিরে আসুক।” তিনিও বাংলাদেশের জয় দেখতে চান
নারায়ণগঞ্জের যুবক সৌরভের হাতে লেখা, “হামজা, শমিত, ফাহমিদুল। গোল দিতে করিও না ভুল।” প্রথমবার ঢাকা স্টেডিয়ামে খেলা দেখবেন বলে রোমাঞ্চিত নারায়ণগঞ্জের যুবক।
তিনি বলেন, “এতদিন টিভিতে ব্রাজিল আর্জেন্টিনার খেলা দেখেছি। ওটা দেখেই অনেক খুশি থাকতাম। কিন্তু এখন নিজের দেশের খেলা মাঠে বসে দেখব “
চাঁদপুরের রিফাতের হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে লেখা, “হামজা, ফাহমিদুল, সোম, থ্যাঙ্কস ফর কামিং হোম।“ তার আশা এদের কেউ গোল দেবে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে।
মুন্সিগঞ্জের জাহিদ তো বলেই দিলেন, ফাহমিদুল গোল করলে বান্ধবীকে প্রেমের প্রস্তাব দেবেন তিনি।
ম্যাচ শুরুর ঘন্টা চারেক আগেও এসব দর্শকের আবেগ দেখে মনে হচ্ছিল, এটা যেন ঢাকা নয় ইউরোপের কোনও স্টেডিয়াম। আর এটা এশিয়ান কাপ বাছাই নয়, বাংলাদেশ যেন বিশ্বকাপে খেলছে।