আট বছর পাকিস্তানে শরণার্থী জীবন ছিল নবাব দীনের। চার মাস আগে আফগানিস্তানের পূর্ব কুনার প্রদেশের ওয়াদির গ্রামে ফিরে আসেন তিনি।
কিন্তু এখন তাকে আবার নিজের জমিতে একটি তাঁবুতে বাস করতে হচ্ছে। কারণ প্রায় তিন সপ্তাহ আগে হওয়া এক ভূমিকম্পে এই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
৫৫ বছর বয়সী নবাব দীন বসেছিলেন তার চাচার দোকানে। সেখানে বসে তিনি বলেন, “এখন তাঁবুতে বাস করছি। আমাদের পুরানো বাড়িগুলো আর নেই। সবগুলো পাহাড় থেকে আসা বড় বড় পাথরের নিচে চাপা পড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে।”
নবাব দীনের কাহিনী অনেক আফগানের জীবনের দ্বৈত দুর্যোগের প্রতিচ্ছবি। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে পাকিস্তান ও ইরান থেকে দেশে ফিরে এসেছেন ৪০ লাখ মানুষের একজন।
এরপরই গত ৩১ আগস্টের ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে আফগানিস্তানে। তাতে প্রাণ হারায় প্রায় ২২০০ মানুষ। ধ্বংস হয় পাঁচ হাজারের বেশি বাড়ি। এতে দেশটিতে চলমান অর্থনৈতিক সংকটের উপর আরও একটি আঘাত এসেছে।
নবাব দীন বললেন, “পাকিস্তানে কাজ করে আমরা যা কিছু পেয়েছিলাম সব হারিয়েছি, এখন এখানে আবার সব হারিয়ে ফেললাম।”
আইএসআইএলে যোগ না দেওয়ায় আট বছর আগে পাকিস্তানে নির্বাসনে পাঠানো হয় নবাব দীনকে। পাকিস্তান সরকার অবৈধ বিদেশিদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান শুরু করলে চলতি বছর তার নির্বাসন শেষ হয়।
নবাব দীন বলেন, ‘পুলিশ আমাদের বাড়ি তল্লাশি করে, আমাকে এবং আমার পরিবারকে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। তারা আমাদের আফগান সীমান্তে ফেরত পাঠানোর জন্য নিবন্ধন করে।”
কুনারের কাছেরই আরেক গ্রাম বারাবাতেও একই পরিস্থিতি। ৫৮ বছর বয়সী সাদাত খান পাকিস্তান থেকে ফিরে আসেন শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় এবং কাজ না পাওয়ার কারণে। এখন ভূমিকম্পে তার ভাড়া বাড়িও ধ্বংস।
তিনি বলেন, “আমি পাকিস্তানেও গরীব ছিলাম। পরিবারে আমিই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। স্ত্রী ও সাত সন্তান আমার ওপর নির্ভরশীল। এখন কোথা থেকে পরেরবারের খাবার পাবো জানি না। এখানে কাজ নেই। আমার ফুসফুসের সমস্যা আছে, বেশি কাজ করতে পারি না।”
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁবু চেয়েছিলেন তিনি, সেটার কোনও জবাব পাননি।
ভূমিকম্পই একমাত্র সংকট নয়। নবাব দীন বলেন, “আমাদের জমি শুকনো, কাছেধারে কোনও নদী নেই। বর্ষার উপর নির্ভরশীল এখানকার কৃষি, কিন্তু এবার বৃষ্টি কম হয়েছে।”
ভূমিকম্পের পরে কাজ করা পুষ্টিবিদ ড. ফরিদা সাফি জানান, এমন পরিস্থিতিতে পুষ্টিহীনতা একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, অনেক শিশু দুর্বল হয়ে পড়ছে।
কুনারের গভর্নর মাওলাবী কুদরাতুল্লাহ আল জাজিরাকে জানান, নতুন একটি শহর তৈরির কাজ শুরু হয়েছে, যেখানে ৩৮২টি বাড়ির প্লট থাকবে। এটি মূলত তাদের জন্য, যাদের এখানে বাড়ি বা জমি নেই।
তবে যারা ধ্বংসস্তূপের পাশে বসবাস করছে তাদের জন্য এই সাহায্য এখন অনেক দূরের কথা। নবাব দীন বলেন, “আমি জানি না সরকার আমাদের নিচের সমভূমিতে সরাবে কি না বা বাড়ি তৈরি করবে কি না!”
তথ্যসূত্র : আল জাজিরা