Beta
বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫

হঠাৎ কেন দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিলেন জহির রায়হান

অ্যাথলেটিকস ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন প্রতিভাবান স্প্রিন্টার জহির রায়হান। ছবি: সংগৃহীত
অ্যাথলেটিকস ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন প্রতিভাবান স্প্রিন্টার জহির রায়হান। ছবি: সংগৃহীত
[publishpress_authors_box]

যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে পাড়ি জমিয়েছেন দেশের অন্যতম সেরা অ্যাথলেট জহির রায়হান। বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন সূত্রে জানা গেছে, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে ঢাকা ছেড়েছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অ্যাথলেট। নৌবাহিনীর নিয়মিত অনুশীলনে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত এই স্প্রিন্টার। সংস্থাকে না জানিয়ে এভাবে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়ায় নৌবাহিনীর কোচ, খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা প্রচন্ড বিরক্ত জহিরের ওপর।

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অফিসিয়াল ভাষায় বলা হচ্ছে, জহির রায়হান RUN করেছেন। যার মানে, নৌবাহিনীর খাতায় অ্যাথলেট জহির একজন পলাতক।

সাধারণত নৌবাহিনীর সব অ্যাথলেটের অফিসিয়াল নীল সরকারি পাসপোর্ট রয়েছে। যে পাসপোর্ট সংরক্ষিত থাকে বাংলাদেশ নৌ ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের অফিসে। দেশের বাইরে নির্দিষ্ট কোনও আন্তর্জাতিক গেমস বা প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার আগে খেলোয়াড়দের হাতে দেওয়া হয় ওই পাসপোর্ট। কিন্তু কোনও গেমস ছাড়াই কিভাবে জহিরের হাতে পাসপোর্ট পৌঁছেছে সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।  

অবশ্য জহিরের দাবি তিনি নীল পাসপোর্ট দিয়ে ইমিগ্রেশন পার হননি, “আমার নীল পাসপোর্ট দিয়ে ইমিগ্রেশন পার হওয়া সম্ভব না। আমি নতুন করে আরেকটি পাসপোর্ট বানিয়েছিলাম। ওটা দিয়েই এখানে এসেছি।”

যুক্তরাষ্ট্রের একটি ট্র্যাকে অনুশীলনের পর জহির রায়হান। ছবি: সংগৃহীত

আগামী ২২ আগস্ট শুরু হবে জাতীয় সামার অ্যাথলেটিকস। এর আগে নৌবাহিনী থেকে সব রকমের চেষ্টা করা হচ্ছে জহিরের সঙ্গে যোগাযোগের। চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে তাকে ফিরিয়ে এনে আবারও সামার মিটে অংশ নেওয়ানো যায়।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে একজন নিকটাত্মীয়র বাসায় অবস্থান করছেন জহির। সেখান থেকেই নিয়মিত কাছের একটি অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকে অনুশীলন করছেন।

সেই অনুশীলনের ছবিসহ যুক্তরাষ্ট্রে ঘুরে বেড়ানোর বিভিন্ন ছবি ও রিলস নিজের ফেসবুক পেজে ও ইনস্টাগ্রামে আপলোড করেছেন জহির। এমনকি নিজের ইনস্টাগ্রামের প্রোফাইল পিকচার বদল করে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের স্পোর্টসপারসন হিসেবে নিজেকে উল্লেখ করেছেন।

অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকে অনুশীলনের পর জহির ফেসবুকে যে ছবি দিয়েছেন তাতে মন্তব্য করেন কোরি ক্রিস্টিয়েনসন নামের যুক্তরাষ্ট্রের একজন অ্যাথলেট কোচ। সেখানে জহিরকে উদ্দেশ্য করে তিনি লেখেন, “ওয়াও! ওই অসাধারণ ট্র্যাকে তোমাকে দারুণ দেখাচ্ছে। আমি গতকাল এএইউ (অ্যামেচার অ্যাথলেটিক ইউনিয়ন) জুনিয়র অলিম্পিকের জন্য হিউস্টনে এসেছি। আমার ছেলে ট্র্রিপল জাম্পে কোয়ালিফাই করেছে। আমাকে জানাও অন্য আরেকটি পেশাদার ট্র্যাকের সঙ্গে তুলনা করলে এটা কেমন? দুঃখিত তোমাকে মিস করছি।”

ইরানে এশিয়ান ইনডোরে ৪০০ মিটার দৌড়ে রুপার পদক হাতে জহির। ছবি: সংগৃহীত

উত্তরে জহির লেখেন, “অসাধারণ ট্র্যাক। আমি এই সময়টা উপভোগ করতে পেরে ভীষণ আনন্দিত। আমিও তোমাকে মিস করছি। আশা করি শিগগিরই আমাদের দেখা হবে।”

একই ছবির নিচে বাংলাদেশের এসএ গেমসে রুপাজয়ী হার্ডলার সুমিতা রানী লিখেছেন, “এ দেশের জন্য যত কিছুই করিস না কেন কোনও লাভ নেই। ভালো একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিস। তোর জন্য শুভ কামনা রইলো। ভালো থাকিস।”

জহির ৪০০ মিটার দৌড়ে জাতীয় রেকর্ডধারী। ইভেন্টটিতে কয়েক বছর ধরে অপ্রতিদ্বন্দ্বী তিনি। গত বছর ইরানে অনুষ্ঠিত এশিয়ান ইনডোরে ৪০০ মিটার দৌড়ে জিতেছেন রুপা। গত মার্চে চীনে বিশ্ব ইনডোর অ্যাথলেটিকসে প্রতিনিধিত্ব করেছেন বাংলাদেশের। এর আগে ২০২৩ সালের জুলাইয়ে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত এশিয়ান অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে ২০০ মিটারে সেমিফাইনালে জায়গা করে নেন। ২০২১ সালে অংশ নেন টোকিও অলিম্পিকে। ২০১৭ সালে জহির কেনিয়ার নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব যুব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপের ৪০০ মিটার স্প্রিন্টে সেমিফাইনালে উঠেছিলেন।

জহিরের যুক্তরাষ্ট্র চলে যাওয়ার ঘটনাটা অ্যাথলেটিকস অঙ্গনে ‘ওপেন সিক্রেট।’ কিন্তু বিষয়টা জেনেও নৌবাহিনীর কোনও সতীর্থ বা কোচদের কেউ মুখ খুলছেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, “আমিও শুনেছি জহির চলে গেছে। তবে সে ফিরবে কিনা সেটা পরিস্কার করছে না কেউ। শুনেছি সেখানে ট্রেনিং করার জন্য গিয়েছে। উন্নত অনুশীলন করে নিজেকে কামব্যাক করাবে জহির। ভালো কিছুই করতে চায় সে।”

এমনিতেই জহিরের ক্যারিয়ার বিতর্কে ঘেরা। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ধর্ষণ মামলায় কারাগারে যান বাংলাদেশের এই অলিম্পিয়ান। ২০১৯ সালে এক নারী অ্যাথলেট জহিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন। সেই মামলায় কারাগারে ছিলেন। পরে জামিনে মুক্ত হন। ওই সময় বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন জহিরকে অনির্দিষ্টকাল নিষিদ্ধ করে। অবশ্য ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে তাঁর নিষেধাজ্ঞা শর্তসাপেক্ষে প্রত্যাহার করে ফেডারেশন।

সম্প্রতি অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন আবারও তাকে নিষেধাজ্ঞা দেয়।  শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ১৬ এপ্রিল জহিরকে ছয় মাসের জন্য জাতীয় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সকল অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতা, তৎসংশ্লিষ্ট যাবতীয় কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি প্রদান করে ফেডারেশন। তাঁর বিরুদ্ধে পত্রিকায় মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করে ফেডারেশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা ও জাতীয় দলের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হয় তখন। যদিও এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আপিল করেন জহির। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়টি ‘রিভিউ’ করবে ফেডারেশন।

ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় এখনও অপ্রতিদ্বন্দ্বী জহির । ছবি: সংগৃহীত

জহিরের যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়ার ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে দাবি করলেন বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে উন্নত অনুশীলনের জন্য যাওয়ার আগে ফেডারেশন থেকে কোনও এনওসি (অনাপত্তিপত্র) নেননি জহির। শাহ আলম বলেন, “আমরাও লোকমুখে শুনেছি সে চলে গেছে। কিন্তু সেখানে যাওয়ার আগে ফেডারেশন থেকে কোনও এনওসি নেয়নি। তবে যাওয়ার কিছুদিন আগে তার বহিষ্কারাদেশ ওঠানোর জন্য চিঠি দিয়েছিল।”

আগের কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রকিব মন্টু দায়িত্বে থাকার সময়েও একবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিজ উদ্যোগে এমন আমন্ত্রণপত্র এনেছিলেন জহির। যুক্তরাষ্ট্রের যে ক্লাব বা সংস্থায় অনুশীলন করার কথা ছিল সেটার ব্যাপারে ফেডারেশন খোঁজ খবর নেয়। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না পাওয়ায় জহিরের আমন্ত্রণপত্র প্রত্যাখ্যান করে ফেডারেশন। এবারও তাকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। কিন্তু অনুশীলনের কথা বলে সবার অগোচরে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন।

পুরো বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ নৌ ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের পরিচালক কমান্ডার নাদের উজ্জামান কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত