Beta
বুধবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৫
Beta
বুধবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৫

আসেনি ভোটাধিকার, হয়নি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ : ড. ইউনূস

ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মঙ্গলবার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৫’ প্রদান অনুষ্ঠানে ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মঙ্গলবার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৫’ প্রদান অনুষ্ঠানে ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
[publishpress_authors_box]


যে আকাঙ্ক্ষা থেকে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, তা পাঁচ দশকেও পূরণ না হওয়ার কথা তুলে ধরলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানে সেই স্বপ্ন পূরণের সুযোগ এনে দিয়েছে মন্তব্য করে তা কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা মঙ্গলবার ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৫’ প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্যে এই আহ্বান রাখেন বলে বাসস জানিয়েছে।

ড. ইউনূস বলেন, “১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের উদ্দেশ্য ছিল একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে আইনের শাসন থাকবে, মানুষের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত হবে এবং একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে।

“কিন্তু ন্যায়ভিত্তিক সমাজ এখনও প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। দীর্ঘদিন ধরে এদেশের মানুষকে তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। দুর্নীতি, লুটপাটতন্ত্র ও গুম-খুনের রাজত্ব চালিয়ে দেশে একটি ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছে।”

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে ড. ইউনূস বলেন, “তাদের আত্মত্যাগের কারণে আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখার সুযোগ পেয়েছি। এ সুযোগ আমরা কোনোক্রমেই বৃথা যেতে দেব না।”

জাতীয় পর্যায়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে এবছর সাত বিশিষ্ট ব্যক্তিকে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৫’ এ ভূষিত করা হয়। এর মধ্যে ছয়জন মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন। একমাত্র জীবিত ব্যক্তি হলেন লেখক ও বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমর।

প্রধান উপদেষ্টা মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্তদের পরিবারের সদস্যদের হাতে পদক তুলে দেন।

স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মোৎসর্গকারী সবাইকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে ড. ইউনূস বলেন, “আজ ২৫ মার্চ। মানব সভ্যতার ইতিহাসে কলঙ্কিত এক হত্যাযজ্ঞের দিন। ১৯৭১ সালের আজকের রাতে পাক হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র, ঘুমন্ত বাঙালির ওপর নির্মমভাবে গুলি চালিয়ে হাজারো মানুষকে হত্যা করে। ২৫ শে মার্চ থেকেই এ দেশের মানুষ সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। ৯ মাসের যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ।”

জীবিত থাকা অবস্থায় স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, “যারা আজ এ সম্মাননা পেলেন, তারা জীবদ্দশায় এ প্রাপ্তি দেখে যেতে পারেননি। এটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।

“যাকে আমরা সম্মান দেখাচ্ছি, তিনি আমাদের মধ্যে নেই। আমরা যেন আগামীতে এমন একটা নিয়ম করতে পারি যাদের মরণোত্তর দেওয়ার, তাদের পালা শেষ করে যারা জীবিত আছেন, প্রতিবছর তাদের অর্ধেককে যেন পুরস্কার দেওয়া যায়।”

এবার স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর), সাহিত্যে কবি আল মাহমুদ (মরণোত্তর), সংস্কৃতিতে নভেরা আহমেদ (মরণোত্তর), সমাজসেবায় ফজলে হাসান আবেদ (মরণোত্তর), মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান ওরফে আজম খান (মরণোত্তর), শিক্ষা ও গবেষণায় বদরুদ্দীন উমর এবং প্রতিবাদী তারুণ্যে আবরার ফাহাদ (মরণোত্তর)।

স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়া বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের অবদান স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “যে জেন-জি প্রজন্ম, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের অনুপ্রেরণার নাম বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। সে ন্যায়বিচারের জন্য, বাকস্বাধীনতার জন্য জোরাল প্রতিবাদ করে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হয়েছিল। তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা জানাতে পেরে আমরা গর্বিত।”

বদরুদ্দীন উমর আগেই জানিয়েছিলেন, তিনি কোনও সম্মাননা নেন না বলে স্বাধীনতার পুরস্কারও গ্রহণ করছেন না।

তাকে নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “বদরুদ্দীন উমরকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা জানাতে পেরে আমরা আনন্দিত। তার সম্মাননা স্মারক আমাদের পরের প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত থাকবে।”

মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কারের পদক গ্রহণের পর আবরার ফাহাদের মা রোকেয়া খাতুনসহ অন্যরা তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ মো. আব্দুর রশীদ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত