আফগানিস্তানের বিপক্ষে টানা তিন ওয়ানডেতে হেরে বিশ্বকাপ যাত্রা কঠিন করে তুলেছিল বাংলাদেশ। তবে ঘরের মাটিতে নেমে নিজেদের পুরোনো ওয়ানডে ফর্ম দেখাতে পেরেছেন মেহেদি হাসান মিরাজরা। উইন্ডিজকে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৭৪ রানে সহজেই হারিয়ে ২০২৭ বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার পথেও এগিয়ে গেল।
আগে ব্যাট করে ৪৯.৪ ওভারে মাত্র ২০৭ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। জবাবে উইন্ডিজ থেমে যায় ৩৯ ওভারে মাত্র ১৩৩ রানে।
বাংলাদেশকে এই সাফল্য এনে দিয়েছেন রিশাদ হোসেন। ৯ ওভারে ৩৫ রানে ৬ উইকেট তার ক্যারিয়ার সেরা স্পেল। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে সেরা বেলিংও এটি। এর আগে এই সাফল্য ছিল তাইজুল ইসলামের। স্বাভাবিক ভাবেই দলের জয়ে ভূমিকা রাখায় ম্যাচ সেরাও হয়েছেন এই তরুণ। এছাড়া দুই উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান।
শুরুতে ব্যাটিংয়ে নেমে তাওহিদ হৃদয়ের দশম ওয়ানডে ফিফটি (৫১) এবং অভিষেকে মাহিদুল ইসলামের ৪৬ রানে দুইশোর স্কোর গড়ে বাংলাদেশ। যা মিরপুরের কালো উইকেটে জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল। ২০০৬ সালে অভিষেক হওয়া এই স্টেডিয়ামের পিচ শুরু থেকেই এমন কালো মাটির ছিল।
১৫ বছরে গামিনি ডি সিলভার সময়ে এর চরিত্রও বদলে যায়। টনি হেমিং এ স্টেডিয়ামের হেড কিউরেটর হওয়ার পর পিচ নতুন চরিত্র দেখানোর কথা। কিন্তু উইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে একই স্পিন নির্ভর উইকেট দেখা গেল মিরপুরের।
রশিদ খানের পরামর্শে ৫ উইকেট রিশাদের
উইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটির সংবাদ সম্মেলনে তথ্য দিয়েছিলেন কোচ ফিল সিমন্স। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে রশিদ খান থেকে বোলিং পরামর্শ নিয়েছেন রিশাদ।
শুধু নামের মিলেই নয়, কথা বলার পর বোলিংয়েও যেন মিল চলে এল। ওই সিরিজের পর মাঠে নেমেই ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৫ উইকেট নিলেন রিশাদ। এর আগে তার সর্বোচ্চ সাফল্য ছিল ২ উইকেট।
আফগান সিরিজ শেষে প্রায় এক ঘণ্টার মতো রশিদ খানের কাছে বোলিংয়ের তালিম নিয়েছেন রিশাদ। ক্রিকেট বিশ্বে বর্তমানে সবচেয়ে অভিজ্ঞ লেগীর কাছ থেকে টিপস নিয়ে বোলিংয়ের ধার বাড়িয়েছেন রশিদ। তাই পরের ম্যাচে নেমেই হাতে-হাতে পেলেন সাফল্য। দেশের প্রথম লেগ স্পিনার হয়ে নিলেন ৫ উইকেট নেওয়ার গৌরব।
রিশাদ মাত্র ৭ ওভার বল করেই ২৫ রানে ৫ শিকার করেছেন। তার বোলিং ঘূর্ণিতে ৭৯ রানে ২ উইকেটে থাকা দল ৯২ রানে হারায় ৫ উইকেট। সবকটিই রিশাদের দখলে। পরে তানভীর ও মিরাজ আরও দুই উইকেট তুলে নিয়ে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১১৮ রানে ৭ উইকেটে পরিণত করেন উইন্ডিজকে।
এর আগে তাওহিদ হৃদয়ের হাফসেঞ্চুরি (৫১) ও অভিষিক্ত মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের ৪৬ রানে ২০৭ রান করে বাংলাদেশ। শেষদিকে রিশাদ মাত্র ১৩ বলে ২ ছক্কায় ২৬ রান করে অপরাজিত ছিলেন।
অভিষেক হলো মাহিদুলের এবাদশে সৌম্য-মোস্তাফিজ
দেশের ১৫৪তম ওয়ানডে ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক হলো মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। ২০২৪ সালে দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় মাহিদুলের। একমাত্র টেস্টে ব্যাট হাতে তেমন কিছু করতে পারেননি তিনি।
মিডল অর্ডারে দলের সাম্প্রতিক দুরবস্থা কাটানোর পদক্ষেপ হিসেবে দলে আনা হয়েছে মাহিদুলকে। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে তার অভিজ্ঞতা ৯৬ ম্যাচের। চার সেঞ্চুরি ও ২৮ ফিফটিতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার রান করেছেন তিনি ৪৪.৫৩ গড়ে।
মিডলঅর্ডারে অঙ্কনের অন্তর্ভুক্তিতে একাদশে এখন তিন উইকেটরক্ষক ব্যাটার। বাংলাদেশের পাইপলাইনে এখন ব্যাটারদের এমনই সঙ্কট।
মিডল অর্ডারে দলের সাম্প্রতিক দুরবস্থা কাটানোর পদক্ষেপ হিসেবে দলে আনা হয়েছে মাহিদুলকে। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে তার অভিজ্ঞতা ৯৬ ম্যাচের। চার সেঞ্চুরি ও ২৮ ফিফটিতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার রান করেছেন তিনি ৪৪.৫৩ গড়ে।
বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে বাংলাদেশের একাদশে। ওয়ানডে দলে ফেরা সৌম্য সরকার এসেছেন একাদশে। অভিষেক হচ্ছে মাহিদুল ইসলামের। জায়গা হারিয়েছেন শামীম হোসেন। দলেই নেই ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম শেখ।
ফিরেছেন দুই অভিজ্ঞ পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে খরুচে বোলিং করা নাহিদ রানা দলেই নেই, জায়গা হয়নি সেই ম্যাচে খেলা হাসান মাহমুদের।
সিরিজ শুরুর আগে আলোচনায় ‘কালো’ উইকেট। সেই উইকেট কেমন আচরণ করবে তা এখনও অজানা। সেখানে আগে ব্যাটিংয়ের চ্যালেঞ্জ নিতে হচ্ছে বাংলাদেশ দলকে।
টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক শেই হোপ। সিরিজের শুরুটা বোলারদের হাত ধরে করতে চান তিনি।
টস জিতলে ব্যাটিং নিতেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজও। তবে ঘরের মাঠে, মিরপুরের উইকেটে ভালো করার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী তিনি।
বাংলাদেশ একাদশ: মেহেদী হাসান মিরাজ (অধিনায়ক), সৌম্য সরকার, সাইফ হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয়, নুরুল হাসান, রিশাদ হোসেন, তানভির ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশ: শেই হোপ (অধিনায়ক), আলিক আথানেজ, কেসি কার্টি, রোস্টন চেইস, জাস্টিন গ্রেভস, ব্র্যান্ডন কিং, গুডাকেশ মোটি, খ্যারি পিয়ের, শেরফেন রাদারফোর্ড, জেডেন সিলস, রোমারিও শেফার্ড।