পাকিস্তানের অশান্ত বেলুচিস্তান প্রদেশের বোলান জেলায় ছিনতাই হওয়া ট্রেন মুক্ত করতে বিদ্রোহীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের রাতভর সংঘর্ষ চলে। এসময় ট্রেনে জিম্মি থাকা দেড়শোর বেশি যাত্রীকে মুক্ত করা হয়।
এছাড়া সংঘর্ষে কমপক্ষে ২৭ জন বিদ্রোহী নিহত হয় বলে জানিয়েছে ভারতীয় ও পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার সারারাত ধরে বিদ্রোহীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বন্দুকযুদ্ধ হয়। একপর্যায়ে ১৫৫ জন জিম্মিকে মুক্ত করে বাহিনী। তাদের মধ্যে শিশু ও নারীও ছিল।
ছিনতাই হওয়া ট্রেন থেকে উদ্ধারের পর তাদের পার্শ্ববর্তী শহর মাচে নিয়ে যাওয়া হয়।
পাকিস্তনের রেলওয়ে কর্মকর্তাদের বরাতে ডন জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে বেলুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটা থেকে সাড়ে চারশো যাত্রী নয়টি বগিতে নিয়ে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের রাজধানী পেশোয়ারের উদ্দেশে রওনা দেয় জাফর এক্সপ্রেস।
দুপুর ১টার দিকে তারা খবর পায়, বেলুচিস্তানের কাচি জেলার মুশকাফ গ্রামের কাছে পনির ও পেশি রেল স্টেশনের মাঝখানের এক জায়গায় ট্রেনটিতে হামলা চালায় দেশটির স্বাধীনতাকামী সংগঠন বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)।
কর্মকর্তারা বলেন, “সশস্ত্র হামলাকারীরা ট্রেনটি লক্ষ্য করে রকেট ও গুলি ছোড়ে। এতে গুরুতর আহত হয় চালক। এসময় জাফর এক্সপ্রেসকে থামানো হয়।”
এরপর ট্রেনটি তাদের হাত থেকে মুক্ত করতে জোর তৎপরতা শুরু করে নিরাপত্তা বাহিনী।
বিএলএ দাবি করছে, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে তাদের কেউ প্রাণ হারায়নি। বরং দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে ৩০ জন সেনা নিহত হয়।
সংগঠনটির এই দাবি সঠিক কি না, তা নিশ্চিত করেনি পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ।
নিরাপত্তা বাহিনীর একাধিক সূত্র জিও নিউজকে জানিয়েছে, ট্রেনে থাকা বাকি জিম্মিদের উদ্ধারে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
বিদ্রোহীদের কয়েকজন আত্মঘাতী জ্যাকেট পরা অবস্থায় রয়েছে। তারা যাত্রীদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। এ কারণে অভিযান পরিচালনা করতে বেগ পেতে হচ্ছে।
ধারণা করা হচ্ছে, ট্রেনের যাত্রীদের একাংশকে আশপাশের পাহাড়ে নিয়ে গেছে বিদ্রোহীরা।
ট্রেনে হামলার বিষয়ে বিএলএর পক্ষ থেকে বলা হয়, রাজনৈতিক বন্দি ও সেনাবাহিনীর হাতে অপহৃত বেলুচদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ছেড়ে দিতে হবে।
তাদের এই দাবি পূরণ করা না হলে পুরো ট্রেন ধ্বংস করে দেওয়া হবে। সেনাবাহিনীর অভিযানের প্রতিক্রিয়ায় ১০ জিম্মিকে হত্যার হুমকিও দেয় বিদ্রোহীরা।
এদিকে ট্রেনে হামলাকে ঘটনাকে ‘কাপুরুষোচিত’ উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “দেশ থেকে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই জারি থাকবে। আমরা পাকিস্তানে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা ছড়ানোর যেকোনো ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেব।”