একে তো অসুস্থ, তার ওপর আট মাস ধরে কারাগারে; আদালতে এসেই মেজাজ হারালেন হাজি মোহাম্মদ সেলিম; আইনজীবীর ওপর ক্ষোভ ঝাড়লেন তিনি।
নতুন একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারের আবেদনের শুনানিতে বুধবার ঢাকার আদালতে হাজির করার পর এজলাসেই ক্ষেপে ওঠেন আওয়ামী লীগের সাবেক এই সংসদ সদস্য।
তিনি যখন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে, তখন তার আইনজীবী শ্রী প্রাণ নাথ ওকালতনামায় স্বাক্ষর নিতে গেলে তার সঙ্গে উচ্চবাচ্য করতে থাকেন তিনি। ওকালতনামায় সই করবেন না বলেও জানাতে থাকেন। পরে আইনজীবী বুঝিয়ে-শুনিয়ে তার স্বাক্ষর আদায় করেন।
শ্রী প্রাণ নাথ দীর্ঘদিন ধরেই হাজি সেলিমের আইনজীবী হিসাবে কাজ করছেন। নতুন মামলায় হাজি সেলিমের হয়ে আইনি লড়াই চালাতেই ওকালতনামায় তার স্বাক্ষর নেওয়া প্রয়োজন ছিল।
আইনজীবী প্রাণ নাথ পরে সাংবাদিকদের বলেন, “আমার মক্কেল কথা বলতে পারেন না। কারাগারে খাবার খেতে পারেন না। কাউকে কোনও কিছু বোঝাতে পারেন না। এই অভিমানে রেগে গেছিলেন। এজন্য তিনি ওকালতনামায় স্বাক্ষর করতে চাচ্ছিলেন না। কিছুক্ষণ বোঝানোর পর স্বাক্ষর করেন। তাকে বলেছি, সিস্টেমের বাইরে তো কিছু করতে পারব না।”
হাজি সেলিমের ক্ষোভের কারণ জানিয়ে এই আইনজীবী বলেন, “আমার মক্কেলের ক্ষোভ, কেন তার জামিন হচ্ছে না।”
ব্যবসায়ী গোষ্ঠী মদিনা গ্রুপের কর্ণধার হাজি সেলিম এক সময় ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কমিশনার ছিলেন। ১৯৯৬ সালে পুরান ঢাকার লালবাগ আসন (তখন ছিল ঢাকা-৮, এখন ঢাকা-৭) থেকে প্রথম আওয়ামী লীগের টিকেটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
২০১৪ সালে একই আসন থেকে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও ২০১৮ সালে আবার নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনের আগেই অসুস্থ হয়ে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি। ভোটের প্রচারে নেমে ভাঙা ভাঙা শব্দে কথা বলছিলেন তিনি।
২০২৪ সালের নির্বাচনে হাজি সেলিম আর প্রার্থী হননি। তবে ওই আসনে তার ছেলে সোলায়মান সেলিম আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য হন।
তার সাত মাস পর গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে আওয়ামী লীগের আরও মন্ত্রী-এমপিদের সঙ্গে হাজি সেলিম ও তার ছেলে সোলায়মানও গ্রেপ্তার হন। জুলাই আন্দোলনের সময়কার কয়েকটি হত্যামামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়, রিমান্ডেও নেওয়া হয়।
গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তারের পর একটি মামলার রিমান্ডে আবেদনের শুনানিতে এজলাসে অঝোরে কাঁদতে দেখা গিয়েছিল হাজি সেলিমকে। সেদিন ওকালতনামায় স্বাক্ষর না দিয়ে টিপসই দিয়েছিলেন তিনি।
বুধবার তাকে জুলাই আন্দোলনের সময় ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে সাজেদুর রহমান ওমর নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এজাহারে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ২১ জুলাই দুপুরে যাত্রাবাড়ী ফুটব্রিজের নিচে ছাত্র-জনতার সঙ্গে বিক্ষোভ করার সময় গুলিবিদ্ধ হন ওমর। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক মাস পর ২৪ আগস্ট মারা যান তিনি।
এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আসামি করে গত ৩ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা হয়।
এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখাতে পুলিশ নিরাপত্তা বেষ্টনি দিয়ে হাজি সেলিমসহ আওয়ামী সরকারের সাবেক কয়েকজন মন্ত্রী, এমপিসহ ১০ জনকে মাথায় হেলমেট ও গায়ে বুলেটগ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে এজলাসে নেয়।
ঢাকার মহানগর হাকিম জি এম ফারহান ইশতিয়াকের আদালত হয় তাদের এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনের শুনানি। এরপর আদালত তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করে।
শুনানি চলাকাল সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন
আমু অসুস্থ বোধ করায় তার আইনজীবী তাহমীম মহিমা বাঁধন বসার জন্য চেয়ার চেয়ে আবেদন করেন। তখন বিচারক আমুকে বসার জন্য চেয়ার দেওয়ার নির্দেশ দেন।
কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে অভিনেত্রী শমী কায়সার এবং ভোলা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবকে সাথে কানে কানে কথা বলতেও দেখা গেছে। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে অন্য আসামিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
শুনানি শেষে সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে আসামিদের আদালত থেকে হাজতখানায় নেওয়ার পথে সাবেক আইজিপি শহিদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “কী আর বলব, ভালো নেই, দোয়া করবেন।”