Beta
রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫
Beta
রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫

মোটিফে কে দিল আগুন? র‌্যাব তদন্তে, পুলিশ দিল ‘সুখবরের’ বার্তা

WhatsApp Image 2025-04-12 at 11.34.06 AM
[publishpress_authors_box]

বর্ষবরণে চারুকলার আনন্দ শোভাযাত্রার জন্য তৈরি ফ্যাসিস্টের মোটিফে কে, কেন আগুন দিল, তার হদিস এখনও মেলেনি।

বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থার সর্বশেষ প্রস্তুতি দেখতে গিয়ে র‌্যাব মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান বলেছেন, বিষয়টির তদন্ত চলছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্যদিকে রমনা বটমূলে গিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, জড়িতদের চিহ্নিত করার অনেক কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন তারা।

সোমবার বঙ্গাব্দ ১৪৩২ বরণের প্রস্তুতি এরই মধ্যে সারা হয়েছে। প্রতিবছরের মতো এবারও ভোরে রমনার বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে বৈশাখ বরণের সূচনা হবে।

এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা থেকে বের হবে শোভাযাত্রা। তবে রাজনৈতিক পালাবদলের পর এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার পরিবর্তে এর নাম দেওয়া হয়েছে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা।

এই শোভাযাত্রার জন্য তৈরি করা ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ এবং ‘শান্তির পায়রা’ মোটিফ শনিবার ভোররাতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

র‌্যাব মহাপরিচালক শহিদুর রবিবার রমনা বটমূলে গেলে সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কে বা কারা এই মোটিফ পোড়াল, তা জানা গেছে কি না?

জবাবে তিনি বলেন, “যে ঘটনাটি ঘটেছে, তার তদন্ত হবে। ঘটনার সাথে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

চারুকলায় নিরাপত্তার কোনও ঘাটতি ছিল কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

“এখানে আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় যারা ছিলেন, তাদের কোনও ঘাটতি ছিল কি না, সেটাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। যদি সেরকম কিছু পাওয়া যায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

মোটিফে আগুন দেওয়ার পর সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী দাবি করেছিলেন, ‘ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব’ পুড়িয়েছে শেখ হাসিনার ‘দোসররা’।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর শেখ হাসিনার দেড় দশকের কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটে। তারপর প্রথম বৈশাখে চারুকলার শোভাযাত্রায় ‘ফ্যাসিবাদ’কে উপস্থাপনের লক্ষ্যে এই মোটিফ তৈরি করা হয়।

সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা গেছে, এক যুবক দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে দেড় মিনিটের মধ্যে মোটিফে আগুন ধরিয়ে চলে যায়।

ওই যুবকের পরনে কালো রঙের টিশার্ট ছিল, মুখ ছিল মাস্কে ঢাকা। তাকে সনাক্ত করা যায়নি, তার সঙ্গে আরও কেউ ছিল কি না, তাও বোঝা যায়নি।

ডিএমপি কমিশনার সাজ্জাত আলী রবিবার রমনার বটমূলে গেলে তাকেও একই বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।

তিনি বলেন, “চারুকলায় মোটিফে আগুন দেওয়ার ঘটনা তদন্তে আমরা অনেক কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। ওই ঘটনায় জড়িত দুর্বৃত্তকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। আগামীকাল আনন্দ শোভাযাত্রা শুরুর আগেই কোনও সুখবর হয়ত দিতে পারব।”

চারুকলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনও ঘাটতি ছিল কি না- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটা আমরা তদন্ত করছি। মামলা চলমান রয়েছে। তাই এই বিষয় এখনই কিছু বলতে চাই না।”

বর্ষবরণের আগের দিন রমনা বটমূলে ডগ স্কোয়াড দিয়ে তল্লাশি চলে। ছবি : হারুনুর রশীদ
বর্ষবরণের আগের দিন রমনা বটমূলে ডগ স্কোয়াড দিয়ে তল্লাশি চলে। ছবি : হারুনুর রশীদ

‘ঝুঁকি নেই’

র‌্যাব প্রধান ও ডিএমপি কমিশনার উভয়ই বলেন, পহেলা বৈশাখে রাজধানীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোনও ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি তারা দেখছেন না।

ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী বলেন, “পহেলা বৈশাখ ঘিরে নিরাপত্তাজনিত কোনও হুমকি বা ঝুঁকি নেই।”

রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা, রবীন্দ্র সরোবর ও হাতিরঝিল এলাকায় বর্ষবরণের অনুষ্ঠানমালা নির্বিঘ্ন করতে ডিএমপির ১৮ হাজার সদস্য কাজ করবে।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে মোট ২১টি স্থানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। প্রতিটি অনুষ্ঠানস্থলের প্রবেশপথে আর্চওয়ে ও হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশির ব্যবস্থা করা হবে। অনুষ্ঠানস্থল ও শোভাযাত্রার রাস্তায় স্টিল ক্যামেরা, ভিডিও ক্যামেরা ও ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানস্থলে ডগ স্কোয়াড দিয়ে সুইপিং করা হবে।

“ইভ টিজিং ও ছিনতাই প্রতিরোধে সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে,” বলেন সাজ্জাত আলী।

এছাড়া রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড সেন্টার’ স্থাপন করা হবে। সেখানে মাইকিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী নগরবাসী সবাইকে তল্লাশি কাজে পুলিশকে সহযোগিতার আহ্বান জানান, ডিএমপি কমিশনার।

তিনি বলেন, অনুষ্ঠানস্থলে মুখোশ, ধারালো বস্তু ও দাহ্য পদার্থ নিয়ে না আসার জন্য অনুরোধ করছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে এবং অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করতে হবে। অনুষ্ঠানস্থলে ফানুস উড়ানো ও আতশবাজি ফোটানো যাবে না। এমন কোনও বাঁশি ব্যবহার করা যাবে না, যা শব্দদূষণ করে।

র‌্যাবের মহাপরিচালক শহিদুর বলেন,, “আমরা সমন্বয় করে কাজ করছি। পুলিশ আছে, সেনাবাহিনী আছে, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরাও আছে, অন্যান্য সংস্কৃতির গোষ্ঠী, জনপ্রতিনিধি সবার সাথে সমন্বয় করে এ অনুষ্ঠান যেন সুন্দরভাবে করা যায় সেভাবে কাজ করছি।

“আমাদের ডগ স্কোয়াড আছে, সাদা পোশাকে গোয়েন্দারা কাজ করছে, মোটরসাইকেল ও গাড়ির টহল টিম কাজ করছে। সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টিতেও র‌্যাব অন্তত গুরুত্বের সাথে কাজ করছে যেন কেউ অপপ্রচার, ভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়াতে না পারে।”

এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে ‘অনেক ভালো’ দাবি করে তিনি বলেন, “আশা করি, সবাইকে নিয়ে আমরা সুন্দরভাবে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান পালন করব।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত