সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি শামসুল ইসলাম চৌধুরী হত্যা মামলায় তার ছোট ছেলেসহ তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মামলার প্রায় ১৪ বছর পর মঙ্গলবার সিলেট বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. শাহাদাৎ হোসেন প্রামাণিক এ রায় দিয়েছেন।
নিহত আইনজীবী শামসুল ইসলাম চৌধুরী সিলেট নগরীর মিরবক্সটুলা এলাকার বাসিন্দা।
দণ্ডপ্রাপ্ত সবাই পলাতক। তারা হলো- তার ছোট ছেলে মাসুদ আহমদ চৌধুরী মুন্না, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের জাহের আলী ও ছাতকের আনসার আহমেদ। তাদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
এছাড়া বুরহান উদ্দিন নামে এক আসামিকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ইসমাইল হোসেন নামে আরেক আসামিকে খালাস দিয়েছে আদালত।
মামলার বিবরণে জানা যায়, শামসুল ইসলাম চৌধুরী ২০১১ সালে ১৭ জুলাই নিখোঁজ হয়েছেন জানিয়ে পরদিন কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তার ছোট ছেলে মুন্না। মুন্না এই সাধারণ ডায়েরি করার চার দিন পর ২২ জুলাই থেকে নিজেও নিখোঁজ হন। শামসুল ইসলাম চৌধুরীর বড় ছেলে মাহমুদ আহমদ চৌধুরী ৪ আগস্ট সিলেট কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেন।
এর এক সপ্তাহ পর র্যাব-৯ সদস্যরা আনসার, বোরহান ও রানুকে আটক করে। তাদের মধ্যে আনসার ও বোরহান আদালতে জবানবন্দি দেন।
এর মাঝে ২৭ আগস্ট পুলিশ সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় সুরমা নদী থেকে শামছুল ইসলামের মরদেহের কিছু অংশ, পাঞ্জাবি ও টুপি উদ্ধার করে। পরে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, মাসুদ আহমদ চৌধুরী মুন্না সম্পত্তির লোভে তার বাবাকে অন্য আসামিদের সহযোগিতায় বাড়ি থেকে গাড়িতে তুলে নিয়ে সুনামগঞ্জের ছাতকে সুরমা নদীতে ফেলে দেন। ২০১৩ সালের ১৫ মে পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে মামলার বিচার শুরু হয়।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলাম চৌধুরীর চার মেয়ে ও দুই ছেলে। দুই মেয়ে অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী। এক মেয়ে ঢাকায় এবং আরেক মেয়ে সিলেটে শ্বশুড়বাড়ি থাকেন। বড় ছেলে মাহমুদ আহমদ চৌধুরী পেশাগত কারণে সপরিবারে ঢাকায় থাকেন। ছোট ছেলে মুন্নাকে নিয়ে শামছুল ইসলাম চৌধুরী সিলেট নগরীর মীরবক্সটুলা এলাকার বাসায় বসবাস করতেন। ২০১১ সালের ১৭ জুলাই শবে বরাতের রাতে ওই বাসা থেকে নিখোঁজ হন শামসুল ইসলাম। এরপর মুন্না কোতোয়ালি থানায় একটি জিডি করেন; ২২ জুলাই নিজেই আত্মগোপনে চলে যান।
সিলেট বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট আনছারুজ্জামান জানান, ২০১১ সালের ১৭ জুলাই শবে বরাতের রাতে নামাজরত অবস্থায় প্রবীণ আইনজীবী শামসুল ইসলাম চৌধুরীকে তার ছেলে মাসুদ আহমদ চৌধুরী মুন্না পেছন থেকে প্রথমে পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। এরপর তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে তাকে অচেতন অবস্থায় গাড়িতে তুলে সুনামগঞ্জের ছাতকের মল্লিকপুর এলাকার সুরমা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।
কয়েকদিন পর সুনামগঞ্জের ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামে সুরমা নদীতে তার মরদেহ পাওয়া যায়। এই ঘটনায় মুন্নাকে গাড়িচালকসহ তিনজন সহযোগিতা করেন। মামলায় ৩০ সাক্ষীর মধ্যে ১৯ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। গ্রেপ্তার তিনজন জামিনে মুক্ত পাওয়ার পর থেকে পলাতক রয়েছে।