অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে অভিযানের পর বিক্ষোভ, সেনা নামানোর পর সংঘাত, এমন পরিস্থিতিতে কারফিউ জারি করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে।
পশ্চিম উপকূলের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এদিকে লস এঞ্জেলেসের ঘটনার জেরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে শিকাগো, আটলান্টা পেরিয়ে পশ্চিম উপকূলে দেশটির বৃহত্তম শহর নিউ ইয়র্কেও।
গত জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের পদে ফেরার পরই অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়ার ঘোষণা দেন, সেই লক্ষ্যে শুরু হয় অভিযান।
পাঁচ দিন আগে লস অ্যাঞ্জেলেসে সেই অভিযান শুরুর পর দেখা দেয় অসন্তোষ। তা দমনে ন্যাশনাল গার্ড ও মেরিন সেনাদের নামানোর পর ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়ে তা সহিংসতায় গড়ায়।
এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার লস অ্যাঞ্জেলেসের কিছু অংশে কারফিউ বা সান্ধ্য আইন জারির ঘোষণা দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন শহরের মেয়র কারেন ব্যাস।
তিনি বলেন, কারফিউ শহরের কেন্দ্রস্থলের ১ বর্গ মাইল (২.৬ বর্গ কিমি) এলাকায় মঙ্গলবার রাত ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
ব্যাস বলেন, “অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা ভাংচুর হয়েছে। গত রাতে ২৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট চালানো হয়েছে।
“তাই আমার বার্তা হলো, যদি আপনি ডাউনটাউন লস অ্যাঞ্জেলেসে বসবাস বা কাজ না করেন, তবে এই এলাকাটি এড়িয়ে চলুন। যারা কারফিউ ভঙ্গ করবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা তাদের গ্রেপ্তার করবে এবং মামলা করা হবে।”
কারফিউ আরও সময়ের জন্য চলতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন মেয়র। তবে তিনি বলেন, তবে তা শহরের একটি ছোট অংশের (১৩০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে) জন্য প্রযোজ্য হবে।
ব্যাস বলেন, “এটি উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ যে সেখানে ভাংচুর ও সহিংসতা হয়েছে, তা ছোট করে দেখার নয়। আবার তা গোটা শহরের সঙ্কট, তেমনও কিন্তু নয়।”
ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী অভিযান এবং বিক্ষোভ দমনে ন্যাশনাল গার্ড ও মেরিন সেনা মোতায়েনের বিরোধিতা করছে ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের কর্মকর্তারা। তরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে উত্তেজনা বাড়াচ্ছেন।
মঙ্গলবার রাতে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম এক ভাষণে ট্রাম্পের সামরিক শক্তি ব্যবহারকে ‘ক্ষমতার নির্লজ্জ অপব্যবহার’ হিসাবে দেখার কথা জানান।
তিনি বলেন, যখন পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার দিকে গড়াচ্ছিল, তখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাতে ঘি ঢেলেছেন ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করে।
ট্রাম্প প্রশাসনের সেনা মোতায়েনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এরই মধ্যে মামলা করেছেন নিউসম। তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট হিংস্র অপরাধীদের পরিবর্তে নিরীহ কর্মজীবীদের লক্ষ্য করে একটি ‘সামরিক ফাঁদ’ তৈরি করেছেন।
গভর্ন নিউসম বলেন, “আমাদের মধ্যে কিছু লোককে যদি বিনা ওয়ারেন্টে, কেবল সন্দেহ বা গায়ের রঙের কারণে রাস্তা থেকে তুলে নেওয়া হয়, তাহলে আমাদের কেউই নিরাপদ নেই।
“স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার প্রথম লক্ষ্য হয় যারা আত্মরক্ষা করতে সবচেয়ে কম সক্ষম। তবে তা সেখানেই থেমে থাকে না।”
লস অ্যাঞ্জেলেসে থাকা আল জাজিরার সাংবাদিক তেরেসা বো জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীরা ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযানের ধরন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলছেন, ভয়ানক অপরাধীদের ধরতে যেভাবে অভিযান চালানো হয়, তেমনটাই ঘটছে নিরীহ মানুষগুলোর ওপর।
বো বলেন, “আমরা এখানে যাদের সাথে কথা বলেছি, তাদের অনেকেই বলছেন যে তারা কর্মজীবী মানুষ, একটি উন্নত জীবনের সন্ধানে এই দেশে এসেছেন। এ কারণেই এখানে বেশিরভাগ মানুষ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ, এবং তারা অভিযান বন্ধের দাবি জানাচ্ছে।”
শািন্তপূর্ণ বিক্ষোভ দমনে সেনা নামিয়ে ট্রাম্পই পরিস্থিতি সহিংসকতার দিকে ঠেলে দিয়েছেন বলে বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ।
ব্যাপক নিন্দা ও সমালোচনার মধ্যেও ট্রাম্প বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সেনা ব্যবহারের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন।
মঙ্গলবার নর্থ ক্যারোলাইনার ফোর্ট ব্র্যাগে সেনা ছাউনি পরিদর্শনের সময় তিনি বলেন, “আমাদের কয়েক প্রজন্মের সেনাবাহিনীর বীররা শুধু একারণেই রক্ত ঝরায়নি যে দেশের ভেতরে তাদের দেখতে হবে যে ঘর-বাড়ি আক্রমণ এবং তৃতীয় বিশ্বের দেশের মতো আইনহীন অবস্থা, যা ক্যালিফোর্নিয়ায় ঘটছে। সর্বাধিনায়ক হিসাবে, আমি তা ঘটতে দেব না। এটি কখনোই ঘটবে না।”