অনেকদিন মোস্তাফিজুর রহমানকে এভাবে দেখা যায় না। সবশেষ আইপিএলে যে কয় ম্যাচ সুযোগ পেয়েছেন তাতেই নিজেকে ফিরিয়ে এনেছেন। সেই মোস্তাফিজ তার কাটার নিয়ে আবির্ভূত শ্রীলঙ্কায়।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জানিথ লিয়ানাগে যখন ম্যাচ ছিনিয়ে নিচ্ছিলেন ঠিক তখন পুরেো অস্ত্র কাটার নিয়ে হাজির মোস্তাফিজুর। তার কাটরে কুপোকাত লিয়ানাগে। বুক সমান উঠে আসা স্লোয়ার ডিলেভারি লেগ সাইডে ঠেলে এক রান নিতে চেয়েছিলেন ৭৮ রান করা লিয়ানাগো।
কিন্তু মোস্তাফিজের কাটার এমনই যা চাইলেও ব্যাটাররা নিজের মতো করে খেলতে পারেন না। তাই লিয়ানাগের ব্যাটে লেগে বেলুনের মতো উড়ে উঠলো বল আর মোস্তাফিজ নিজেই একটু সামনে এগিয়ে ঝুঁকে পড়ে নিলেন সহজ ক্যাচ।
লঙ্কানদের অষ্টম উইকেট নেওয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সিরিজে ফেরাও নিশ্চিত হলো। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৮ রানে জিতেছে বাংলাদেশ।

জানিথ লিয়ানাগে ও দুশমন্ত চামিরার ৫৮ রানের জুটি ম্যাচ জমিয়ে তোলে। অবশ্য শেষদিকে দ্রুত রান তোলার চাপ সামলে উঠতে পারেননি এ দুই ব্যাটার। লিয়ানাগের ৭৮ রানের বিদায়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত হয়। শেষ উইকেট হিসেবে চামিরাকে ফেরান তানজিম সাকিব।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৫ উইকেট নিয়েছেন তানভীর ইসলাম। ১০ ওভারে তার ২ মেডেনসহ ৩৯ রানের স্পেল বাংলাদেশকে সিরিজে ফেরার পথ করে দিল।
তানভীরের স্পিনে ঘূর্ণিপাকে লঙ্কান ব্যাটাররা
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জয়ের লক্ষ্যে অনেকটা এগিয়েছে বাংলাদেশ। তানভীর ইসলাম তার স্পিন ঘূর্নিতে ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছেন স্বাগতিকদের।
দ্বিতীয় ম্যাচে ইনিংসে নিজের শুরুর দুই ওভারে ২২ রান দিয়েছিলেন তানভীর। কুশল মেন্ডিস যতক্ষণ ছিলেন ঠিক লাইন খুঁজে পাওয়া কঠিন হচ্ছিল। সেই কুশলকেই রিভিউ নিয়ে এলবিডব্লিউ আউট করেন তানভীর।
এরপর শুরু তার কিপটেমি। পরের ৬ ওভারে তানভীর দিয়েছেন মাত্র ৮ রান। ওই সময়ে নিয়েছেন আরও দুটি উইকেট। ৫১ বলে ৩৩ রান করা কামিন্দু মেন্ডিসকে শর্ট মিড অনে দাঁড়ানো মেহেদি হাসান মিরাজের সহজ ক্যাচে পরিণত করেন। দুনিথ ভেলালেগেকে ফেরান মাত্র ১ রানে।
অপরপ্রান্তে বল হাতে ঝলক দেখিয়েছেন শামীম হোসেন। টানা ৮ ওভার বল করে মাত্র ১৮ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েছেন এই স্পিনার। তানভীর ও শামীমের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ১১ থেকে ৩৬ ওভার পর্যন্ত কোন ওভারে দুই অঙ্কের ঘরে রান তুলতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। ৩৬ ওভার শেষে ৭ উইকেটে ১৫৬ রান তাদের।
দ্রুত দুই উইকেটে ম্যাচে ফিরল বাংলাদেশ
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে সাফল্য এনে দেন তানজিম হাসান সাকিব। পাথুম নিশাঙ্কার মাত্র ৫ রানে ফেরা বাংলাদেশের জন্য সাফল্যই বলা যায়। এরপর ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন কুশল মেন্ডিস।
অভিজ্ঞ এই ব্যাটার টি-টোয়েন্টি স্টাইলে খেলে ১০ ওভারেই একশর কাছে নিয়ে যান শ্রীলঙ্কাকে। মাত্র ৩১ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কা আসে তার ব্যাট থেকে। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা মেন্ডিসকে থামিয়ে শ্রীলঙ্কার রানের গতিতে লাগাম টানেন তানভীর।
এলবিডব্লিউর আবেদন ফিরিয়ে দেন আম্পায়ার। তানভীর রিভিউ নিয়ে সফল হন। দুই ওভার আগে নিশান মাদুশকাকে ১২ রানে ফেরান তানভীর। দ্রুত দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচে ফেরান বাংলাদেশকে। ১৫ ওভার শেষে শ্রীলঙ্কার রান ৩ উইকেটে ৯১।
তানজিমের শেষের লড়াইয়ে বাংলাদেশের ২৪৮
ইনিংসে শেষ ৪.১ ওভার খেলতে না পারার আফসোসটা এখন হচ্ছে বাংলাদেশের। ৫ ওভার বাকি থাকতে দলের আড়াইশো (২৪৮) রান। অথচ বাকি পাঁচটি ওভারও ব্যাট করা গেলে দলীয় স্কোর আরও ভারি হতে পারতো।
অবশ্য এই পর্যন্ত আসাই চিন্তাতীত ছিল। দলীয় ২১২ রানে তাওহিদ হৃদয়ের ফেরার পর মনে হচ্ছিল আড়াইশো রান হওয়া অসম্ভব। একপ্রান্ত আগলে তানজিম সাকিব দুর্দান্ত ইনিংস খেলে দলকে টেনে নিলেন।
তার ২১ বলে ২টি করে ছক্কা ও চারের ৩৩ রানের ক্যামিওতে বাংলাদেশ কলম্বোর পিচের উপযোগী স্কোর পেয়েছে। শেষদিকে মোস্তাফিজুর রহমান ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার বলে এলবিডব্লিউ না হলে শ্রীলঙ্কাকে আরও বড় স্কোর ছুঁড়ে দিতে পারতো বাংলাদেশ।
৪৫তম ওভারে হাসারাঙ্গা বোলিংয়ে এসে ভয় ধরাতে চেয়েছিলেন শেষ বাংলাদেশের শেষ জুটিকে। কিন্তু তানজিম উল্টো তাকে দুই ছক্কা মেরে ভয় দূর করেন। অবশ্য চতুর্থ বলে সিঙ্গেল নিয়ে মোস্তাফিজকে স্ট্রাইক দিয়ে ভুল করলেন তানজিম।
পঞ্চম বলে লেগ ব্রেক বলে মোস্তাফিজ ডিফেন্স করতে পারেননি। তার এলবিডব্লিউতে বাংলাদেশের ইনিংস আরও রান পাওয়ার আগেই থামল।

হৃদয়ের আউটে বিরাট ক্ষতি
রাগে ব্যাট আছড়ে ফেললেন তাওহিদ হৃদয়। এটাই হওয়ার কথা। যেভাবে তানজিম হাসান সাকিব তার ডাকে সাড়া না দিয়ে ক্রিজে থেকে গেলেন, রাগ হওয়ারই কথা।
৬৯ বলে ৫১ রান করে ইনিংস ধরে খেলার চেষ্টায় ছিলেন হৃদয়। আরও ১০ ওভার হাতে থাকায় বাংলাদেশকে ভালো স্কোর এনে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ৪০ তম ওভারেই তানজিমের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে ফিরলেন তিনি।
মিডউইকেটে বল ঠেলে দুই রানের জন্য ছুটেছিলেন হৃদয়। কিন্তু সেখানে দুই রান হওয়ার মতো নয়। ভুল কল ছিল কিন্তু সাকিব নিজের উইকেট বিসর্জন দিতে পারতেন দলের কথা ভেবে। হৃদয় থাকলে বাকি ১০ ওভারে আরও রান পেতো বাংলাদেশ।
এর আগে ৪৫ রানের ভালো জুটি ভাঙ্গে জাকের আলির বিদায়ে। ৪০ বলে ২৪ রান করে আসিথার বলে এলবিডব্লিউ হন জাকের।
৩০ ওভারে ভালো অবস্থান বাংলাদেশের
আরও ২০ ওভার হাতে আছে। কলম্বোর উইকেটে ২৬০ রান বেশ ভালো। ৩০ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান এখন যা আছে তাতে পরের ২০ ওভারে আরও ১০০ রানের আশা করতেই পারেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।
অবশ্যই এখানেই বিপত্তি। বাংলাদেশ ব্যাটারদের ভালো খেলতে থাকা অবস্থায় উচ্চাভিলাষী বা ভুল শটের প্রবণতা দলের ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণ। ৩০ ওভার শেষে এখন তাওহিদ হৃদয়ের ওপর ভরসা বাংলাদেশের।
মাত্রই উইকেটে আসা জাকের আলিকে নিয়ে লম্বা জুটি গড়তে হবে হৃদয়কে। ৪৫ বলে ১ চারে ২৭ রান করা হৃদয় ঠান্ডা মাথায় ইনিংস বড় করার দিকেই নজর দিয়েছেন। এর আগে সবশেষ উইকেট হিসেবে বিদায় নিয়েছেন শামীম, হোসেন। ২৩ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ২২ রান করেছেন তিনি। অধিনায়ক মিরাজ ১০ বলে ৯ রান করে ভুল পুল শটে লং অনে ক্যাচ আউট হন।

গুগলিতে বোল্ড ইমন
ইমন অসাধারণ খেলছিলেন। প্রতিটি শটে ছিল স্পষ্ট আত্মবিশ্বাস। কিন্তু দুর্বোধ্য বল যখন আসে তখন আর কিছু করার থাকে না ব্যাটারের। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার একটি লেগ ব্রেক গুগলিতে পরাস্ত হলেন হাফসেঞ্চুরিয়ান ইমন।
৬৯ বলে ৬৭ রান করে রান-বলে এগোচ্ছিলেন ইমন। হাসারাঙ্গার করা ইনিংসের ২০তম ওভারে চতুর্থ বলটি দেখতে মনে হচ্ছিল লেগ ব্রেক হবে। কিন্তু বলকে লেগ ব্রেক গুগলি করিয়েছেন হাসারাঙ্গা। তাই লেগ ব্রেকের জন্য খেলতে গিয়ে সরাসরি বোল্ড হলেন ইমন। ২০ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে ১১১।
সাবধানী ব্যাটিংয়ের পর শান্ত ফিরলেন
৮ ওভারে ৪৪ রান, তানজিদ তামিম ফিরেছেন ১১ বলে মাত্র ৭ রান করে। এরপর সাবধানে খেলছিলেন পারভেজ হোসেন ইমন ও নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে ৮ ওভারের পর দ্রুত রান তুলেছেন ইমন।
দুই ছক্কা ও তিন চারে ২.১ ওভারে দলকে ২৯ রান এনে দিয়েছেন তামিম। শান্তর সঙ্গে তার জুটিও এগোচ্ছিল দারুণ ভাবে। কিন্তু শান্ত বড় শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিলেন লং অনে। ১৯ বলে ১৪ রানের ইনিংস খেলে এমন আত্মাহুতি দেওয়ায় অপরপ্রান্তে ইমনও হতাশ হয়ে পড়েন।
শান্ত ক্যাচ আউট হওয়ার পর মাথা হেট করে ক্রিজে বসে পড়েন তিনি। ৬৩ রানের দারুণ জুটির সমাপ্তি হয়।
দ্বিতীয় ম্যাচে বাদ লিটন-তাসকিন সুযোগ পেলেন হাসান-শামীম
মেহেদি হাসান মিরাজ তার নেতৃত্বের সময়ে প্রথমবার টস জিতলেন। গত ম্যাচে আনুষ্ঠানিক নেতৃত্ব শুরুর আগে ৫ ম্যাচের সবকটিতে টস হেরেছিলেন মিরাজ। এবার টস জিতে কলম্বোয় ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে আগে ব্যাটিং নিয়েছেন।
সিরিজের প্রথম ম্যাচ শেষে তাসকিন আহমেদ জানিয়েছিলেন কলম্বোয় পরে ব্যাট করা একটু কঠিন। গত ম্যাচে ৪ উইকেট পেয়েছিলেন তিনি। সেই তাসকিনকেই দ্বিতীয় ম্যাচের একাদশে দেখা গেল না। পায়ে হালকা চোট পাওয়ায় বিশ্রামে আছেন তিনি।
তাসকিনের পরিবর্তে সুযোগ পেয়েছেন অপর পেসার হাসান মাহমুদ। এছাড়া লিটন দাসও অফফর্মের কারণে বাদ পড়েছেন। তার পরিবর্তে দলে সুযোগ পেয়েছেন শামীম হোসেন।
বাংলাদেশ : মেহেদি হাসান মিরাজ (অধিনায়ক), তানজিদ হাসান তামিম, পারভেজ হোসেন ইমন, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয়, শামীম হোসেন পাটওয়ারী, জাকের আলি অনিক, মোস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, তানভীর ইসলাম, তানজিম হাসান সাকিব।
শ্রীলঙ্কা : নিশান মাদুশকা, পাথুম নিশাঙ্কা, কুশল মেন্ডিস, কামিন্দু মেন্ডিস, চারিথ আসালাঙ্কা (অধিনায়ক), জানিথ লিয়ানাগে, দুনিথ ভেলালেগে, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, মাহিশ থিকসানা, দুশমন্ত চামিরা, আসিথা ফার্নান্দো।



