Beta
রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫
Beta
রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫

১৭ বছরের টনির ভাই ডন ব্র্যাডম্যান ও স্টিভ ওয়াহ

aus
[publishpress_authors_box]
কলম্বো থেকে
কলম্বো থেকে

কলম্বোর পি সারা ওভাল স্টেডিয়ামের মাঠে অনুশীলন করছিল একদল যুবক। লঙ্কান তরুণ বয়সের ক্রিকেটার থেকে শুরু করে জাতীয় দলে খেলা লাহিরু সামারকুনও ছিলেন। তারা সবাই তামিল ইউনিয়ন ক্রিকেট দলের হয়ে খেলেন শ্রীলঙ্কার ঘরোয়া ক্রিকেটে।

এদের মধ্যেই ১৭ বছরের এক যুবককে ধরে এনে এই রিপোর্টারের সামনে রাখলেন দলটির ম্যানেজার শ্বাশ। বললেন, “ওর নাম জিজ্ঞাস করুন”। জানতে চাইলে ছেলেটি উত্তর দিল – টনি গ্রেগ। ক্রিকেট যদি ফলো করে থাকেন তবে এই নামটি খুব চেনা হওয়ার কথা। টনি গ্রেগ স্বনামধন্য ইংলিশ ধারাভাষ্যকার।

শ্বাশ আবার বলল, “এবার ওর ভাইদের নাম জিগাস করুন।” জানতে চাইলে উত্তর এল, ডন ব্র্যাডম্যান, ল্যারি গোমেজ ও স্টিভ ওয়াহ। এবার খটকা লাগার পালা। এমন অদ্ভুত কাণ্ড শেষ কবে কেউ করেছে বা দেখেছে কিনা কে জানে? হয়তো কেউই করেনি,কেউ দেখেওনি।

ছেলেদের নাম একাধারে ক্রিকেটের চার প্রজন্মেরে নামী কুশীলবদের নামে রাখা ব্যাতিক্রমই বটে। এর পেছনের ইিিতহাস জানার আগ্রহ বেড়ে যাওয়ায় টনিকে নিয়ে বসতেই হলো। এমন কিছু তো আর প্রতিনিয়ত দেখা যায় না!

সমস্যা হলো টনি ইংরেজি বলতে পারেন না। ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিতে কেন তারা বাবা এমন নাম রাখলেন তা জানাতে খুব লজ্জা পাচ্ছিলেন। রক্ষাকর্তা হয়ে এলেন ম্যানেজার শ্বাশ। তিনি জানালেন আরও অভিনব ঘটনা।

টনির বাবার নাম লিও ডমিনিক। নিউজিল্যান্ডের হয়ে ক্রিকেট খেলেছিলেন এই ভদ্রলোক। আর টনির মায়ের নাম লতা মুঙ্গেশকর। শ^াস জানালেন, “এমন ঘটনার কারণ, টনির পরদাদা ছিলেন অন্যরকম পর্যায়ের ক্রিকেট ভক্ত। এছাড়া তিনি গান পছন্দ করতেন খুব। শ্রীলঙ্কান বলে তার প্রিয় গানের অংশ ছিল ভারতীয়। আর অবশ্যই লতা মুঙ্গেশকর।”

টনির মায়ের নাম অন্য কিছু থাকলেও তার নাম বদলে গেল কিংবদন্তী ভারতীয় গায়িকার নামে। আর ছেলের নাম তো লিও ডমিনিক ছিলো। এরপর শুরু হলো নতুন প্রজন্মের নাম রাখার পালা। লিও একে একে ছেলেদের নাম রাখলেন ডন ব্র্যাডম্যান, টনি গ্রেগ, উইন্ডিজের হয়ে ১৯৭৯ বিশ^কাপ জয়ী ল্যারি গোমেজ ও ছোট ছেলের নাম স্টিভ ওয়াহ। তেমনি ভাবে মেয়েদের নাম  ভারতীয় গায়িকাদের নামকারণে।

শ্বাশ জানাচ্ছিলেন, “আগেই বলেছি ওর বাবা খুব ক্রিকেট ভক্ত ছিলেন। তিনি চেয়ছিলেন বিভিন্ন প্রজন্মে তার পছন্দের ক্রিকেটারদের নাম তার পরিবারে থাকুক। এজন্য এভাবে নাম রেখেছেন। আপনি লক্ষ্য করে দেখবেন একেক ছেলের নাম যে ক্রিকেটারের রাখা হয়েছে তারা অতীতে বিভিন্ন প্রজন্মে সেরা ছিলেন।”

একটু মজা করেই ম্যানেজার শ্বাশ বলছিলেন, “যদি টনির ছেলেপুলে হয় তবে সে তাদের নাম রাখবে কুমার সাঙ্গাকারা, মুত্তিয়া মুরালিধরন।”

টনির কিন্তু এই মজায় বেশ ভালোই লাগছিল। লজ্জায় লাল হয়ে মুখ লুকাচ্ছিলেন বারবার। তবে নিজের পরিবার নিয়ে এমন অভিনব কিছুর বাইরে চলে আসতেই মুখে কথা ফুটল টনির।

ক্রিকেট নিয়ে তার লক্ষ্য জানতে চাইলে ১৭ বছরের পর্যায়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলা ছেলেটি বলেছেন, “আমি এখনও বড় পর্যায়ে খেলিনি। এবারই তামিল ইউনিউয়ন দলে সুযোগ পেয়েছি। অনুর্ধ্ব-১৭ পর্যায়ে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছি আমি। পেস বোলিং করে থাকি। আমার আশা আছে একদিন জাতীয় দলে খেলার। তবে আমি আগে টেস্টে ক্রিকেট খেলতে চাই। অন্য ফরম্যাটে পরে খেলবো।”

টনি নিজে ক্রিকেট খেললেও তার ভাই ডন ব্র্যাডম্যান ও স্টিভ ওয়াহ বা ল্যারি গোমেজের ক্রিকেট নিয়ে আগ্রহ নেই। তারা বড়জোড় টেনিস বলের ক্রিকেট খেলে থাকেন বাড়ির উঠোনে। ভাবা যায়! ব্র্যাডম্যান-স্টিভ ওয়াহ, ক্রিকেট খেলেন না বা খেলার আগ্রহ নেই!

টনি এমনিতে লাজুক হলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ তৎপর। ইন্সটাগ্রাম ও টিকটকে নিয়মিত ভিডিও পোস্ট করেন। বড় সংখ্যায় ফলোয়ারও আছে তার। খুব সম্ভব এই টনি গ্রেগের পারিবারিক অভিনব গল্পটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়নি। হলে আরও বেশি ফলোয়ার পেতেন টনি গ্রেগ। তখন তার পরিবারের এই অন্যরকম গল্প আরও বেশি মানুষ জানতো।

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত