বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ১৯৭১ ছিল স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধ আর ২০২৪ ছিল স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মঙ্গলবার দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় বিএনপির এই নেতা বলেন, একাত্তরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বাংলাদেশ ভোলেনি। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে নিহতদেরও বাংলাদেশ ভুলবে না।
ভিডিও বার্তায় জুলাই আন্দোলনে নিহত ও আহতদের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে শহীদরা আমাদের ঋণী করে গেছেন। এবার আমাদের ঋণ পরিশোধের পালা। তাদের পরিবারের কাছে বাংলাদেশ ঋণী।
“দেশে জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করে সাম্য মানবিক মর্যাদা সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি ইনসাফভিত্তিক গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ গঠনের মাধ্যমেই আমরা শহীদদের প্রতি ঋণ পরিশোধ করতে পারি।”
‘বাংলাদেশে আর কখনোই ফ্যাসিবাদ কায়েম হবে না’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “কাউকে গণতন্ত্র হত্যা করার সুযোগ দেওয়া হবে না। বাংলাদেশকে আর কখনোই তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে দেওয়া হবে না। আমি মনে করি এসব প্রশ্নে জাতীয় ঐক্য বহাল আছে, থাকবে ইনশাআল্লাহ।”
তীব্র গণআন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারেক রহমান বলেন, “আজ এবং আগামীর প্রতিটি ৫ আগস্ট হয়ে উঠুক গণতন্ত্র, সুশাসন প্রতিষ্ঠা আর মানবিক মানুষ হয়ে ওঠার অঙ্গীকারের দিন।
“এই সুমহান অঙ্গীকার বাস্তবায়নের দীর্ঘ যাত্রায় আমি এবং আমার দল বিএনপি দেশের সকল গণতন্ত্রকামী জনগণের সমর্থন এবং সহযোগিতা আশা করছে।”
ভিন্নমতকেই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে যার যার দলীয় আদর্শ এবং লক্ষ্য বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ইস্যুভিত্তিক ভিন্নমত থাকবে। এটি বিরোধ নয়, বরং গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।
“তবে ভিন্নমত কিংবা বিরোধের মাত্রা যেন ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ, চরমপন্থা, উত্থান কিংবা পুনর্বাসনের কারণ না হয়ে দাঁড়ায়।”
তিনি বলেন, “আমি মনে করি, প্রতিটি রাজনৈতিক দল যার যার দলীয় কর্মসূচি কিংবা এজেন্ডা নিয়ে জনগণের আদালতে যাবেন। জনগণ কোনটি গ্রহণ করবেন কিংবা কোনটি বর্জন করবেন এটি সম্পূর্ণ জনগণের এখতিয়ার। এভাবেই প্রতিদিনের রাজনৈতিক চর্চার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র জনগণকে শক্তিশালী করে তুলতে হবে।
“স্থানীয় সরকার থেকে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে জনগণ যতক্ষণ নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে না পারবে, সরকার গঠন কিংবা সরকার পরিবর্তনের ক্ষমতা অর্জন করতে না পারবে, ততদিন পর্যন্ত রাষ্ট্র এবং সরকারে জনগণের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হবে না।”
“আসুন রাষ্ট্র সরকার শাসন প্রশাসন পরিচালনায় আর প্রতিদিনের কার্যক্রমে জনগণের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার চর্চা প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে আমরা জনগণকে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী করে গড়ে তুলি। জনগণকে শক্তিশালী করে তুলতে না পারলে শেষ পর্যন্ত কোনো কিছুই শক্তিশালী এবং টেকসই হবে না।”
গত বছরের ৫ আগস্টের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “৫ অগাস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসের ঘৃণ্যতম ফ্যাসিস্ট পালিয়ে যাওয়ার পরপরই বীর জনতার উদ্দেশে অভিনন্দনবার্তায় আমি বলেছিলাম, বিজয়ীর কাছে পরাজিতরা নিরাপদ থাকলে বিজয়ের আনন্দ মহিমান্বিত হয়। সেটি পুনরায় স্মরণ করিয়ে দিয়ে দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রতি আমার আহ্বান, কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না।”
“মব-ভায়োলেন্সকে উৎসাহিত করবেন না, নারীর প্রতি সহিংস আচরণ করবেন না, অন্যের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন। একজন মায়ের চোখে বাংলাদেশ যেমন, আমরা তেমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই। যেখানে দল মত ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী, সংশয়বাদী, প্রতিটি সন্তান প্রতিটি মানুষ নিরাপদে থাকবে।”
হিটলারের নাৎসিবাদ সম্পর্কে যেমন কেউ গৌরব করে না, পলাতক ফ্যাসিস্টের শাসনকাল নিয়েও গৌরব করার কিছুই নেই বলেই মনে করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, “ডাকাতি করে কিছু সম্পদ চ্যারিটি করলেও জনগণের চোখে ডাকাত যেমন গ্রহণযোগ্য নয়, তেমনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতা খুঁজতে গিয়ে কৌশলে পলাতক ফ্যাসিস্টদের পক্ষে সাফাই গাওয়াও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
“যারা কৌশলে ফ্যাসিবাদী’ শাসনের সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তুলনা করতে চান, তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, ৫ অগাস্ট বাংলাদেশে যা ঘটেছে, এটি শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের ইতিহাসেও মনে হয় নজিরবিহীন। ফ্যাসিস্টের দোসররা গা ঢাকা দিয়েছে। তবে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, পলাতক ফ্যাসিস্টের চক্রের মনে এখনও কোনও অনুতাপ অনুশোচনা নেই।”