Beta
বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫

সেনা অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে প্রথম নির্বাচন ডিসেম্বরে

myanmar election
[publishpress_authors_box]

মিয়ানমারে আগামী ২৮ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচন শুরু হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে দেশটির সামরিক সরকার। সামরিক অভ্যুত্থানের সাড়ে চার বছর পর অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া এ নির্বাচন হবে ধাপে ধাপে।

সোমবার ঘোষণার পরই ব্যাপক নিন্দার মুখে পড়েছে এ নির্বাচন। বিষয়টিকে জান্তা বাহিনীর ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য এক ধরনের প্রতারণার কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এক বিবৃতিতে মিয়ানমারের নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, “প্রতিটি সংসদের জন্য বহুদলীয় গণতান্ত্রিক সাধারণ নির্বাচনের প্রথম ধাপ শুরু হবে আগামী ২৮ ডিসেম্বর রবিবার। নির্বাচনের পরের ধাপগুলোর তারিখ পরবর্তীতে জানানো হবে।”

২০২১ সালে এক রক্তাক্ত অভ্যুত্থানে সেনাবাহিনী ক্ষমতা নেওয়ার পর এটি হবে প্রথম নির্বাচন। ওই সময়ে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত অং সান সু চিকে বন্দি করা হয়।

সু চিকে বন্দি করার পরই গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে মিয়ানমার। সেখানকার সামরিক বাহিনী ও জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে চলে প্রাণঘাতী লড়াই। এসব গোষ্ঠীর অনেকেই বলছে, তাদের এলাকায় ভোট হতে দেবে না তারা।

মিয়ানমারের বড় একটি অংশ বর্তমানে জান্তা বিরোধীদের নিয়ন্ত্রণে, সেই সঙ্গে যুদ্ধাবস্থাও চলছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন আয়োজন করা সামরিক শাসকদের জন্য একটি বিশাল সাংগঠনিক চ্যালেঞ্জ।

এর আগেও মিয়ানমারে নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা বারবার পিছিয়েছে। কারণ বিরোধীদের বিদ্রোহ দমনে বেশ বেগ পোহাতে হয়েছে সেনাবাহিনীকে।

এরই মধ্যে নির্বাচনের জন্য ৫৫টি দল নিবন্ধন করেছে বলে সোমবার জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম। তার মধ্যে ৯টি দল দেশব্যাপী লড়াই করতে আগ্রহী।

সাড়ে চার বছর আগে সেনা অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া মিয়ানমারের সামরিক জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং বলেন, ভোট অবশ্যই হতে হবে। যারা এর সমালোচনা করবে বা নির্বাচনে বাধা দিবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাজার হুঁশিয়ারিও দেন তিনি।

অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা হারানো মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচির দল দি ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি অভ্যুত্থানের আগে হওয়া দুই নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয় পেয়েছিল। আগামী নির্বাচলে দলটিকে অংশ নিতে দেওয়া হবে না।

এমন সব পরিস্থিতিতে এ নির্বাচনকে ব্যাপকভাবে ‘বাতিলযোগ্য’ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। তবে তা মিয়ানমারের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিবেশী চীনের সমর্থন পেয়েছে। কারণ চীন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশে স্থিতিশীলতাকে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত স্বার্থ হিসেবে বিবেচনা করে।

সমালোচকরা বলছেন, এই নির্বাচন ব্যবহার করে প্রক্সি রাজনৈতিক দলগুলোর মাধ্যমে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখবে সেনাশাসকরা।

জাতিসংঘের তথ্য বলছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে ২০ হাজারের বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে এবং হাজারো মানুষ নিহত হয়েছে। সেখানকার অর্থনীতি ধ্বংস হয়েছে এবং মানবিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি টম অ্যান্ড্রুজ গত জুনে অভিযোগ তুলেছেন যে, সেনাশাসকরা ‘একটি মরীচিকার মতো নির্বাচন আয়োজন’ করছে, যা দিয়ে তারা নিজেদেরকে বৈধতার মুখোশ পরাতে চায়।

তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানান, যেন এমন প্রতারণা করে সেনাশাসকরা পার না পেয়ে যায়।

চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত মিয়ানমারের ১৪ হাজার গ্রামীণ অঞ্চলের মধ্যে সামরিক বাহিনী কেবল ২১ শতাংশ এলাকায় নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পেরেছে। জাতিগত সশস্ত্র বাহিনী এবং প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে দেশের ৪২ শতাংশ এলাকা। বাকি এলাকাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘাত চলছে।

এরই মাঝে গত মার্চে মিয়ানমারে একটি প্রবল ভূমিকম্প আঘাত হানে, সেই সঙ্গে হ্রাস পায় আন্তর্জাতিক সাহায্য। তাতে করে দেশটির দুর্বল জনগোষ্ঠী আরও ভয়াবহ ও বিপজ্জনক অবস্থায় পড়ে যায়।

চলতি বছরের শুরুর দিকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বিবিসিকে বলেছে, এমন পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত কোনও নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য হবে, এটা ভাবা সেনাশাসকদের ‘ভ্রান্ত ধারণা’।

মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, নির্বাচনের পূর্বশর্ত হিসেবে তাদের সহিংসতা বন্ধ করতে হবে, বন্দীদের মুক্তি দিতে হবে এবং বিরোধী দলগুলোকে বিলুপ্ত না করে সবগুলো রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন ও অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে।

তথ্যসূত্র : বিবিসি

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত