অভ্যুত্থানের পর বছর গড়িয়ে গেলেও এখনও চূড়ান্ত হয়নি জুলাই সনদ। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই পর্বের আলোচনা শেষে সনদের একটি খসড়া তৈরি করা হলেও তার ওপর এসেছে ভিন্ন ভিন্ন মতামত। তাই এই খসড়ায় আবার পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন এই কমিশন জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করে গত ২০ আগস্ট রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠিয়ে মতামত আহ্বান করেছিল।
দলগুলোর মতামত পাওয়ার পর বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে বৈঠকে বসে কমিশন। সেখানে দলগুলোর মতামত পর্যালোচনা, বিশ্লেষণ করা হয় বলে কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
জাতীয় সনদে কীভাবে এসব মতামতের প্রতিফলন ঘটানো যায়, তা বিশ্লেষণ করে মতামতগুলোকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় সনদের চূড়ান্ত রূপ নির্ধারণ এবং প্রয়োজনীয় আইনি ও নীতিগত কাঠামো গঠনের বিষয়েও আলোচনা হয়। পাশাপাশি সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারের সামনে সম্ভাব্য বিকল্পগুলোও বৈঠকে আলোচিত হয়।
কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজকে উদ্ধৃত করে প্রথম আলো জানিয়েছে, সবার মতামতের প্রতিফলন ঘটানো এবং সনদের আইনি ও সাংবিধানিক ভিত্তির দিক বিবেচনায় রেখে খসড়ায় কিছু সংশোধনী আনার কথা ভাবা হচ্ছে।
সংবাদপত্রটি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার কমিশন আবার বৈঠকে বসবে। সংশোধিত খসড়া চূড়ান্ত করার পর আগামী সপ্তাহে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা শুরু করবে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিনের প্রতিবেদন জমা পড়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে।
এসব প্রতিবেদনের সুপারিশের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৫ ফেব্রুয়ারি যাত্রা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস নিজেই এর প্রধান হন, সহ-সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় আলী রীয়াজকে।
কোনও ঘোষণাপত্র ছাড়াই অভ্যুত্থান ঘটে যাওয়ার পর তার স্থায়ী স্বীকৃতির জন্য জুলাই সনদ প্রণয়নের ঘোষণা গত ডিসেম্বরে দিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় যে সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকারই তা প্রণয়ন করবে।
অভ্যুত্থানের বছর পূর্তির মধ্যেই একটি জাতীয় সনদ তৈরির লক্ষ্য নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে টানা বৈঠক চালিয়ে যান আলী রীয়াজসহ কমিশনের সদস্যরা। তবে অভ্যুত্থানের বছর পূর্তিতে জুলাই ঘোষণা এলেও জুলাই সনদ চূড়ান্ত করা যায়নি।
যে খসড়া চূড়ান্ত করে কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোকে পাঠিয়েছিল, সেখানে কোন কোন ক্ষেত্রে সংস্কার হবে, সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা দেখা দিয়েছে।
সমন্বিত খসড়ায় তিনটি ভাগ আছে। প্রথম ভাগে আছে সনদের পটভূমি। দ্বিতীয় ভাগে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব এবং তৃতীয় ভাগে আছে সনদ বাস্তবায়নের ৮ দফা অঙ্গীকারনামা।
অঙ্গীকারনামার কিছু কিছু বিষয় নিয়ে বিএনপিসহ অনেক দলের আপত্তি আছে। বিশেষ করে জুলাই সনদকে সংবিধানের ওপর স্থান দেওয়া, জুলাই সনদ নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না- এমন বিধান রাখার প্রস্তাবকে অযৌক্তিক বলে মনে করে বিএনপি। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী এমন বিধান রাখার পক্ষে।
জুলাই সনদের সংবিধান সম্পর্কিত বিধানগুলো আগামী সংসদের মাধ্যমে বাস্তবায়নের পক্ষে বিএনপি। অন্যদিকে জামায়াত গণভোটের মাধ্যমে এখনই বাস্তবায়ন চায়। অনেকটা তাদের মতো করেই গণপরিষদ গঠন করে সংস্কার প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।