অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থার যাঁতাকলে পড়ে দেশের স্বাস্থ্যখাত এগোতে পারছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, যেখানে যত বেশি নিয়ন্ত্রণ, সেখানে দুর্নীতিও তত বেশি।
শনিবার স্বাস্থ্যসেবায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে দেশেই উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার অগ্রগতির লক্ষ্যকে সামনে রেখে ‘বাংলাদেশ হেলথ কনক্লেভ ২০২৫’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ‘উন্নত স্বাস্থ্যসেবা সমৃদ্ধ দেশ’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দৈনিক বণিক বার্তা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বণিক বার্তার সম্পাদক ও প্রকাশক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ।
আমীর খসরু বলেন, “আমাদের পরিকল্পনা এ খাতকে আরও উন্মুক্ত করা। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোকে স্বনিয়ন্ত্রণের সুযোগ দিতে হবে। কারণ পৃথিবীর কোথাও সরকার সবকিছু কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে না- এটা কেবল বাংলাদেশেই দেখা যায়। যেখানে যত বেশি নিয়ন্ত্রণ, সেখানে দুর্নীতিও তত বেশি। প্রকৃতপক্ষে এসব নিয়ন্ত্রণই মূলত দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি করে।”
আগামী নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় এলে জিডিপির ৫ শতাংশের বেশি স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ করা হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতি মানুষের এখনও পূর্ণ আস্থা গড়ে ওঠেনি বলে মন্তব্য করেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এ কারণেই উন্নত চিকিৎসার আশায় প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক মানুষ বিদেশে গিয়ে অনেক অর্থ ব্যয় করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “অথচ পরিস্থিতি উল্টো হওয়ার কথা ছিল। চিকিৎসার জন্য মানুষকে বাংলাদেশে আসতে আকৃষ্ট করার মতো সক্ষমতা আমাদের গড়ে তোলা উচিত ছিল।”
অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ স্বাস্থ্যখাতের নানা সংকট তুলে ধরে বলেন, “আমাদের দেশে বড় বড় অবকাঠামো নির্মিত হলেও সেখানে পর্যাপ্ত ডাক্তার নেই। আবার অনেক জায়গায় ডাক্তার থাকলেও নার্স নেই। দক্ষ জনবলের এই সংকটে সাধারণ মানুষ মানসম্মত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই স্বাস্থ্যখাতের বিনিয়োগকারীদের উচিত সাধারণ মানুষের সামর্থ্যের কথা বিবেচনা করে স্বল্পমূল্যের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র গড়ে তোলা।”
মানসম্মত স্বাস্থ্য খাতের জন্য সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগে সমন্বয় জরুরি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, “পুলিশ-সেনাবাহিনীর মতো স্বাস্থ্যখাতেরও নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন; তবে নিয়ন্ত্রণ মানে নির্বতন নয়। আমাদের দেশে অনেক সময় নিয়ন্ত্রণ অত্যাচারে পরিণত হয়। স্বাস্থ্য খাতকে নিরাপদ রাখার জন্য অবশ্যই একটি মাত্রা পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে, কিন্তু এটি যেন অত্যাচারে রূপ না নেয় এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ দুর্নীতিগ্রস্থ না হয়। নিয়ন্ত্রণ যেন সুনির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।”
সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালনবিধি প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, “অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, বাংলাদেশে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার জন্য কোনও নির্দিষ্ট আইন ছিল না। এবার থেকে সব সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার একটি সাধারণ আইন মেনে চলবে।”
বেসরকারি চিকিৎসা খাতকে ব্যবসামুখীর পরিবর্তে সেবামুখী করার উপর গুরুত্বারোপ করেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “বেসরকারি চিকিৎসা খাতকে কেবল ব্যবসামুখী নয়, সেবামুখী হতে হবে। এজন্য মানসম্মত ও যথাযথ সেবা নিশ্চিত করা জরুরি। একইসঙ্গে চিকিৎসা ব্যয়ের চাপ কমাতে দরকার উদ্যোক্তাদের উদ্যোগী ভূমিকা।”