Beta
রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
Beta
রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

আলোচনায় হেফাজতের মামুনুল হকের আফগানিস্তান সফর

আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মামুনুল হক।
আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মামুনুল হক।
[publishpress_authors_box]

আফগানিস্তানে বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধের খবর যখন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম, তখন হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকের কাবুল সফর নিয়ে বাংলাদেশে হয়ে উঠেছে আলোচনার বিষয়বস্তু।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে বুধবার আফগানিস্তান পৌঁছান বলে দলটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

তালেবান সরকারের আমন্ত্রণে এই সফর হচ্ছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মামুনুল হকরা তালেবান সরকারের প্রধান বিচারপতি, একাধিক মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় করবেন।

“বিশেষভাবে মানবাধিকার ও নারী অধিকার বিষয়ে পশ্চিমা মহলে যে সমালোচনা রয়েছে, সে প্রসঙ্গেও তারা বাস্তব অবস্থান সরাসরি পরিদর্শন করবেন।”

এই সফরের কারণ নিয়ে বিবিসি বাংলার প্রশ্নে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, “সেখানে আসলে নারী অধিকার লুণ্ঠন বা হরণ হচ্ছে কি না, এটা বাস্তবে দেখলো তারা।

“অনেক সময় হয় না যে একটা বিষয়ে বিভ্রাট ধারণা থাকে, একটা শ্রেণির লোক তো এই বিষয়টা প্রচার করে যে নারীর অধিকার নারীকে ঘরে আটকায়া রাখে, এই বিষয়টা তারা জানলো আসলে বিষয়টা সত্য কি না?”

ইসলামী ঐক্যজোট গঠনের উদ্যোক্তা শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের (প্রয়াত) ছেলে মামুনুল হক খেলাফত মজলিসের আমিরের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিবের পদে রয়েছেন।

তিনি কাবুল সফর শুরুর দুদিন বাদেই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, আফগানিস্তানে বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করেছে তালেবান সরকার।

কট্টর ইসলামি গোষ্ঠী তালেবান চার বছর আগে আফগানিস্তানে ক্ষমতা পুনর্দখলের পর মেয়েদের শিক্ষার সুযোগ সঙ্কুচিত করে দেয়, যা নিয়ে সারাবিশ্বেই নারী অধিকারকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে।

তার মধ্যে মামুনুল হকদের আফগানিস্তান সফর নিয়ে অনেকের মধ্যে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। কারণ তালেবান আমলে বাংলাদেশের কোনও রাজনৈতিক দলের নেতার আফগানিস্তান সফরের নজির নেই।

মোল্লা ওমরের ভাই তালেবান সরকারের শ্রম ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী মোল্লা আবদুল মানান ওমারির সঙ্গে বৈঠকে মামুনুল হক।

রাশিয়া ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশ তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি; যদিও অর্থনৈতিক লেনদেন করছে বেশ কয়েকটি দেশ।

বাংলাদেশের কোনও দূতাবাসও নেই আফগানিস্তানে। উজবেকিস্তানের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে আফগানিস্তানে কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তবে বাংলাদেশে আফগানিস্তানের দূতাবাস আছে।

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব জালালুদ্দীন দাবি করছেন, রাজনৈতিক নেতা হিসাবে নয়, ওলামা সমাজের প্রতিনিধি হিসাবে এই সফর করছেন মামুনুল হক।

তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ওনার তো দুইটা পরিচয়। একদিকে তিনি আলেম, ইসলামিক স্কলার, আরেকদিকে উনি দলের প্রধান। এই হিসেবেই আমাদের অফিস থেকে ওনার এই মেসেজটা সবাইকে জানানো হয়েছে।

“সফরটা কোনও দলীয় উদ্যোগে নয়। রাজনীতি করেন না, এমন লোকও আছেন। বাংলাদেশের আলেম সমাজের পক্ষ থেকে একটা প্রতিনিধি দল সম্পর্কোন্নয়নের জন্য গেছেন।”

আফগানিস্তান সফরে মামুনুল হকের সঙ্গে রয়েছেন হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির আব্দুল হামিদ (মধুপুরের পীর), নায়েবে আমির আব্দুল আউয়াল, ময়মনসিংহ বড় মসজিদের খতিব আব্দুল হক, বারিধারা মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস হাবিবুল্লাহ মাহমুদ কাসেমী, জমিয়ত নেতা মনির হোসাইন কাসেমী ও ময়মনসিংহের আলেম মাহবুবুর রহমান।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর তারা ওমরাহ পালনের উদ্দেশে সৌদি আরব যান। ওমরাহ পালন েশষে তারা দুবাই হয়ে কাবুলে পৌঁছান বলে জানিয়েছে খেলাফত মজলিস।

জালালুদ্দীন দাবি করেন, এর আগে ২০০১ সালেও বাংলাদেশের ওলামা সমাজের একটি প্রতিনিধি দল আফগানিস্তান সফরে গিয়েছিল। তবে ওই প্রতিনিধি দলের কেউ বেঁচে নেই।

তখন মোল্লা ওমরের নেতৃত্বে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ছিল। সশস্ত্র লড়াই চালিয়ে আসা তালেবান ১৯৯৬ সালে দেশটিতে ক্ষমতা দখল করে। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর অভিযানে ক্ষমতা হারায় ইসলামি গোষ্ঠীটি। আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য প্রত্যাহারের পর ২০২১ সালে পুনরায় কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকার গঠন করে তালেবান।

মামুনুল হকের বাবা আজিজুল হক ১৯৯৭ সালে বিচিত্রাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আফগানিস্তানের তালেবানের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে। তালেবান চাইলে তিনি বাংলাদেশ থেকে েযাদ্ধা পাঠাতেও রাজি আছেন।

আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিতে তখন বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান জানিয়েছিলেন আজিজুল হক। তখন বাংলাদেশে ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। তারা সেই আহ্বানে সাড়া দেয়নি।

তালেবানের সঙ্গে খেলাফত মজলিসের কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি না- বিবিসি বাংলার এই প্রশ্নে জালালুদ্দীন বলেন, “এই পর্যন্ত কারও সাথে কোনোদিন দেখাও হয় নাই, যোগাযোগও হয় নাই, কথাও হয় নাই।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদের মনে করছেন, ইসলামি শাসনের মডেল নিয়ে ধারণা পেতেই মামুনুল হকদের এই সফর।

তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, “তারা হয়তে একটা ওয়ে আউট দেখতে চাচ্ছে যে ইসলামি শাসনের মডেলটা কী? সেই মডেলটা হয়তে তারা বাংলাদেশে কাজে লাগাইতে চাইতে পারে … আমি যতদূর বুঝি।”

তবে তা নাকচ করে দিয়ে খেলাফত মজলিেশর মহাসচিব জালালুদ্দীন বলেন, যদি কোনও দেশে কুরআন এবং সুন্নাহ বা শরিয়াহ রাষ্ট্র কায়েম হয়, তখন সেখানে শরিয়াহ আইন বাস্তবায়নের প্রশ্ন আসে। বাংলাদেশে যেহেতু ইসলামি সরকার নেই, তা তা বাস্তবায়নের সুযোগও নেই।

আল্লামা আজিজুল হকের পাঁচ ছেলে, আট মেয়ে মধ্যে মামুনুল হকই সক্রিয় রাজনীতিতে রয়েছেন।

নারী শিক্ষা নিয়ে তার কী ভাবনা ছিল, তা বোঝা যায় তার দ্বিতীয় মেয়ে লুৎফুন্নেছা বিনতে শায়খুল হাদিসের এক সাক্ষাৎকারে।

আল্লামা আজিজুল হক প্রতিষ্ঠিত মাসিক ‘রাহমানি পায়গাম’ এ ২০১৯ সালে সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল। এই পত্রিকাটির সম্পাদক এখন মামুনুল হক।

লুৎফুন্নেছা বলেছিলেন, পাকিস্তান আমলে তারা বড় দুই বোন স্কুলে পড়েছিলেন, ছোট বোনদের কেউ স্কুলে যাননি।

“আমরা বড় দুই বোন শুধু স্কুলে পড়েছি। আমাদের পরে আর কাউকে আব্বা স্কুলে দেন নাই। আব্বা তখন আমাদের স্কুলে দিলেও দিনের শুরুতেই স্কুলে পড়তে যাওয়া আব্বা পছন্দ করতেন না। আব্বা চাইতেন দিন শুরু হবে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে। এজন্য ফজরের সময় আমাদের উঠিয়ে লালবাগ মাদরাসায় নিয়ে যেতেন।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত