হাতের এপিঠ ওপিঠ এভাবে দেখতে হলো শেষে! এক মিনিটে হরিষ পরের মিনিটে বিষাদ। জাতীয় স্টেডিয়ামে হংকংয়ের বিপক্ষে ভাগ্যের চরম পরিহাসে হার হজম করতে হলো বাংলাদেশকে। ডিফেন্সের ভুলকেও দায়ী করা যায়। সাদ উদ্দিনকে সব দোষ দেওয়া যায়। ইনজুরি সময়ের শেষ মিনিটে ডি বক্স থেকে বল ক্লিয়ার করতে না পারেননি। সেই সুযোগে হংকংয়ের রাফায়েল মার্কিস করে ফেললেন গোল। মুহুর্তেই অন্ধকার রাতের অমানিশা নেমে এল ফুটবল সমর্থকদের ওপর। এক মিনিট আগে ৩-৩ গোলে সমতা করলেও শেষ মিনিটে ৪-৩ গোলে হেরে গেল বাংলাদেশ।
ক্রিকেট আর ফুটবলের এ যেন হাতে হাত রেখে চলা। আশার বেলুন অতি উঁচুতে উঠে যাওয়া এরপর ঠুস করে ফেটে মাটিতে পড়া। বাংলাদেশের দুই জনপ্রিয় খেলাতে সেই একই ভাগ্য বরণ করে নিতে হল বাংলাদেশকে। এএফসি এশিয়ান কাপ কোয়ালিফাইংয়ের তৃতীয় রাউন্ডেই থামল বাংলাদেশের পথচলা। ২০২৭ এশিয়ান কাপের মূল পর্বে আর খেলার সুযোগ নেই। পরের তিন ম্যাচে হংকং, সিংগাপুর ও ভারতকে যদি হারানো যায় তবে স্বপ্ন সত্যি হতে পারে। এছাড়া হতাশাই সঙ্গী।
ম্যাচে চরম উত্তেজনা ছড়ায় শেষ ২০ মিনিটে। ৮৪ মিনিটে মোরসালিন বাংলাদেশের পক্ষে গোল শোধ করেন। ডি বক্স থেকে ফাহমিদুলের ভলিতে হংকং গোলরক্ষক বল ঠিকঠাক ধরতে ব্যর্থ হন। সামনেই থাকা মোরসালিন সুযোগ পেয়ে বল জালে পাঠান। এক গোল শোধ দিয়ে ম্যাচে দখল নিতে শুরু করে বাংলাদেশ। বিদেশি জায়ান আহমেদের ভেলকিতে আক্রমণের শক্তি বাড়ে। দ্বিতীয়ার্ধেই আরও ২ গোল হজম করায় জামাল ভুঁইয়া, জায়ান, সমিত সোম, তপু বর্মণদের মাঠে নামান কাবরেরা।
এতে হংকংয়ের অর্ধে আক্রমণ বাড়ে বাংলাদেশের। তবুও যেন কিছু হচ্ছিল না। ভাগ্য খুলছিল না। এমন অবস্থায় ম্যাচ চলে যায় ইনজুরি সময়ে। তার ৯৬ মিনিটে কর্নার থেকে হেডে গোল করেন সমিত সোম। বাংলাদেশের হয়ে তার প্রথম গোল। দলকে দুর্দান্ত ভাবে ম্যাচে সমতায় ফেরালেন সমিত। জয়ের সমান ড্র নিয়ে হাশিখুশি মাঠ ছাড়তে পারতো বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ মিনিটে রক্ষণের ভুল আর আটকানো গেল না। তাই হতাশার আরও একটি হারও এড়ানো গেল না। বর্তমানে সি গ্রুপে মাত্র ১ পয়েন্ট নিয়ে সর্বশেষ দল হয়ে থাকল বাংলাদেশ।
প্রথমার্ধের শেষ মুহুর্তের গোলে সমতায় হংকং
ভাগ্যকেও দোষ দেওয়া যায়। প্রথমার্ধের পূর্ণ সময় পেরিয়ে ইনজুরি সময়ে গড়িয়েছে খেলা। ইনজুরি সময়েরও শেষ মিনিটে গোল হজম করতে হলো। আর ওই গোলের পরই প্রথমার্ধের খেলা শেষের বাঁশি বাজান রেফারি।
ম্যাচের ৪৮তম মিনিটে এভারটন কামারগোর গোলে ম্যাচে ফেরে হংকং। প্রথমার্ধ শেষে হতাশা নিয়ে ফিরতে হয়নি তাদের। উল্টো হতাশ হতে হয় স্টেডিয়াম ভর্তি বাংলাদেশের দর্শক ও বাংলাদেশ দলকে।
ওই একটি মুহুর্ত ছাড়া হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচে প্রথমার্ধে দুর্দান্ত খেলেছে বাংলাদেশ। ১৬তম, ২২তম, ২৬তম মিনিটে টানা গোলের সুযোগ তৈরি করে স্বাগতিকরা। ডান উইং থেকে রাকিবের পা থেকে আসে গোলের সুযোগ গুলো। কিন্তু ফাহিম, সোহেল রানাদের সঙ্গে ঠিক মেলবন্ধন না হওয়ায় গোল বাড়াতে পারেনি বাংলাদেশ।
এর আগে ১৪তম মিনিটে হামজা চৌধুরীর ফ্রি কিক থেকে পাওয়া গোলে হংকংয়ের বিপক্ষে ১-০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ।
হামজার ফ্রি কিক গোলে এগিয়ে বাংলাদেশ
এএফসি এশিয়ান কাপ কোয়ালিফাইং রাউন্ডে হংকং চায়নার বিপক্ষে দুর্দান্ত ভাবে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। ১৩তম মিনিটে হামজা চৌধুরীর ফ্রি কিক থেকে গোল পায় স্বাগতিকরা।
হংকংয়ের ডি বক্সের ডান পাশ থেকে ফ্রি কিক নেন হামজা। বলটি হংকং ফুটবলার ম্যাট ওরের মাথায় হালকা ছোঁয়া লেগে জালে জড়ায়। ১-০ গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের হয়ে চতুর্থ ম্যাচে এটা হামজার দ্বিতীয় গোল।
শমিত-জামালকে ছাড়াই কাবরেরার একাদশ
জামাল ভূঁইয়াকে নিয়ে আগের দিনও সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন হলো। প্রতি সংবাদ সম্মেলনে আসা এ্ মিডফিল্ডার কি একাদশে থাকবেন? কোচ হাভিয়ের কাবরেরার এক কথা। জামাল অধিনায়ক। কিন্তু এর বাইরে আর কিছু তিনি বলেন না। তার চুপ থাকা মানে একাদশে জামালের জায়গা না হওয়া। অনুমিত ভাবে হংকং চায়নার বিপক্ষেও একাদশে সুযোগ হলো না জামাল ভূঁইয়ার।
শুধু জামাল নন ভ্রমণ ক্লান্তি থাকায় সিংঙ্গাপুর ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে অন্যতম সেরা খেলোয়াড় শমিত সোম থাকছেন না প্রথম একাদশে। বিরতির পর তার মাঠে নামার সম্ভাবনা থাকতে পারে। জাতীয় স্টেডিয়ামে রাত ৮টায় শুরু হতে যাওয়া ম্যাচে আরও একটি চমক থাকছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জায়ান আহামেদকেও রাখেননি স্প্যানিশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা।
প্রিয় ৪-৪-২ ফরম্যাশনে হংকংকে হারানোর পরিকল্পনা করেছেন কাবরেরা। সেপ্টেম্বরে নেপালের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ চোটের কারণে মিস করেছিলেন গোলকিপার মিতুল মারমা। হংকংয়ের বিপক্ষে তাকে ফিরিয়েছেন কোচ। পেশির চোট থেকে পুরোপুরি সেড়ে ওঠেননি বলে স্কোয়াডে থাকলেও একাদশে নেই সেন্টারব্যাক তপু বর্মণ। লেফটব্যাক পজিশনে খেলবেন সাদউদ্দিন। আর রাইটব্যাকে তার ছোটভাই তাজউদ্দিন।
মাঝমাঠের নের্তৃত্ব দেবেন লেস্টার সিটি তারকা হামজা চৌধুরী। তার পাশে থাকছে সোহেল রানা ও শেখ মোরসালিন। গোলের দায়িত্বে থাকবেন রাকিব হোসেন ও ফয়সাল আহমেদ ফাহিম।
গোলরক্ষক: মিতুল মারমা। রক্ষণ: তারিক কাজী, শাকিল আহাদ, তাজ উদ্দিন ও সাদ উদ্দিন। মধ্যমাঠ: হামজা চৌধুরী, শেখ মোরসালিন, সোহেল রানা ও সোহেল রানা জুনিয়র। আক্রমণ: রাকিব হোসেন ও ফয়সাল আহমেদ ফাহিম।