Beta
বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫

বাংলাদেশি টেনিস কোচদের আপন করে নিয়েছে চীন

এশিয়ান গেমস ও অলিম্পিক নারী একক টেনিসের সোনা জয়ী ঝেংয়ের শৈশবের কোচ ছিলেন বাংলাদেশের আখতার হোসেন। ছবি : সংগৃহীত
এশিয়ান গেমস ও অলিম্পিক নারী একক টেনিসের সোনা জয়ী ঝেংয়ের শৈশবের কোচ ছিলেন বাংলাদেশের আখতার হোসেন। ছবি : সংগৃহীত
[publishpress_authors_box]

১৯৭৫ সালের ৪ অক্টোবর বাংলাদেশ ও চীন আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। বেইজিংয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলাদেশ ও চীনের কূটনৈতিক সেই সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন হয়েছে ১৯ অক্টোবর। ক্রীড়াঙ্গনে অনেক এগিয়ে থাকা চীনের ক্রিকেটে এই সময়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে বাংলাদেশ। তেমনি ব্যক্তি উদ্যোগে চীনের টেনিস উন্নয়নে কাজ করছেন বাংলাদেশি কোচরা। এ নিয়ে সকাল সন্ধ্যার দুই পর্বের আয়োজন। আজ দ্বিতীয় পর্বে থাকছে টেনিস। লিখেছেন রাহেনুর ইসলাম

জ্ঞান অর্জনের জন্য চীনে যাওয়ার কথা প্রচলিত আছে। সেই চীনেও জ্ঞান বিতরণ করতে যান অনেকে। বিস্ময়কর হচ্ছে সেই তালিকায় আছেন বাংলাদেশের অন্তত ৩০ জন টেনিস কোচ।

টেনিসে এমন কোনো ঐতিহ্য নেই বাংলাদেশের। সেরা সাফল্য বলতে ১৯৮৯ সালে সিঙ্গাপুরে হওয়া ডেভিস কাপের সেমিফাইনালে পৌঁছানো। অথচ বাংলাদেশের কোচরাই কিনা চীনের টেনিস খেলোয়াড় গড়ার অন্যতম কারিগর। তাদের অনেকের বেতন মাসে পাঁচ লাখ টাকার বেশি। এই কোচদের অনেকে আবার বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশনে চাকরী করে গেছেন ৫ হাজার টাকা বেতনে! এ জন্যই বলে ‘গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না’।

শুরুটা যেভাবে

১৯৮০ সালে জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৮ টেনিসের এককে শিরোপা জিতেছিলেন সুকুমার রায়। খেলা ছাড়ার পর লেভেল টু কোচিং কোর্স করেন তিনি। বাংলাদেশে তেমন বেতন না পাওয়ায় নৌবাহিনীতে কাজ করা এক বন্ধুর সহায়তায় চীনে পাড়ি জমান তিনি। বেইজিংয়ের ব্রডওয়েল টেনিস একাডেমিতে এক হাজার ডলার মাসিক বেতনে চাকরী পান সুকুমার।

ব্রডওয়েল টেনিস একাডেমিতে সাফল্য পাওয়ার পর সুকুমার যোগ দেন বেইজিং ইন্টারন্যাশনাল একাডেমিতে। এখন তিনিই পরিচালনা করেন বেইজিয়ের আসাকি টেনিস ক্লাব। 

গত এশিয়ান গেমসের সময় সুকুমারসহ চীনে কাজ করা আরও অনেক কোচ এসেছিলেন হাংজুতে। এই প্রতিবেদককে হাংজুতে সুকুমার বলেছিলেন, ‘‘পুরো চীন জুড়ে বাংলাদেশের ৩০ জনের মতো কোচ আছে। আমি এখানে আসার পর নিয়ে এসেছিলাম পাঁচ জনকে। এভাবেই শুরু। তাঁরা আবার এনেছে কয়েক জনকে। এখন সবাই যোগ্যতা অনুযায়ী কোচিং করাচ্ছেন চীনে। কেউ কেউ নিজেই গড়েছেন টেনিস একাডেমি। চীন আমাদের বাংলাদেশি কোচদের আপন করে নিয়েছে। দেশে আমি পাঁচ হাজার টাকা বেতন পেতাম। বেইজিংয়ে ২০০৫ সালে শুরুতেই পেয়েছি ১ হাজার ডলার। এখন পাই ৫ হাজার ডলারের মতো। অন্যরাও ভালো সম্মানি পাচ্ছেন। এজন্য চীনের টেনিস ফেডারেশনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’’

চীনে বাংলাদেশি কোচদের পথচলার শুরুর আরেকটা ইতিহাস আছে। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাবেক শিক্ষার্থী মুরাদ, আখতার হোসেন ও মিজান চীনে এসেছিলেন তিন মাসের বৃত্তি নিয়ে। খেলোয়াড়ী ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ না হলেও তারা জড়িয়ে পড়েন কোচিংয়ে।

চীনে কোচ হিসেবে স্থায়ী হওয়া নিয়ে সকাল সন্ধ্যাকে ২০০০ ও ২০০১ সালে বাংলাদেশের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন আখতার হোসেন বললেন, ‘‘২০০৫ সালে আমরা একটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে চীনে আসি। তিন মাসের একটি প্রজেক্ট ছিল সে সময়। সেই প্রজেক্টের পর আমরা ধীরে ধীরে চীনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি। এখন অনেকেই আসছে বাংলাদেশ থেকে। বন্ধুপ্রতীম দেশ চীনের টেবিল টেনিস ফেডারেশন আর সরকার তাদের সাহায্য করছে। চীনের এই উদারতায় আমরা কৃতজ্ঞ।’’

চীন জুড়েই বাংলাদেশিরা

চীনের অনেক শহরের একাডেমিতেই কাজ করছেন বাংলাদেশি কোচরা। কেউ গড়ে তুলেছেন নিজস্ব একাডেমিই। তাদের অন্যতম সারাফাত আবেদিন। গুয়াংডং প্রদেশের শহর ডংগুয়ানে সিটি কাউন্সিলের অনুমোন নিয়ে ২০১২ সালে তিনি গড়ে তুলেছেন ‘গ্যালপ টেনিস একাডেমি’। সেখানে টেনিস শিখে ৪০০ শিশু-কিশোর। ২০১৮ সালে এই একাডেমির দুই খেলোয়াড় ডংগুয়ান অনূর্ধ্ব-১০ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতায় নাম ছড়িয়ে পড়ে সারাফাত আবেদিনের।

বেইজিংয়ের একটি একাডেমিতে বাংলাদেশের দুই কোচ। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ থেকে আটজন কোচ চীনে নিয়ে গেছেন সারাফাত আবেদিন। তাঁদের অন্যতম টেনিস ফেডারেশনের সাবেক সহকারী কোচ জামিল ভুঁইয়া। রাজশাহী থেকে গেছেন সাদির হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমান। নওগাঁ থেকে আরিফ বিন ইসলাম। এছাড়া সারাফাত আবেদিন নিয়ে গেছেন বিকেএসপির শিক্ষার্থী শেখ হাসিবুল হক, উ সুয়ে সুয়ে, শরীফ আবেদিন ও রাইসুল ইসলামকে।

তাঁদের পথ ধরে সাবেক টেনিস দম্পতি শাহনেওয়াজ আহমেদ ও ইসরাত রুমা চীনে পাড়ি জমান ২০১৭ সালে। শাহনেওয়াজের ব্যক্তিমালিকানায় এখন সাংহাইয়ে টেনিস একাডেমি আছে তিনটা। গুয়াংজুর একটি একাডেমিতে বাগেরহাটের মেয়ে আফরানা ইসলাম প্রীতি কোচ হিসেবে যোগ দেন ২০১৮ সালে।

সাফল্য আছে এশিয়ান গেমস আর অলিম্পিকেও

সর্বশেষ হাংজু এশিয়ান গেমসে নারী টেনিস এককে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন ঝেং কুইনওয়েন। এরপর তিনি সোনা জিতেন ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকের এককেও। স্বর্ণজয়ী ঝেংয়ের ‘গুরু’ বাংলাদেশি কোচ আখতার হোসেন। বেইজিংয়ে আখতারের কাছে ২০১৩-১৮ সাল পর্যন্ত টেনিস দীক্ষা নিয়েছিলেন তিনি। চীনের বাইরেও অনেক টুর্নামেন্টে তার কোচ ছিলেন আখতার হোসেন। 

হাংজুতে জাংয়ের সাফল্যে এই প্রতিবেদককে আখতার বলেছিলেন, ‘‘ঝেং আমার হাত ধরেই গড়ে উঠেছে। সেই ছোট্ট ঝেং এশিয়ান গেমসে সোনা জেতায় গর্বিত আমি। তার সাফল্যে আমাদের বাংলাদেশের সামান্য অবদান থাকাটা বিশেষ কিছু। আশা করছি ও অলিম্পিকেও সোনা জিতবে।’’ আখতারের আশাবাদ সত্যি প্রমাণ করে ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকে সোনা জেতেন ঝেং।

২০২৪ সালের জুলাইয়ে ২৫ জনের বিশাল এক টেবিল টেনিস দল অনুশীলন ক্যাম্প করতে যায় চীনের হুনান প্রদেশে। ছবি : সংগৃহীত

টেবিল টেনিসে চীনের সহায়তা

টেবিল টেনিসের চীনের আধিপত্য সবসময়। এই খেলার উন্নতিতে বাংলাদেশের সহায়তার চীন হাত বাড়িয়েছিল গত বছর। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ২৫ জনের বিশাল এক টেবিল টেনিস দল অনুশীলন ক্যাম্প করতে যায় চীনের হুনান প্রদেশে। বাংলাদেশ থেকে এত বড় টেবিল টেনিস দলের কোথাও অনুশীলনে যাওয়া ছিল সেটাই  প্রথম।

 নবীনদের গড়ে তুলতে ৪২ দিনের এ সফরে ১১ জন ছেলে, ৯ জন মেয়েসহ খেলোয়াড় ছিলেন ২০ জন। দলে ছিলেন চার কোচ এবং একজন সমন্বয়কারী।

 এক বছর ধরে বাংলাদেশের ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ চীনা দূতাবাসের সঙ্গে কথা বলে এই অনুশীলনের ব্যবস্থা করেছিল। এর সব খরচ বহন করেছে চীনা সরকার। আগামীতেও এমন সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছে চীন। তাতে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও দৃঢ়ই হবে দুই দেশের।

আরও পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত