রাজস্ব আদায়ে গতি ফেরেনি; আন্দোলন থেমে যাওয়ার পরও কর আদায়ে ভালো করতে পারেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রথম তিন মাসে (প্রথম প্রান্তিক, জুলাই–সেপ্টেম্বর) শুল্ক–কর আদায়ে ঘাটতি হয়েছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা।
বুধবার রাজস্ব আদায়ের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে এনবিআর। সেখানে দেখা গেছে, জুলাই–সেপ্টেম্বর এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্র ছিল ৯৯ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ৯১ হাজার ৫ কোটি টাকা।
এই হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা।
তবে এই তিন মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০ দশমিক ৪৫ শতাংশ। অর্থাৎ গত অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকের চেয়ে চলতি অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকে ২০ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায় করেছে সরকার।
২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ৭৫ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছিল।
এনবিআরের কর্মকর্তা বলছেন, ব্যবসা–বাণিজ্যে শ্লথগতি থাকায় রাজস্ব আদায় তুলনামূলক কম হয়েছে। তবে বছরের শেষ দিকে রাজস্ব আদায়ে গতি বাড়বে বলে মনে করেন তারা।
চলতি ২০২৫–২৬ অর্থ বছরের পুরো প্রথম প্রান্তিকেই (জুলাই–সেপ্টেম্বর) রাজস্ব আদায়ে গতি নেই। কোনও মাসেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জন করতে পারেননি কর ও শুল্ক কর্মকর্তারা।
গত জুলাইয়ে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৩০ হাজার ১১১ কোটি টাকা। কিন্তু জুলাইয়ে আদায় হয়েছে ২৭ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। ঘাটতি ২ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা।
পরের মাসে লক্ষ্য ছিল ৩০ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ২৭ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা। ঘাটতি হয়েছে ৩ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা।
সেপ্টেম্বরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৩৮ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৩৬ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা। ফলে ২ হাজার ৩২২ কোটি টাকার ঘাটতি হয়েছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে আমদানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) ও আয়কর— এই তিন খাতের মধ্যে ভ্যাট খাতে শুধু লক্ষ্য পূরণ হয়েছে।
আলোচ্য সময়ে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি হয়েছে আয়কর খাতে। তিন মাসে ঘাটতি হয় ৬ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা। এই খাতে আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৩৫ হাজার ২৩ কোটি টাকা। এ সময়ে আদায় হয়েছে ২৮ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা।
আমদানি খাতে তিন মাসে ৩০ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকার লক্ষ্যের বিপরীতে আদায় হয়েছে ২৭ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা। এই খাতে ঘাটতি হয়েছে ৩ হাজার ৬৮ কোটি টাকা।
তবে জুলাই–সেপ্টেম্বরে ভ্যাট বা মূসক আদায়ের লক্ষ্য পূরণ করেছে। এই খাতের লক্ষ্যের চেয়ে ৭১০ কোটি টাকা বেশি ভ্যাট আদায় হয়েছে। ভ্যাট আদায় হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা। এই সময়ে এই খাতের লক্ষ্য ছিল ৩৪ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে এনবিআরকে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকার শুল্ক–কর আদায়ের লক্ষ্য দিয়েছে সরকার।
গত মে ও জুন মাসে এনবিআরের আন্দোলনের কারণে গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে বড় আকারের রাজস্ব ঘাটতি হয়। শেষ দুই মাসে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় হয়নি। আন্দোলনের নানা কর্মসূচিতে রাজস্ব আদায় বিঘ্ন হয়।
কিন্তু চলতি ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকেও (জুলাই–সেপ্টেম্বর) রাজস্ব আদায়ে গতি আসেনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, আন্দোলনের পর এনবিআরের কর্মকর্তাদের মধ্যে বরখাস্ত ও বদলি আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাজস্ব আদায়ে মনোযোগ কম।