ভুয়া অভিযোগে বাংলাদেশে মামলা- টিউলিপ সিদ্দিকের এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।
তিনি দাবি করেছেন, দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতেই পূর্বাচল প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের মামলায় আসামি করা হয়েছে টিউলিপকে।
অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি যুক্তরাজ্যের এই পার্লামেন্ট সদস্যকে বাংলাদেশে এসে মামলা মোকাবেলার আহ্বানও জানিয়েছেন মোমেন।
ঈদের ছুটি শেষে রবিবার ঢাকার সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে আকস্মিকভাবেই সাংবাদিকদের সামনে এসে টিউলিপকে নিয়ে কথা বলেন দুদক চেয়ারম্যান। তবে তিনি যে তৈরি হয়েই এসেছিলেন, তা বোঝা গেছে তার হাতে থাকা লিখিত বক্তব্য দেখে।
দুদকের মামলার অভিযোগ অস্বীকার করে লন্ডনে টিউলিপের বক্তব্য আসার চার দিন পরই তা খণ্ডালেন দুদক চেয়ারম্যান।
গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তার ও পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতি অনুসন্ধানে নামে দুদক।
এর মধ্যে ঢাকার উপকণ্ঠে পূর্বাচলে দুটি প্লট বরাদ্দে অনিয়মের মামলায় আসামি করা হয় যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন দলের এমপি টিউলিপকে। তাতে অভিযোগ করা হয়, প্রধানমন্ত্রী খালাকে প্রভাবিত করে মা শেখ রেহানা, ভাই রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও বোন আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর নামে প্লট বাগিয়ে নিয়েছিলেন টিউলিপ।
গত ২ এপ্রিল যুক্তরাজ্যের স্কাই নিউজে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, টিউলিপ তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে আনা অভিযোগ ভুয়া বলে দাবি করেছেন।
টিউলিপ আরও বলেছেন, এই অভিযোগের তদন্তে বাংলাদেশ থেকে কোনও কর্তৃপক্ষ তার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তার আইনজীবীরা চিঠি পাঠিয়েও কোনও জবাব পায়নি।
সংবাদমাধ্যমে তা দুদকেরও দৃষ্টিগোচর হয়েছে জানিয়ে মোমেন বলেন, “তাতে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়েরকৃত মামলায় দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত মিস টিউলিপ সিদ্দিক বিলেতি আইনজীবীর পাঠানো পত্রের জবাব আমরা প্রদান করিনি; স্কাই নিউজের সূত্র উল্লেখ করে উক্ত অভিযুক্ত বলেছেন, দুর্নীতি দমন কমিশন তার সাথেও যোগাযোগ করেনি।
“অনুগ্রহ করে লক্ষ্য করুন, দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে দিতে পারেননি বলেই ব্রিটেনের দুর্নীতি নিবারণের মন্ত্রী মিস টিউলিপ সিদ্দিক সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রবল সমর্থন সত্ত্বেও পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।”
চার বারের এমপি টিউলপ গত বছর লেবার পার্টির সরকারে সিটি মিনিস্টারের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। তবে লন্ডনে তার বাড়ি নিয়ে অভিযোগ ওঠার পর তিনি পদত্যাগ করেন। তবে সেখানে তদন্তে তার বিরুদ্ধে কোনও অনিয়মের অভিযোগ না পাওয়ার কথা জানানো হয়।
বাংলাদেশে টিউলিপের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণভাবে দালিলিক প্রমাণের উপর ভিত্তি করেই মামলা ও অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে দাবি করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “আদালতে হাজির হয়ে তারা যেন অভিযোগের মোকাবেলা করেন।”
টিউলিপের আইনজীবীর চিঠির জবাব না দেওয়ার বিষয়ে সাবেক সচিব মোমেন বলেন, এটা ‘কম্পাউন্ডেবল’ কোনও মামলা নয়।
অর্থাৎ যেহেতু অভিযোগটি ফৌজদারি, সেহেতু এখানে বিবাদীর বক্তব্য শোনাটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। অভিযোগের মীমাংসা আদালতেই হবে।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, চিঠি লেখালেখি করে মামলার পরিণতি নির্ধারিত হবে না। আদালতেই তা নির্ধারিত হবে। আদালতে টিউলিপের অনুপস্থিতি ‘অপরাধমূলক পলায়ন’ বলে বিবেচিত হবে।
“কেবল টিউলিপ সিদ্দিক নন, দুর্নীতির প্রশ্নে সাবেক পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে যে কোনও সাধারণ নাগরিকের বেলায় দুর্নীতি দমন কমিশনে একই প্রমিত প্রক্রিয়া অবলম্বন করে থাকে।”
টিউলিপ সিদ্দিকের বিষয়ে বাংলায় লিখিত বক্তব্যে তুলে ধরার পাশাপাশি একই বক্তব্য ইংরেজিতেও পড়ে শোনান দুদক চেয়ারম্যান।
তার কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, “যেহেতু টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার প্রতি বিদেশি সংবাদ মাধ্যমের আগ্রহ রয়েছে এবং আপনাদের কেউ কেউ সে সব গণমাধ্যমের লোকাল করেসপন্ডেন্ট, আমি খুব সংক্ষেপে একটি ইংরেজি বিবৃতিও তুলে ধরছি।”
এ সময় দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে কমিশনের দুই কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী, কমিশনার (অনুসন্ধান) অরসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাফিজ আহ্সান ফরিদ, মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।