বাংলাদেশ ব্যাটাররা নিজেরাই নিজেদের প্রশ্ন করতে পারেন। এমন ব্যাটিং ব্যর্থতার কোন ব্যাখ্যা হয় কিনা? যেন এক ঘোরের মধ্যে কয়েকটি ওভার ছিল বাংলাদেশ। সেই ঘোরে সব লন্ডভন্ড হয়ে গেল। সাজানো ইনিংস, গোছানো স্কোরকার্ড, কোন কিছুই আর টিকল না। জয়ের সম্ভাবনা জাগানো ম্যাচে এভাবে পিছলে পড়তে একমাত্র বাংলাদেশই পারে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ৭৭ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার দেওয়া ২৪৫ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে ১৬৭ রানে অলআউট হয় তারা। এই রানটুকুও হতো না, একশ’র ঘরেই অলআউট হওয়া থেকে বাঁচিয়েছেন জাকের আলি।
অবশ্য তার লড়াই শেষ পর্যন্ত আফসোসের মাত্রা বাড়িয়েছে। যেমনটা হয় বাংলাদেশের প্রতি ম্যাচ শেষেই।
৬৪ বলে ৪টি করে চার ও ছক্কায় ৫১ রান করেছেন জাকের। মোস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে ৪২ রানের জুটি গড়ে হারের ব্যবধান কমিয়েছেন শুধু। বাংলাদেশ ম্যাচটি হেরে বসে ২১তম ওভারেই। তখন মাত্র ৪ রানে ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
৫ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে এলোমেলো বাংলাদেশ
দুই উইকেটে ১০০ কে ৭ উইকেটে ১০৪, মাত্র ৪ রান আর মুহুর্তে ম্যাচ হার দেখছে বাংলাদেশ। উইকেটের আসা যাওয়ার মিছিলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের হার এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
১৭ ওভার পর্যন্ত লঙ্কান বোলারদের বেশ ভালোই সামলেছিলেন বাংলাদেশ ব্যাটাররা। হাসারাঙ্গা, কামিন্দু মেন্ডিসদের নিয়ে একরকম ছেলে খেলাই করছিলেন। অথচ চার ওভারের মধ্যে পরের ৬ উইকেট চোখের পলকে চলে যাওয়া ম্যাচ হারিয়ে দিল বাংলাদেশ দলকে।
শান্তর বিদায় দিয়ে এই মড়কের শুরু। এরপর টানা চলছিল উইকেট পড়ার মিছিল। লিটন দাস ০, তাওহিদ হৃদয় ১, মেহেদি হাসান মিরাজ ০ – রা দলের প্রয়োজনে হাল ধরতে পুরোপুরি ব্যর্থ। তাই পুরো ম্যাচ ভালো খেলে মাত্র চার ওভারেই হার দেখছে বাংলাদেশ। ৮ উইকেটে ১০৫ রান বাংলাদেশের। কামিন্দু মেন্ডিস ও হাসারাঙ্গা দুজনই তিনটি করে উইকেট নেন।
টানা উইকেট হারিয়ে বিপদে বাংলাদেশ
১৫ ওভারে দারুণ অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। ২০ ওভারের আগেই স্কোর বোর্ডে উঠে যায় একশ রান। তবে দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যেতেও সময় লাগল না বাংলাদেশের। নাজমুল হোসেন শান্ত-লিটন দাস-তানজিদ হাসান তামিমকে টানা দুই ওভারে হারিয়ে ৪ উইকেটে ১০১ রান সফরকারীদের।
১৭তম ওভারে দলীয় ১০০ রানে ভুল কলে রান নিতে গিয়ে বিপদে পড়েন শান্ত। মিলান রত্নায়েকের থ্রোতে অল্পের জন্য রান আউট হওয়া থেকে বাঁচতে পারেননি।
লিটন দাস টিকলেন মাত্র চার বল। ভানিন্দু হাসারাঙ্গার গুগলী বুঝতে না পেরে লেগ বিফোর হন। এক বল পর ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেট ছুঁড়ে আসেন ৬১ বলে ৬২ রান করা তামিম।
দলের দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার শান্ত ও লিটনকে হারানোর পর দারুণ ইনিংস খেলা হৃদয়ও ড্রেসিংরুমে ফিরে যাওয়ায় ম্যাচে কঠিন চাপে বাংলাদেশ।
১৫ ওভার শেষে ম্যাচ বাংলাদেশের হাতে
পারভেজ হোসেন ইমন যেভাবে শুরু করেছিলেন। সেই রকম বিধ্বংসী রূপটা ধরে রেখেছেন তানজিদ হাসান তামিম। হাফসেঞ্চুরিও তুলে নিয়েছেন দ্রুত। তার ব্যাটে চড়ে ১৫ ওভার শেষেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের।
ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ ৮৪ রান আছে তামিমের। শ্রীলঙ্কায় সিরিজের প্রথম ম্যাচে সেই স্কোর পার করে সেঞ্চুরির সুযোগ হাতছানি দিচ্ছে তামিমকে। নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে জুটি বেঁধে বাংলাদেশকেও জয়ের হাতছানি এনে দিয়েছেন তিনি।
১৫ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ১ উইকেটে ৮৭। শুরু থেকেই দারুণ ছন্দ ধরে রেখে ব্যাট করা তামিম অপরাজিত ৫১ বলে ৫০ রানে ওয়ানডেতে যা তার ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটি। সদ্য নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়া নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত আছেন ২৪ বলে ২১ রানে।
শ্রীলঙ্কাকে আড়াইশোর নিচে আটকালো বাংলাদেশ
ম্যাচের আসল ঘটনা কি বলুন তো! মনে পড়ছে কি! নাজমুল হোসেন শান্ত যে উইকেট নিয়ে উদযাপন করলে, সেটাই। এমন মজার উদযাপন বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা অনেকদিন ধরেই করছে না। নিদাহাস ট্রফিতে নাজমুল অপুর সেই সাপের ছোবল উদযাপনের পর এই মাঠে আরেক নাজমুলের মজার উদযাপন। এর কি নাম দেবেন শান্ত!
শান্তর ওই উদযাপনটা এজন্যই আসল ঘটনা যে তার হাত ধরেই গুরুত্বপূর্ণ জুটির অবসান ঘটে। জানিথ লিয়ানাগেকে নিয়ে চারিথ আসালাঙ্কা বেশ এগোচ্ছিলেন। ৭৬ বলে ৬৪ রান করে এ জুটি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিল। “লোপ্পা” বল দিয়ে তা আটকে দেন শান্ত।
ওই উইকেট যাওয়ায় শ্রীলঙ্কা বড় স্কোর গড়তে পারেনি। আসালাঙ্কার সেঞ্চুরির পরও ২৪৪ রানে অলআউট হয় তারা।
ষষ্ঠ বোলার হিসেবে বল করতে এসে এই সাফল্যে সত্যিই আনন্দিত বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক। একাদশে যখন পাঁচ বোলার তখন নিশ্চিত ছিল পার্টটাইম অফস্পিন করা শান্তই ষষ্ঠ বোলার হতে যাচ্ছেন। তিনি হলেন এবং সাফল্যও এনে দিলেন।
শান্তর সাফল্য ছাড়া দলে ফেরা তাসকিন দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। ১০ ওভারে ২ মেডেন নিয়ে ৪৭ রান দিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট। এছাড়া তানজিম সাকিব নেন ৪৬ রানে ৩ উইকেট।
বাংলাদেশের বোলিং সাফল্যে চারিথ আসালাঙ্কার সেঞ্চুরির পরও দেড়শ করতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। আসালাঙ্কা ১২৩ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় করেন ১০৬ রান। এছাড়া কুশল মেন্ডিস ৪৫, জানিথ ২৯ ও মিলান এবং হাসারাঙ্গা করেন ২২ রান করে।
বিপদ কাটিয়ে উঠেছে লঙ্কানরা
২৯ রানে তিন উইকেট হারিয়ে বেশ বিপদেই পড়েছিল শ্রীলঙ্কা। সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বড় রানের টার্গেট দেওয়ার বিষয়টিও শঙ্কায় পড়ে যায়। অথচ চারিথ আসালাঙ্কার অধিনায়কোচিত ইনিংসে ঘুরে দাঁড়িয়েছে শ্রীলঙ্কা।
৩০ ওভার শেষে ৪ উইকেটে ১৪৪ রান স্বাগতিকদের। আসালাঙ্কা অপরাজিত ৮০ বলে ৬৫ রানে। তার ইনিংসে ৫টি চার ও তিনটি ছক্কার মার। এছাড়া জানিথ লিয়ানাগের ২৩ রানও গুরুত্বপূর্ণ। দুজনের ব্যাটে ৬৪ রানের জুটি গড়েছে লঙ্কানরা।
এর আগের উইকেটেও ৬০ রানের জুটি পেয়েছে বাংলাদেশ। মেন্ডিস করেছিলেন ৭৭ বলে ৬০ রান। ম্যাচে প্রথম ওয়ানডে খেলতে নামা তানভীর ইসলাম উইকেট পেয়েছেন।
১০ ওভারেই তিন উইকেট নিল বাংলাদেশ
শ্রীলঙ্কান টপঅর্ডারকে হাত খুলে খেলতে দেয়নি বাংলাদেশ পেসাররা। শুরুর ১০ ওভারে ৩ উইকেট নিয়ে স্বাগতিকদের রানের চাকাও আটকে দেয়া গেছে। ১০ ওভার শেষে শ্রীলঙ্কার রান ৩ উইকেটে ৫০।
উইকেটে অপরাজিত ২২ রান করা কুশল মেন্ডিস ও ১৮ রান করা চারিথ আসালাঙ্কা। টেস্ট সিরিজে দুর্দান্ত খেলা পাথুম নিশাঙ্কা এবার রান করার আগেই ফিরেছেন। তানজিম সাকিবের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি।
অপর ওপেনারকে ফিরিয়েছেন দলে ফেরা তাসকিন আহমেদ। ১৩ বলে ৬ রান করা নিশান মাদুসকা তাসকিনের অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে ইনসাইডেজ হন। দলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটার কুশল মেন্ডিসও ০ রানে ফিরেছেন তাসকিনের বলে। অন দি আপ ড্রাইভ খেলতে গিয়ে মিডঅফে মিরাজের ক্যাচ হন। ২৯ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর জুটি গড়েছে শ্রীলঙ্কান দুই ব্যাটার।

কলম্বোর তপ্ত গরমে বোলিংয়ে বাংলাদেশ তানভীরের অভিষেক
একাদশে আছেন তিন পেসার। তাসকিন-মোস্তাফিজ-সাকিব, তিনজনকেই শ্রীলঙ্কার ব্যাটারদের ছাড়াও কলম্বোর গরমের সঙ্গে লড়তে হবে।
কলম্বোর পিচে স্পিন ধরে, পরে ব্যাট করা সহজ হয় একটু। তবুও গরমের কারণে আগে শুকনো পিচের সুবিধা নিতে চেয়েছে শ্রীলঙ্কানরা। তাই টস জিতে ব্যাট নিতে ভুল করেননি আসালাঙ্কা।
এই ম্যাচ দিয়ে মেহেদি হাসান মিরাজ আনুষ্ঠানিক ভাবে অধিনায়ক হিসেবে শুরু করছেন। এর আগে পাঁচ ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিতে নেমে সবকটিতে টস হেরেছিলেন তিনি, সঙ্গে ম্যাচও। আনুষ্ঠানিক নেতৃত্বের প্রথমদিনও টসে হারলেন।
একাদশে মাত্র পাঁচ বোলার নিয়েই খেলছে বাংলাদেশ। প্রয়োজনে বল হাতে নেওয়ার মতো পার্টটাইম বোলার একজনও নেই। এই ম্যাচ দিয়ে অভিষেক হচ্ছে বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলামের।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ১৫১তম ক্রিকেটার তিনি। দলে ফিরেছেন তাসকিন আহমেদ, ছন্দে আছেন মোস্তাফিজ। ব্যাটিংয়ে আগের মতো তামিম-ইমনের জুটি দিয়ে শুরুর হবে। এরপর শান্ত, লিটন, হৃদয় ও জাকেরের ওপর রান তোলার দায়িত্ব।
বাংলাদেশ : তানজিদ তামিম, পারভেজ হোসেন ইমন, নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন দাস, তাওহিদ হৃদয়, জাকের আলি, মেহেদি হাসান মিরাজ (অধিনায়ক), তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, তানভীর ইসলাম, তানজিম হাসান সাকিব।
শ্রীলঙ্কা : পাথুম নিশাঙ্কা, নিশান মাদুশকা, কুশল মেন্ডিস, কামিন্দু মেন্ডিস, চারিথ আসালাঙ্কা (অধিনায়ক), জানিথ লিয়ানাগে, মিলান রত্নায়েকে, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, মাহিশ থিকসানা, এহসান মালিঙ্গা, আসিথা ফার্নান্দো।



